বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ধনকুবেরের পুত্রের বিয়ে: ২ লাখ টাকার মিনি ড্রেসে নজর কাড়লেন কিয়ারা পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য সকাল থেকে ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত রবি আজিয়াটা হবিগঞ্জে ট্রাকচাপায় পুলিশ সদস্য নিহত কালীগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে ছদ্মবেশে ফের দুদকের অভিযান কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালিয়েও রক্ষা পেলেন না ৪ ফাঁসির আসামি কেনিয়ায় পার্লামেন্টে হামলা, পুলিশের গুলিতে নিহত ১৩ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানের উপমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পুকুরে ফেলা গ্যাস বাবুর মোবাইল উদ্ধারে ঝিনাইদহে যাচ্ছে ডিবির দল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শিগগির কর্মসূচি: ফখরুল ‘দেশের মানুষকে আমরা কষ্ট দিয়েছি’ ক্ষমা চাইলেন শান্ত বেনজীরের পাসপোর্ট জালিয়াতি: অধিদপ্তরের ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ঈদ যাত্রার ১৩ দিনে সড়কে নিহত ২৩০ জন : বিআরটিএ প্যানারমিক সানরুফসহ যেসব সুবিধা থাকছে নতুন মাহিন্দ্রা থারে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে মমতার অভিযোগ খারিজ মোদী সরকারের মামুনুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সুনীল অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর উপকূলে নাজুক বেড়িবাঁধ যেন মরণ ফাঁদ

৪৯ ‘জমিদারে’র অধীনে রাজধানী

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় সোমবার, ২৭ মে, ২০১৯
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: তাঁর নাম মনু মিয়া। রাজধানীর গাবতলী এলাকায় একটি ডিসপেনসারি চালাতেন। সেই ডিসপেনসারি থেকে প্রায়ই তাঁর পরিচিত দুই ব্যক্তি ঘুমের ওষুধ কিনত। নিয়মিত এত ঘুমের ওষুধ দিয়ে তারা কী করে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনু জানতে পারেন, তাঁর নিয়মিত ওই দুই খদ্দের হচ্ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্য এবং তাদের প্রতিদিনকার আয় দুই-তিন হাজার টাকা। এরপর লোভে পড়ে মনু মিয়া যোগ দেন অজ্ঞান পার্টিতে। চার বছর ধরে তিনি ‘সাফল্যের সঙ্গে’ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অজ্ঞান পার্টিতে তাঁর নাম হয়েছে ‘মনু ডাক্তার।

অজ্ঞান পার্টির এমন ভয়ংকর দলে লোভে পড়ে মনুর মতো অনেকেই যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশে আট শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে অজ্ঞান পার্টির। এদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক নিরীহ মানুষকে প্রাণটাও খোয়াতে হয়। পথচলতি মানুষকে ধোঁকায় ফেলে সর্বস্বান্ত করতে রোজা ও কোরবানির ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এরা।

দুই ঈদের জন্য দুই ধরনের কৌশল নেয় তারা। রোজার সময় গ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী আর কোরবানির ঈদের আগে গরুর ব্যাপারিই হয় তাদের প্রধান টার্গেট। প্রতি বছরের মতো এবারের রমজানেও তারা কোমর বেঁধেই মাঠে নেমেছে। এর ফলে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম রোজা থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত ১৮ দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মিটফোর্ড হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ভর্তি হয়েছে দেড় শতাধিক ব্যক্তি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স ফাতেমা খাতুন  জানান, ইফতারের পর প্রতিদিনই দুই-তিনজন করে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া রোগী আসতে দেখা যায়।

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশে ৪৯ জন দলপতির অধীন আট শতাধিক সদস্য অজ্ঞান পার্টিতে কাজ করছে। অজ্ঞান পার্টির রাজত্বে দলপ্রধানদের বলা হয় জমিদার বা মহাজন। আর যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করে তাদের বলা হয় কবিরাজ।

বদলেছে কৌশল
সম্প্রতি অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্যের সঙ্গে কথা হয় । তাদের তথ্য অনুযায়ী, দিন দিন কৌশল পরিবর্তন করছে তারা। আগে বাস-ট্রেন-লঞ্চে, টার্মিনাল-স্টেশন-ঘাটে ইফতারের সময় শরবত, কোল্ড ড্রিংকস বা ডাবের ভেতরে ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অজ্ঞান করা হতো ‘শিকারদের’। এখন এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে রোজাদারদের অনিবার্য পছন্দ খেজুরও। দামি খেজুরের বিচি বের করে সেখানে অজ্ঞান করার ওষুধ বিচির মতো করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া খেজুরের গায়েও মেশানো থাকে চেতনানাশক নানা ওষুধ, ধুতুরা প্রভৃতি।

‘টার্গেট’ করা ব্যক্তির বিশ্বাসভাজন হওয়ার জন্য বাসের ভেতর অথবা প্রচুর জনসমাগম হয় এমন স্থানে অজ্ঞান পার্টির ছয়-সাতজন সদস্য একত্র হয়। তারা ইফতারের কিছু সময় আগে টার্গেট ব্যক্তির সামনে গিয়ে নিজেদের একজন আরেকজনকে চেনে না এমন ভাব করে ‘পরিচিত’ হয়। ‘পরিচিতি’ পর্বের পরে শুরু হয় গল্পগুজব। কয়েক মিনিট পরেই সবাইকে ইফতারে শরিক হতে বলে একজন। সবাই একত্রে ইফতার করতে রাজি হচ্ছে দেখে টার্গেট ব্যক্তিও বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে ইফতারে শামিল হয়। কিন্তু রোজা খুলতে গিয়ে অজ্ঞান পার্টি সদস্যরা খায় ভালো খেজুর আর ওষুধ মেশানো খেজুর দেওয়া হয় টার্গেট ব্যক্তিকে।

অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের কথার সত্যতা পাওয়া গেল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানের বক্তব্যে। তিনি  জানান, সম্প্রতি বেশ কিছু অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে ধরা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, খেজুরের ভেতর ওষুধ মিশিয়ে কৌশলে তারা টার্গেট ব্যক্তিকে অজ্ঞান করছে আজকাল।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে বাঁচার জন্য মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই। রাস্তায় চলার সময় অপরিচিত কারোর দেওয়া খাবার খাওয়া উচিত নয়।’ তিনি আরো জানান, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে রাজধানীর বাস, লঞ্চ টার্মিনালসহ সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের তৎপরতার কারণে রাজধানীতে এখন অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য কমেছে বলে তিনি দাবি করেন।

৪৯ জমিদার
অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্যের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে ঢাকায় ৪৯ জন ‘জমিদার’ রয়েছে। তাদের অধীনে তিন-চারটি করে দল রয়েছে। প্রতিটি দলে সদস্য থাকে পাঁচ-ছয়জন করে। আবার কোনো কোনো ছোট জমিদার একাধিক দল পোষার পরিবর্তে সরাসরি নিজেই ১০-১২ জনের একটি দল চালায়। কোনো কোনো জমিদার বিভাগীয় শহর বা জেলা শহরেও দল চালায়। বর্তমানে জমিদারদের মাঝে সবচেয়ে প্রভাবশালী ফরিদ ওরফে ডন। তার বাড়ি চাঁদপুর। সে রাজধানীর সদরঘাট ও গুলিস্তান এলাকায় তিন-চারটি দলের মালিক। একসময় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে কোনোমতে দিন গুজরান হতো ফরিদের। এখন ঢাকায় তার নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে।

ফরিদের মতো প্রভাবশালী জমিদারদের কাতারে আছে পটুয়াখালীর চান্দু, খোকইন্ন্যা ও খলিল; রাজশাহীর বাচ্চু ও বাগেরহাটের ফারুক মাঝি। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের দল ‘অপারেশন’ চালিয়ে থাকে। রাজধানীর লালবাগ ও হাজারীবাগ সামলায় টোকাই নূর ইসলাম। মতিঝিল এলাকার দায়িত্বে আছে শরীফ গ্রুপ। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকার দখলে গাজী মোস্তফা কামাল লিংকন। শাহবাগ ও গুলিস্তান এলাকা মুন্নার নিয়ন্ত্রণে। খিলক্ষেত-টঙ্গী এলাকার জমিদার মাসুম চৌধুরী, পিচ্চি আলম, হাশেম, গিয়াস ও নুরু, বিমানবন্দর এলাকা হচ্ছে কাউশ্যা আবুলের কবজায়। ইমারত ও মিঠুর দল কাজ করে মিরপুর এলাকায়। পোস্তগোলা এলাকার জমিদার শামু।

কবিরাজ
মানুষকে রোগমুক্ত করেন এমন ব্যক্তিরা কবিরাজ হিসেবে পরিচিত হলেও অজ্ঞান পার্টিতে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের বলা হয় কবিরাজ। তারা সরাসরি শিকার বাছাই ও তাকে বাগে এনে ‘মিশন সাকসেসফুল’ করে থাকে। শিকারকে কাবু করে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, মোবাইল জমিদারের কাছে জমা করা হয়। আশার কথা হচ্ছে, সম্প্রতি এ ধরনের ৬৫ জন কবিরাজকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

জমিদার ও কবিরাজদের ভাগবাটোয়ারা
দলের সবাইকে প্রতিদিনের আয় অর্থাৎ হাতিয়ে নেওয়া সম্পদ তুলে দিতে হয় জমিদারের হাতে। এই আয়ের ২০ ভাগ চলে যায় জমিদারের পকেটে। আর বাকি ৮০ ভাগ থেকে ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণের দাম বাদ দিয়ে বাকিটা ভাগ করে দেওয়া হয় দলের কবিরাজদের। তবে জমিদাররা তাদের ওপর ছাতা হিসেবে কাজ করে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে দায়িত্ব নেয় ছাড়িয়ে আনার। এ জন্য কবিরাজদের কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। তারা পুলিশের কাছ থেকে কারাগারে যাওয়ার পরই আইনজীবী ধরে দ্রুত ছাড়িয়ে আনে জমিদাররা। মাঝে মাঝে অজ্ঞান পার্টিতে গণ্ডগোলও বেধে যায়। এর জের ধরে দল ছেড়ে আরেক জমিদারের দলে চলে যায় কেউ কেউ। তবে জমিদারদের একের সঙ্গে অপরের ভালো যোগাযোগ থাকায় এ নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না বলে অজ্ঞান পার্টির এক সদস্য  জানায়।

বাংলা৭১নিউজ/এম বিআর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com