শিগগির ‘সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মহাপরিকল্পনা (আইপিইএমপি)’ প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে মহাপরিকল্পনায় তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (৯ আগস্ট) ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি মাস্টারপ্ল্যান বা আইপিইএমপি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটার খসড়া এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষে অনুমোদন সাপেক্ষে সেটি অনতিবিলম্বে প্রকাশ করবো ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আইপিইএমপিতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনটি বিশেষ বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর একটি বিষয় হচ্ছে, প্রাথমিক জ্বালানির বহুমুখীকরণ। আমাদের গ্যাস ছাড়া আর সব জ্বালানির জন্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
এজন্য আইপিইএমপি-তে আমরা প্রাথমিক জ্বালানির ডাইভারসিফিকেশনের ওপর জোর দিয়েছি। এজন্য আমরা গ্যাসের পাশাপাশি কয়লা, এলএনজি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, ওয়েস্ট এনার্জি, সৌর বিদ্যুৎ, উইন্ড এনার্জি সব বিষয়গুলো সন্নিবেশ করে জ্বালানি নিরাপত্তা প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে আইপিইএমপিতে।’
‘দ্বিতীয় আমরা জোর দিয়েছি ট্রানজিশন টু ক্লিন এনার্জি’তে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ক্রমান্বয়ে বের হয়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কৃষিজমি বাঁচিয়ে যতটুকু উৎপাদন করা যায়, আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি।’
বাংলাদেশ প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে জানিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রকল্প লাইনআপ করেছি, তাতে আগামী দু’বছরের মধ্যে হয়তো আরও ২/৩ হাজার মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমাদের একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে রয়েছে। আমরা আরও দুটি বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কাজ করছি। এর একটি মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট, আরেকটি কক্সবাজারে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। বিনিয়োগকারীদের এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট-সম্মতিপত্র) ইস্যুর কাজটি এখন প্রক্রিয়াধীন।’
এর পাশাপাশি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সরকার নজর দিচ্ছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘অফশোরে বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন।’
‘২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। পরে আরও সমক্ষমতা সম্পন্ন অন্তত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আইপিইএমপি-তে আরেকটি বিষয় আমরা জোর দিয়েছি সেটি হলো- আমাদের যেহেতু প্রাথমিক জ্বালানির জন্য অনেকখানি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়, সুতরাং আমরা যেন দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি। সেজন্য এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ও কনজারবেশন- এটাকেও আইপিইএমপিতে যথাযথভাবে উপস্থান করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ স্লোগানকে জনপ্রিয় করতে চাই যে, এক ইউনিট বিদ্যুৎ সাশ্রয় তিন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমান। যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ও কনজারবেশনটাকে একটা আন্দোলনে রূপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। আইপিইএমপি-তে এর যথাযথ প্রতিফলনও রয়েছে।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট দেশ থেকে না করে জ্বালানি আমদানি কীভাবে বহুমুখী উৎস থেকে করা যায়, সেটির গুরুত্বও আমরা অনুধাবন করছি। পাশাপশি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, সেটা ব্যাটারিতে সংরক্ষণের মাধ্যমে পিক আওয়ারে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেই প্রযুক্তি নিয়েও আমরা কাজ করছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ