যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী মুক্তিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনটি শূন্য পদে লোক নিয়োগে প্রায় ২২ লাখ টাকা নেওয়া হবে বলে চূড়ান্ত করা হয়েছে! আজ বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় কোন পদে কত টাকা দিতে হবে সেটি নির্ধারণ করা হয়। নিয়োগসংক্রান্ত সভায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসিনুর রহমান বলেন, ‘এমপি সাহেবকেই পাঁচ লাখ দিতে হবে। ’
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুক্তিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহায়ক, একজন আয়া ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অফিস সহায়ক পদে সাতজন, আয়া পদে ১০ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে সাতজনসহ মোট ২৪ জন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন।
নিয়োগ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আজ বুধবার সকালে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসিনুর রহমান একটি সভা আহ্বান করেন। সভায় প্রধান শিক্ষক শাহাজান আলীসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত সবার সামনে হাসিনুর রহমান বলেন, ‘চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আমি যা-ই নিই না কেন, সেখান থেকে এমপি সাহেবকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া আরো খরচ আছে। ’
সভাপতির এই বক্তব্যে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, ‘এমপি কেন টাকা নেবেন? স্কুলটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহাসিক স্থান। প্রয়োজনে আমরা সকলে মিলে এমপি মহোদয়ের কাছে যাব। আমাদের কথা তিনি নিশ্চয়ই শুনবেন। তিনি টাকার কথা বলতে পারেন না। ’
সভায় তিনটি পদে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করেন সভাপতি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদের জন্য চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে ৯ লাখ ৭৫ হাজার, আয়া পদের প্রার্থীর কাছ থেকে ৭ লাখ এবং পচ্ছিন্নতাকর্মী প্রার্থীর কাছ থেকে পাঁচ লাখসহ মোট ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের কাছ থেকে আগেই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। টাকা নেওয়া নিয়ে এলাকায় গুঞ্জনও রয়েছে।
সভায় উপস্থিত থাকেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, আব্দার রহমান। এক নারী সদস্যের অনুপস্থিতিতে সভায় অংশ নেন তার স্বামী সাইফুল ইসলাম। তারা বলেন, ‘‘সভায় নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে তিনটি পদে ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেওয়া হবে বলে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ নিয়োগে এত টাকা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
কিন্তু আমাদের কথা সভাপতি না শুনে তিনি বারবার ওপরের কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে হবে বলে ইঙ্গিত করেন। একপর্যায়ে তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘এই নিয়োগে এমপি সাহেবকেই দিতে হবে পাঁচ লাখ। ’ সভাপতির কথায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও সুর মেলান। সভাপতির এই বক্তব্যে সকলেই ক্ষুব্ধ হন। ’’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজান আলী বলেন, ‘তিনটি পদে নিয়োগের বিষয় নিয়ে আমরা সকালে সভায় মিলিত হই। টাকা-পয়সা কিছু লাগবে সেটা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। ’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসিনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বার্থে ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এমপিকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, ‘কোনো নিয়োগে টাকা নেওয়া উচিত না। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। তবে লিখিত অভিযোগ না পেলে আমার কিছু করার নেই। ’
যশোর-২ চৌগাছা-ঝিকরগাছা আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সভাপতিকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, নিয়োগ হচ্ছে কি হচ্ছে না- সেটিও জানি না। আমার নাম করে সেখানে অর্থ বাণিজ্য হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার কথা অবশ্যই বলব।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ