বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৬টি কেন্দ্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে দ্বিতীয় দফা সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
রাজশাহীতে ৭টি এবং সিলেটে ২৯টি ভোট কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে ১৩৮টি এবং বরিশালের ১২৩টি ভোট কেন্দ্র এর অধিকাংশ জায়গায় ভোট কারচুপি হয়েছে। সিলেটের ১৩২টি ভোট কেন্দ্রের ৯০ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে।’
বরিশালের কোনো ভোট কেন্দ্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপক তাণ্ডব, ভোট জালিয়াতির উৎসব, ভোটারদেরকে মারধর, মেয়র প্রার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা, পোলিং এজেন্টদেরকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া ইত্যাদি ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সংঘটিত করেছে। এই ব্যাপক তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাদে বিএনপিসহ সব প্রার্থীরাই নির্বাচন বর্জন করেছেন। দিনে-দুপুরে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা বরিশাল মহানগরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘রাজশাহীর অধিকাংশ কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একেকটি কেন্দ্রে গিয়ে এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে অন্য কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই সে এজেন্টদের পুনরায় বের করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে নাটকীয় ভোট সন্ত্রাসের পরিস্থিতি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করলো। রাজবেতনভোগী কর্মচারী নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিলো তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নন, তারা অবৈধ সরকারের প্রতিনিধি। সুতরাং অবৈধ সরকারের হুকুম তামিল করা ছাড়া তারা অন্য কোনো কাজের জন্য নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করতে আসেনি। তাই সরকারের ইঙ্গিত, আভাস, ইচ্ছায় নির্বাচন কমিশন আজ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুর্বৃত্তপনার নির্বাচনী প্রহসনের সহযোগী হলো। নির্বাচন কমিশন আইনের নয়, স্বাধীন নয়, নির্বাচন কমিশন রাজভৃত্য। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আরেকটি সহিংস প্রহসনের নির্বাচন হলো।’
রিজভী বলেন, ‘আজ একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন- উৎসবের আমেজে নির্বাচন হচ্ছে। তিনি ঠিকই বলেছেন- দস্যুদল লুট করার পর উল্লাসে মেতে উঠে। আওয়ামী লীগ লুটের মালের মতো একচেটিয়া জালভোট ও ভোট সন্ত্রাসের কৃতিত্বে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছে, আর সেজন্যই তারা উৎসবে মেতে উঠেছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়েছে পুলিশ। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই একচেটিয়া পুলিশ কর্তৃক নৌকা মার্কায় সিল মারার ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হয়েছে। এটি আওয়ামী নাৎসীবাদের এক চূড়ান্ত রূপের আত্মপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া অথবা ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে জোর করে বের করে দেয়া, এ নিয়ে অভিযোগকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণ, ভোটকেন্দ্রে কাউন্সিলদের ব্যালট পেপার পাওয়া যায় কিন্তু মেয়রের ব্যালট পেপার না পাওয়া, ব্যালট নিয়ে আ.লীগে-আ.লীগে কাড়াকাড়ি, ব্যালট নিয়ে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া, মেয়র প্রার্থীকে রক্তাক্ত করা, ভোট কেন্দ্রের সামনে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করে ভোটারদের ভয় পাইয়ে দেয়া, দুপুর ১২টার পূর্বেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনিয়ম, অনাচার ও সন্ত্রাস পুলিশের সহযোগিতায় সংঘটিত হয়েছে। দায়িত্বরত গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকেও দায়িত্ব পালনে ব্যাপক বাধা দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে শারীরিকভাবেও আঘাত করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘আবারও প্রমাণিত হলো- এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আজ্ঞাবাহী প্রধান কমিশনারের নেতৃত্বে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। গাজীপুর ও খুলনায় অল্প কিছু লোক ভোট দিতে পারলেও আজকে তিন সিটি নির্বাচনে সেটিও সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রবল প্রতিরোধ যে কোনো মুহূর্তে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে সরকারের মসনদকে উল্টে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিরিন সুলাতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: জাগোনিউজ।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস