দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি এবং সারের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিসহ মোট ছয়টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ টাকা।
বুধবার (২ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের কক্ষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য সারের সঙ্কট হবে না। গ্যাসের চাহিদা পূরণে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এ দুটো বিষয়ই সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
সূত্র জানায়, সভায় ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থেকে কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ২৬তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এলএনজি কেনার জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করলে চারটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। চারটি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৫৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮০ টাকা।
‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থেকে কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ২৭তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
পেট্রোবাংলা ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তিনটি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৭৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৮০ টাকা।
সভায় সৌদি আরব থেকে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৪ সালের ১১ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার অনুমোদনক্রমে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনতে প্রতি মেট্রিক টন ৩৪৬.৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা মোতাবেক কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনতে প্রতি মেট্রিক টন ৩৩৫.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি মরক্কো থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে টিএসপি সার আমদানি করে। ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তসমূহ অভিন্ন রেখে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়।
সার আমদানি চুক্তিতে উল্লেখ করা মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে মরক্কো থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন টিএসপি সার কিনতে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য অনুযায়ী ব্যয় হবে ১ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সারের দাম পড়বে ৪১৫ মার্কিন ডলার।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে দশম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিএডিসি সৌদি আরব সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানি করে। ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তসমূহ অভিন্ন রেখে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট তারিখে চুক্তি নবায়ন করা হয়।
সার আমদানি চুক্তিতে উল্লেখ করা মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের দাম নির্ধারণ করে সৌদি আরব থেকে দশম লটে ৪০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন ডিএপি সার কিনতে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে ব্যয় হবে ২ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম পড়বে ৫৮১ মার্কিন ডলার।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ