বাংলা৭১নিউজ : পানি উন্নয়ন বোর্ডে আপনার চাকুরি জীবনের শুরুটা কিভাবে?
পাউবো মহাপরিচালক : চাকুরি জীবনের শুরুটা ১৯৮২ সালের জুনে বুয়েট থেকে পাশ করার পর। প্রথম চাকুরি পেতে অবশ্য একটু কষ্ট হয়েছে। ইন্টাভিউ দিলাম কয়েক জায়গায়। আবার ৮২’ সালে বিসিএস দিলাম। শিল্প ঋণ সংস্থায় চাকুরিও হলো, কিন্ত আমি যোগ দেইনি। চিন্তা করলাম, বেতন কি পাব, ওরা আমাকে বেতন কত দেবে? এরপর জানতে পারলাম- বেতন তেমন সন্তোষজনক নয়। আমি যোগদানে রাজি হলাম না। বলে দিলাম, আমাকে একটা ইনক্রিমেন্ট বেশি দিতে হবে। সাত দিন পর আমাকে জানানো হলো একটা ইনক্রিমেন্ট আমাকে বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন আমার মাথায় আসলো, যারা সাত দিনের ভেতর ইনক্রিমেন্ট বাড়াতে পারে, তারা কমাতেও পারে। অর্থাৎ এই জায়গায় আমি যোগ দিলে আমার সঠিক মূল্যায়ন নাও হতে পারে। আমি যেকোন সময় সমস্যায় পড়তে পারি। ইতোমধ্যেই আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম-তার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। আমি পাউবো’তে যোগদান করলাম। যোগদানের পর বিসিএস-এ উত্তীর্ন হলাম। আমাকে পোষ্টিং দিল সন্দ্বীপ উপজেলা প্রকৌশলী হিসাবে। কিন্ত পাউবোতে কাজ করার ইচ্ছা থাকায় এখানেই থেকে যাই। মূলত আমার জীবনের মোরটা সেদিনের ওই সিদ্ধান্তের কারণেই ঘুরে যায়। তাছাড়া পাউবোতে আমার অবস্থানটাও ছিল ভাল। পাউবোতে চাকুরি করার ক্ষেত্রে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলাম।
বাংলা৭১নিউজ : পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরি করা অবস্থায় আপনি কোন ধরণের বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক : ১৯৯০ সালে আমি তখন ঢাকা ডিভিশন-২ এর এসডি হিসাবে আছি। ইস্টার্ন বাইপাস প্রকল্পের সমীক্ষা কাজ চলছে। সোয়েল বোরিং করতে হয়। প্রায় ১১৩টি বোরিং করতে হয়েছে। মাটি এত খারাপ যে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত বোরিং করতে হয়েছে। আমি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী। আর বোরিং ছিল হাইড্রোলজির। কোথায় বোরিং হবে, আমি দেখিয়ে দিয়েই চলে আসি। মূলত হাইড্রোলজির এসডিই এটা দেখভাল করেন। বোরিংয়ের কাজ শেষ হবার পর একদিন হাইড্রোলজির উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আমাকে বললো, বোর লগে সই করতে হবে। আমি বললাম আমিতো এই কাজ করিনি, আমি কেন বোর লগে সই করবো। তখন সেন্ট্রাল জোনের চীফ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন সালাম সাহেব। এটি সালাম সাহেবের কানে গেল এবং তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে বললেন, তোমার এসডিই-কে বলো বোর লগে সই করতে। তা না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি তখন বললাম, যেই বলুক, আমি নীতির বাইরে কিছু করবোনা। যেখানে আমার স্বাক্ষর থাকা প্রয়োজন সেখানেই দেব। কিন্ত কারো নির্দেশে নীতিবহির্ভূত কোনখানে সই করবো না। এরফলে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। আমি অনুধাবন করলাম এখানে আর আমার থাকাটা ঠিক হবে না। তার ১০ থেকে ১২ দিন পরেই আমি বললাম আমাকে অন্যকোথাও পোষ্টিং দেওয়ার জন্য। আমাকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হলো। একে বলা যায় এক ধরনের শাস্তিমূলক বদলি। ওই ঘটনাটি ছিল আমার চাকুরি জীবনে সত্যিই বিব্রতকর।
বাংলা৭১নিউজ : পানি উন্নয়ন বোর্ডে কোন কাজটি করার মধ্যে দিয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করেছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : আমি তখন চাকুরি করতাম নেদারল্যান্ডের সহযোগিতায় একটি প্রজেক্ট এলআর (ল্যান্ড রিক্লেমেশন) প্রজেক্টে। এলআরপিটা ছিল ১৯৮৬ সালের দিকে। ওই সময় নোয়াখালী চরমজিদে এখন যে পোল্ডারটি আছে-তখন এটি ছিল একবারে বঙ্গোপসাগরের পাড়ে। সেখানে নতুন চর জেগে উঠছে। এই ভূমিকে রিক্লেইম করার যে পরিকল্পনা করতে হবে, এর পুরো রিপোর্টটা আমরা দু’তিন জনে মিলে করি। তবে আমার অবদানটা অনেক বেশি ছিল। এই কাজ করে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। পরবর্তিতে ইআইপি। এখানে যখন কাজ করতাম তখন আমরা তিনটি গ্রুুপে ভাগ হয়ে যেতাম। একটি গ্রুপ হতো ইঞ্জিনিয়ারিং, একটি হতো এগ্রিকালচার এবং একটি হতো সোসিও ইকোনমিক কাজ করা। এই তিনটি গ্রুপ এক জায়গায় একত্রে একই মৌজায় যেতাম। আমরা সারাদিন সেখানে অবস্থান করে রাতে এসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রকল্পের পরিকল্পনা আটতাম। এটি একটি ইউনিক প্রসেস ছিল। এই কাজটি করেও আমি বেশ আনন্দ পেয়েছি। এই দু’জায়গায় কাজ করে আমি আমার জীবনের অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। আরেকটি হচ্ছে আমি যখন ফিল্ডে পোষ্টিং নেই, অর্থাৎ আমি যখন চট্রগ্রামে সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পোষ্টিং নেই-সেখান থেকেও আমি অনেক কিছুই শিক্ষা নিয়েছি। বিশেষ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়টি। এই তিনটি জায়গার অভিজ্ঞতাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে এনেছে।
বাংলা৭১নিউজ : নদী নিয়েই আপনাদের কাজ। কোন এলাকার নদী ভাঙ্গন আপনাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, এধরনের একাধিক ঘটনা রয়েছে। আমাকে যখন কুড়িগ্রামে বদলি করা হলো-তখন সেখানে যোগদানের পরই ব্রক্ষপুত্রের পাড়ে গিয়েছিলাম নদী ভাঙ্গন পর্যবেক্ষন করতে। প্রথম যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম, ঠিক তার দুই মাস পর যেয়ে দেখলাম সেখান থেকে ২শ’ ফুট জায়গা নদী গর্ভে চলে গেছে। আমার কাছে খুব কষ্ট লেগেছে যে, এভাবে মানুষের জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। তখন চাকুুরি জীবনের শুরুর দিক ছিলো। এজন্য খারাপও বেশি লেগেছে। দেখতাম- কিভাবে মানুষের জমি, ঘর চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। কিভাবে নদী ভাঙ্গনে মানুষের জমি, বসতবাড়ী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবণ মুহুর্তে বিলীন হয়ে যায়। থাকে শুধু নদী ভাঙ্গনকবলিত মানুষের হাহাকার। সেই প্রবাদের মত ‘আগুনে পুড়লে মানুষের ঘর যায়, কিন্ত জমি থাকে; আর নদী ভাঙ্গলে সব কিছু বিলীন হয়ে যায়।’
এসব দেখে আমি এখনও খুব কষ্ট পাই। পাউবো’তে চাকরির আগে আমি এসব বুঝতাম না যে, নদী ভাঙ্গনে মানুষ কিভাবে নিস্ব হয়। এই জায়গায় কাজ করার একটাই স্বার্থকতা যে, এখানে থেকে ভাঙ্গনকবলিত মানুষের কষ্টগুলো সরেজমিনে দেখতে পারি। চেষ্টা করি, ভাঙ্গন ঠেকাতে, তাদের কল্যাণে কাজ করতে।
বাংলা৭১নিউজ : পানি উন্নয়ন বোর্ডে শীর্ষ কর্মকর্তা পদে কাজ করতে যেয়ে অনেক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হয়। অনেক সময় সহকর্মীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হয়-তো এসব করতে যেয়ে নিরবে নিভৃতে আপনি কষ্টে ভোগেন কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, যখন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেই-তখন কোন দিকে তাকাতে পারিনা। কারণ ডিপার্টমেন্টতো আমাকে চালাতে হবে। পরবর্তিতে আমি চিন্তা করি, সেওতো একজন মানুষ। তারও একটা পরিবার আছে, একটা সামাজিকতা আছে। এসবদিক থেকে কষ্টতো একটু লাগেই। আমিওতো একজন মানুষ। তবে এসব কিছু আমার মনের মধ্যেই পুষে রাখি। বাইরে প্রকাশ করিনা। আর এসব বিষয় প্রকাশ করলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে দূর্বলতা পেয়ে বসবে।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবো’র শীর্ষ পদে কাজ করতে যেয়ে প্রশংসা ও কটুক্তি দু’টোরই মুখোমুখি হতে হয়-কীভাবে সামলে উঠেন?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, অপ্রতিকর পরিস্থিতি আসেই। আর এসব ক্ষেত্রে আমি প্রথম্ইে চিন্তা করি-যতকিছুই আসুক আমাকে আইনের মধ্যে থাকতে হবে। আইনটাকে আমি ধরে রাখবো। তখন আমি চেষ্টা করি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বুঝাতে। আমি উপস্থাপন করি যে এই কাজটিই আইনি ফ্রেমের মধ্যে থেকে কিভাবে করা সম্ভব? সেভাবেই আমি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। এতে করে তাঁদের মধ্যেও একটি ধারণা তৈরি হয় যে, আমি তার বিষয়টি অবজ্ঞা করছি না। বরং যৌথভাবেই আইনি পথে কাজটি করার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে দিয়ে নিজেদের মধ্যে একটি চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হয়। এতো গেল অপ্রীকির পরিস্থিতির কথা। আর প্রশংসা যখন পাই তখনতো ভাল লাগবেই। তবে এটা ঠিক যে, প্রশংসার ক্ষেত্রে আমি মনে রাখি এটি আমার একক কৃতিত্ব নয়। এটি একটি টিম ওয়ার্ক। এজন্য আমার উপরে যারা রয়েছেন যেমন- প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব; তেমনি আমার নিচের দিকেও সবাই রয়েছেন সকলে মিলেই একটি ভাল কাজ সম্পন্ন করা হয়। যে এলাকার জন্য আমি এই প্রশংসা পাই, সেই এলাকার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিকে আমি এই প্রশংসার কথা জানাই।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবো’তে আপনি শীর্ষ পদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। অনেক ভাল উদ্যোগ আপনি নিয়েছেন। আপনার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে এবং আরও সুন্দর ও গতিশীল একটি পাউবো গঠণে আপনার পরবর্তি মহাপরিচালকের প্রতি কী ধরণের পরামর্শ থাকবে?
পাউবো মহাপরিচালক : প্রথমেই আমি যেটি মনে করি, তা হচ্ছে সরকার আমাকে যে মূল্যায়নটি করেছেন-এই মূল্যায়নের যথাযথ সন্মান রক্ষা করা। আমি চাকুরি জীবনের শুরু থেকেই পেশার প্রতি যথেস্ট আন্তরিক থাকার চেষ্টা করেছি, এখনও করি। আপনারা জানেন, আমি নিয়মিত পদোন্নতি পেয়ে পাউবো’র মহাপরিচালিক হয়েছি। এরপর সরকার আমার কাজে সন্তুষ্টি হয়ে পাউবো মহাপরিচালক পদে আরও দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। এই কারণেই দিয়েছেন যে, আমি যাতে আমার ডিপার্টমেন্টের জন্য, দেশের জন্য, এদেশের মানুষের জন্য সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারি। এই মূল স্পিরিটটি আমার ভেতর সবসময় কাজ করে। আমি আমার জন্য নয়, দেশের জন্য মানুষকে কিছু দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি একটি উদাহরেণ দিতে চাই এভাবে যে, ২০১৭ সালের বন্যায় আমি একটি পরিকল্পনা আটি। সেমোতাবেক আমাদের যারা নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন মূলত তারাই হচ্ছেন ফোকাল পার্সন। এরাই বন্যা মোকাবেলা করেন। আমার প্রথম দায়িত্বই হচ্ছে তাদের চাঙ্গা করা। তাদেরকে দায়িত্বশীল করে তোলা। এটা না করতে পারলে তার ভেতর একটা হীনমন্যতা কাজ করবে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী যদি হীনমন্যতায় ভুগেন তাহলে উনি কিন্ত সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। একটি জেলায় উনি কিন্ত একক। কিন্ত এই নির্বাহী প্রকৌশলী যদি প্রশাসনের সাথে মিলে কাজ করেন তাহলে উনি সকলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন। আমি বন্যা কবলিত এলাকার ইউএনও, প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। দরকার হলে পুলিশের এসপি’র সাথে কথা বলেছি।
এর মূল কারন হচ্ছে প্রশাসন এবং পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যাথে একটি সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক গড়ে ঊঠে। যেমন-কুড়িগ্রাম বগুড়া, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার, সুনামগজ্ঞ, হবিগজ্ঞ এসব বন্যা কবলিত এলাকায় আমি ফোনে নিজে কথা বলেছি। যাতে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেকে একা না ভাবেন। উৎসাহের সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ভবিষ্যতে এভাবেই বন্যা মোকাবেলায় কাজ করতে হবে যারাই পরবর্তিতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে আসবেন।
একইভাবে আমি ২০১৯ এর বন্যাও মোকাবেলা করেছি। আমি এই বন্যা মোকাবেলায় পাউবো ডিজি এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর মধ্যে কোন দূরত্ব রাখিনি। এটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব। নির্বাহী প্রকৌশলীদের সহায়তা করা। একইভাবে নির্বাহী প্রকৌশলীকেও তার সমস্যার কথা উর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে শেয়ার করতে হবে। বর্তমানে যারা নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন তারা অনেক তরুন। এদের অধিকাংশের চাকুরির বয়স আরও ২০ বছর রয়েছে। এতে করে একটা টিম তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এই টিমটা আগামীতে এই দেশকে সেবা দিতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই নির্বাহী প্রকৌশলীরা বিগত দু’টি বন্যা তারা মোকাবেলা করার মধ্যে দিয়ে ‘ফ্লাড ফাইটিং’ অর্থাৎ বন্যাকে মোকাবেলার যে যুদ্ধ সেই অভিজ্ঞতা কিন্ত তারা অর্জন করে ফেলেছে। আপনারা দেখবেন যে, এবারের বন্যা মোকাবেলায় কিন্ত তারা দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। এই যে অর্জনটা আমি চাইবো ভবিষ্যতেও যেন এটা ধরে রাখা হয়।
আরেকটি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডেল্টা প্ল্যান পাশ করেছেন- এটি শত বছরের পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। একইসাথে ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে আমরা যে সমস্ত উন্নয়ন করে যাচ্ছি- এই ধারাবাহিকতায় চলবে না। আমাদেরকে নতুনত্ব আনতে হবে। এমনভাবে উন্নয়ন কাজ করতে হবে যাতে ৫০ বছর পর ওই সময়কার প্রজন্ম বলবে যে তৎকালীন সরকার আমাদের জন্য চিন্ত করে এসব করেছেন। কোন ভুল হয়নি। আমরা চাচ্ছি এমনভাবে কাজ করতে। এজন্য আমাদের যারা পরিকল্পনা এবং নকশায় জড়িত রয়েছেন তাদেরকে নিয়ে বসেছি। তাদের বলেছি, আগামী ১০০ বছরের চিন্তা করে পরিকল্পনা দিতে হবে, নকশা প্রনয়ন করতে হবে। এজন্য আমি পাউবো’র যেসব কর্মকর্তারা ট্রেনিংয়ে যান-তাদের বলি, আপনারা সেখান থেকে কিছু শিখেন এবং সরকারের ১০০ বছরের পরিকল্পনা মোতাবেক উদ্যোগ নিন। উন্নয়নের এই ধারাকে ধরে রাখতে হবে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রেখে আরও উন্নত থেকে উন্নততর করতে হবে। আমি চাইবো, আমার পর যিনি এই পদে আসবেন তিনিও যেন এসব পরিকল্পনা চলমান রাখেন।
বাংলা৭১নিউজ : পানি উন্নয়ন বোর্ডে অর্থ কোন সমস্যা কীনা, অর্থের জন্য কোন কাজ আঁটকে থাকা কিম্বা উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক : এইখানে দু’টি জিনিষ রয়েছে-এটি উন্নয়ন, আরেকটি অনুন্নয়ন। পাউবো’কে দেয়া বরাদ্দের ৮৫ ভাগ আসে উন্নয়ন খাত থেকে, আর ১৫ ভাগ আসে অনুন্নয়ন খাত থেকে। উন্নয়ন বাজেটে অর্থের কোন ঘাটতি নেই। আমরা প্রতি কিস্তির টাকা সেখান থেকে পাচ্ছি। সামান্য কিছু যেটা ঘাটতি থাকে সেটা অনুন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে। এই বাজেটটা আমরা বন্যা মোকাবেলা, জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে ব্যয় করি। এখন এটাও বাড়ছে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেড়েছে। বিগত দশ বছওে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে এই খাতের বাজেট। গত জুনের আগে ফণির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পাউবোকে অতিরিক্ত ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এরকম বরাদ্দ অতিতে কখনোই দেওয়া হয়নি। এখন আর অর্থের সমস্যা প্রকট না। এখন এই অর্থ সময়মত, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারাটাই মুখ্য বিষয়। এটা করতে পারলে অর্থের ঘাটতি যে খুব বেশি থাকবে-এটা আমি বিশ্বাস করিনা। আর এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অনুন্নয়ন খাতের বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে। এখাতের বরাদ্দ প্রতি বছরই কিছু কিছু বাড়ানো হচ্ছে।
এবার আসি বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে। পাউবো’কে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সেইসাথে চলমান প্রকল্পগুলো যেমন ইরিগেশন প্রজেক্ট, ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট, কোস্টাল এ্যামবাঙ্কমেন্ট প্রজেক্ট, ড্রেনেজ প্রজেক্ট-এসব প্রজেক্টগুলোকে রিহ্যাবিলিয়েট করে আবার নতুনের মত আরও আধুনিক করে ফেলতে পারি। তাহলে কিন্ত রক্ষনাবেক্ষন বাজেটের পরিমান অনেক কমে যাবে। আমি মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর ফিল্ড পর্যায়ে উদ্ভুুদ্ধ করার চেষ্টা করছি এই বলে যে, প্রতিবছর রক্ষনাবেক্ষন কাজের বরাদ্দ পাওয়া যাবে এটা না ভেবে বরং ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগের প্রকল্পটিকে কিভাবে পুনর্বাসন করা যায়-সেই চিন্তা করতে হবে। একটা প্রকল্প যখন ৩০ বছরের পুরানো হয়ে যায় তখন এই প্রকল্প রক্ষাবেক্ষন ও মেরামতের জন্য প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ না চেয়ে বরং প্রকল্পটি ২০৪১ এর ভিশন অনুসারে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নতুুন করে করতে পারলে রক্ষনাবেক্ষন খাতের টাকা অনেক কমে যাবে। আমরা এখন এই পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। সমস্ত প্রকল্পগুলোকেই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুনর্বাসনের দিকে নিতে হবে। আর যখনই এটা পুনর্বাসন প্রকল্প হিসাবে নতুনভাবে করে আনতে পারবো তখনই মেইনটেন্যান্স বাজেটের টাকা কমে যাবে।
নদীগুলো নিয়েও আমরা বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যেমন রিভারব্যাঙ্ক স্টাবিলাইজেশন। এগুলো যদি আমরা পর্যায়ক্রমে করতে পারি, তাহলে দেখা যাবে যে একপর্যায়ে বন্যা মোকাবেলায় আগের মত আর কষ্ট করা লাগবে না। এসবের জন্য বরাদ্দ চাওয়ার পরিমানও অনেক কমে যাবে। তখন আমরা বন্যা মোকাবেলার যে যুদ্ধ সেটা খুব মেথমেথিক্যাল ও স্ট্রাকচারাল ওয়েতে করতে পারবো। একারনে বলছি যে, এই মুহুর্তে অর্থ আসলে বড় সমস্যা নয়। আমাদের বড় কাজ হচ্ছে নতুন নতুন চিন্তার মাধ্যমে অধিক পুরানো প্রকল্পকে কিভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে আধুনিক প্রকল্পে পরিণত করা যায়-সেই দিকে নজর দেওয়া।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবোর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, গত দশ বছরে পাউবোর অনেক সাফল্য। আমরা যদি বিষয়টাকে এভবে বলি যে, বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বন্যামুক্ত একটি ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার। আমরা এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কাজ করছি। দেখুন, ১৯৫৯ সনে এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিওয়াপদা)। ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির আদেশ নং: ৫৯ মোতাবেক ইপিওয়াপদা থেকে আলাদাভাবে সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) গঠণ করেন।একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের যে রোড ম্যাপ প্রনয়ণ করেছিলেন, সেখানে পাউবোকে অনেক গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্টের কালো রাতের সেই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মুখ থুবড়ে পড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে দেখা সোনার বাংলা গড়ে, তোলার রোডম্যাপ। এই কালো মেঘের অশুভ ছায়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপরও পড়েছিল।
এই ধকল কাটাতে নানামুখি সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাউবো আইন, ২০০০ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের আওতায় পানি সম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পানি পরিষদের মাধ্যমে বোর্ডের শীর্ষ নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কারণে পাউবো এখন গতিশীল একটি প্রতিষ্ঠাণে পরিণত হয়েছে। একটি কথা না বললেই নয়: আর তা হচ্ছে- দেশের নদ-নদী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শ:ই বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই দেশের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে পাউবো। আর আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ড আজ এতটা সফলতার মুখ দেখতে পেরেছে। নদী নির্ভর মানুষ পাচ্ছেন এর সুফল।
তিনি বলেন, একথা বললাম এ কারণে যে- আওয়ামী লীগ সরকারই ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি এবং ২০০১ সালে জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও ২১০০ সালকে টার্গেট করে ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান প্রনয়ণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই ভারতের সাথে ঐতিহাসিক ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার ফলে ১৯৯৭ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে ন্যুনতম পানি প্রবাহ নিশ্চিত হয়। হাওর এলাকায় ২ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০০ সালে বাংলাদেশ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। তিনি বলেন, উত্তরে বিস্তৃৃর্ণ হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা এ ৩টি নদী বাহিত পলল ভূমিতে গড়া আমাদের বাংলাদেশ। এখানে অসংখ্য নদ-নদী সমগ্র দেশে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে। নদ-নদী সমূহের মধ্যে বড় তিনটি আন্তর্জাতিক নদী (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা)-সহ মোট ৫৭ টি সীমান্তনদী এবং বাকী গুলি দেশের আভ্যন্তরীন অববাহিকা ভিত্তিক অথবা প্রধান নদীর শাখা বা উপশাখা হিসেবে বহমান। সাতান্নটি সীমান্ত নদীর মধ্যে চুয়ান্নটি বাংলাদেশ-ভারত এবং তিনটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার এর সীমানা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক তিনটি বড় নদীর সম্মিলিত অববাহিকার মোট আয়তন ১৭.২০ বর্গ কিলোমিটার। যার মাত্র সাত শতাংশ বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত। এ বিরাট অববাহিকার বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর মাধ্যমে সাগরে মিশে যায়। পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনার মিলিত প্রবাহ কখনো কখনো বর্ষাকালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। এ প্রবাহ সমৃদ্ধ নদীমালা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি অনন্য রূপ দিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ : বন্যা মোকাবেলায় আর কী ধরণের কাজ করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
পাউবো মহাপরিচালক : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির মাত্রাও পরিবর্তন হয়েছে। আগে যে বৃষ্টিপাাত ৩ বা ৪ দিনে হতো, এখন তা একদিনেই হচ্ছে। ফলে চার দিনে যে পানিটা প্রবাহিত হতো নদী দিয়ে, সেটা এখন একদিনেই হচ্ছে। তখনি নদীর পানি উপচিয়ে দুকূল প্লাবিত করে।
বর্তমানে বন্যা জনিত ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনায় নিয়ে সম্পদের সমন্বিত টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে। একারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী বেসিন, তিস্তা নদী বেসিন, গঙ্গা-পদ্মা নদী বেসিন, আপার মেঘনা বেসিন (সুরমা-কুশিয়ারা নদী বেসিন সহ), লোয়ার মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলী নদী বেসিন (হালদা নদী বেসিন সহ), সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী বেসিনভিত্তিক সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এই সমীক্ষা রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় এনে এবং ২০০ বছরের রিটার্ন পিরিয়ড বিশ্লেষন করে প্রধান প্রধান নদ-নদীসমূহের দুই তীরকে স্থায়ীকরণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে আনা হবে। এছাড়াও বাঁধসমূহ প্রশস্থ ও শক্তিশালী করা গেলে বন্যার ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় রাখা যাবে। উপকূলীয় বাঁধসমূহ পুনরাকৃতিকরণ ও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ওইসব এলাকার বন্যার প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। ক্যাপিটাল ডেজিংয়ের মাধ্যমে বড় নদীগুলো খনন করা হবে। আর ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয়সমূহকে খননের মাধ্যমে পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। একইসাথে নদীর ২০ বছরের ভাঙ্গা গড়ার একটি তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমরা যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ন তা ঠিক করে আমরা ইন্টিলিজেন্ট ড্রেজিং করবো। যেখানে দরকার, সেখানেই করবো। নদী ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। ওনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের নদ-নদীগুলোকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে এর নাব্যতা ধরে রাখার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যাতে করে বর্ষা মৌসুমের পানিকে ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে লাগানো সম্ভব হয়। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সহ সরকারের রূপকল্প-২০৪১ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।
বাংলা৭১নিউজ : আপনাদের বেশ কয়েকটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। এগুলো শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধুঁকে। এই সমস্যা মোকাবেলায় কী ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : আমাদের অনেকগুলো বড় বড় সেচ প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে যেমন মহুরি ১৭ হাজার ৯শ’ হেক্টর এলাকা সেচের আওতাধীন ছিল। মাঝে নাব্যতা কমায়, রিজার্ভারে পানির পরিমান কমে যাওয়ায় এবং খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই সম্যা সমাধানে ইরিগেশেন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ইমিপ) নামক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে খালগুলোকে সচল করতে খনন করা হচ্ছে। এতে করে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর মধ্যে দিয়ে আমরা পূর্বে যে সেচযোগ্য জমির পরিমান ছিল সেখানে চলে যেতে পারবো। মেঘনা ধনাগোদা প্রকল্পে সেচযোগ্য জমি যে পরিমান ছিল, ওই পরিমান জমিতেই চাষ হচ্ছে। এতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। মনু নদী নির্ভর যে সেচ প্রকল্প রয়েছে সেটিও ঠিক আছে। মূল সমস্যা হচ্ছে গঙ্গা এবং তিস্তা নদী নির্ভর সেচ প্রকল্পে। আমাদের কয়েকটা ফেইজ নেওয়ার কথা ছিল। এখন যে পানি আছে সেই পানিতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রথম যে অংশটা করা হয়েছে সেখানে খালের শেষ অংশ পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় পানি পৌঁছছে না। এটার দুটি কারণ। প্রথমত: বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কাজ হওয়ায় পানি যাতায়াতের পথ অনেকটা বাধাগ্রস্থ হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত: এখন যে বোরো ফসল হচ্ছে এটা শীতকালীন ফসল। আজ থেকে ৪০ বছর আগে আমরা যখন প্ল্যান করে অগ্রসর হই তখন কিন্ত আউশ, আমন চাষ- এ দুটিই মূল ফসল ছিল। বোরো চাষ এভাবে ছিল না। বোরো আসার পর যেটি হলো যে, এই আবাদ পুরোটাই সেচের উপর নির্ভরশীল। এতে করে পানির চাহিদাটাও বেড়ে গেছে। ফসলের পরিবর্তনের সাথে সাথে পানির চাহিদাও বৃৃদ্ধি পেয়েছে।
এখন আমরা যেটা করছি এসব প্রকল্প এলাকার খাল এবং নদীগুলো খনন করে এর ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ফলে মেঘনা-ধনোগোদা, কিম্বা জিকে প্রকল্পে প্রথম যে পরিমান পানি লাগতো তার চেয়ে বেশি পানি এখন আমরা দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে হবে কী ফসলের পরিবর্তন আসলেও নদী এবং খাল খননের মাধ্যমে পানির বাড়তি চাহিদাটা পূরণ করতে পারবো। সেইসাথে চেষ্ট চলছে পানির যাতে অপব্যবহার না হয়। এই অপব্যবহার ঠেকাতে কার্ডের মাধ্যমে পানি দেওয়া। যেটা আমরা মহুরি সেচ প্রকল্পে শুরু করবো। কার্ডের মাধ্যমে কৃষক পানি নেবে এবং পয়সা দিয়ে ক্রয় করবে। এখন যেমন একেবারেই বিনামূল্যে নেওয়ায় যে পরিমান পানির প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি নিয়ে যাচ্ছে। এরফলে পানির অপব্যবহার বাড়ছে, অন্যদিকে সেচ খালের পিছনের কৃষক পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে নিলে পানির এই অপব্যবহার রোধ করা যাবে। এই কনসেপটা আমরা আস্তে আস্তে সব ইরিগেশন প্রকল্পেই নিয়ে আসবো। কিছু কিছু এলাকায় আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ লাইনেও চলে যাচ্ছি। আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ লাইনে গেলে পানি অপব্যবহার কম হবে। আবার কিছু কিছু এলাকায় যেখানে টারসারি ক্যানেল আছে সেগুলিকে আমরা আরসিসি ক্যানেলের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। যেটা আমরা তিস্তায় করবো। এটা করলে পানির অপব্যয়টা কম হবে এবং একই পানি দিয়ে প্রায় দেড়গুন এলাকা ইরিগেশন করতে পারবো। আমাদের মাথায় এই চিন্তা আছে যে, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হলেও কোথায় যাতে খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয়। বিশ কোটি মানুষকে খাওয়ানোর জন্য যে পরিমান খাদ্য দরকার তা যেন থাকে এটাকে মাথায় রেখেই আমরা ইরগেশন প্রজেক্টগুলোকে পূনর্বাসনের দিকে নিচ্ছি।
বাংলা৭১নিউজ : সীমান্ত নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে আপনারা কী ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং অভিন্ন নদীর কাজ করার ক্ষেত্রে যে বাধা আসে তা কীভাবে মোকাবেলা করছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : সীমান্ত নদী ভাঙ্গন রক্ষায় আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। এটি হচ্ছে সীমান্ত নদী তীর রক্ষা প্রকল্প। আগে যেটি ছিল-অনেক সময় সীমান্তে কাজ করতে গেলে সমস্যা হতো।পরবর্তিতে আমরা যেটি করলাম, সীমান্ত নদীর প্রথম ফেইজ যখন আমরা বাস্তবায়ন করি তখন আমরা যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ এবং ভারতের সাথে আলোচনার পর আমরা দু’দেশের নদী তীর ভাঙ্গন এলাকাগুলো চিহ্নিত করি। এরপর দুুইদেশ একমত হলো যে, এই নদীগুলোর তীর প্রতিরক্ষা কাজ করা দরকার। সেইভাবে প্রথম পর্যায়ের কাজ আমরা শেষ করে ফেলেছি। একইভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ক্ষেত্রেও আমরা উভয় দেশ আলোচনার মধ্যে দিয়ে চলমান রেখেছি।
এরপরও যদি কোথায় ভাঙ্গন দেখা দেয় তাহলে যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি ভারতকে অবহিত করি এবং পারস্পরিক বুঝাপরার মাধ্যমেই আমরা কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজেই সীমান্ত নদীতে কাজ করার ক্ষেত্রে কোন বাধা এখন আমরা পাচ্ছি না। সুসম্পর্কের ভিত্তিতেই আমরা সীমান্ত নদী তীর ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরপরও কোন সমস্যা দেখা দিলে আমারা উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করছি।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবো’র অনেক জমি অপদখলে রয়েছে। এসব জমি উদ্ধারে আপনারা কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে দেশের অনেক জায়গায় নদী তীরবর্তি জমি হুকুম দখল করতে হয়।আমাদের জানার বাইরেই কিছু কিছু জমি বেহাত হয়ে গেছে। উদাহরণ হিসাবে বলি, মাস্তল মৌজায় আমাদের প্রায় ৯০ বিঘা জমি মোস্তাল মৌজায় অপদখলে ছিল। সেটা আমরা মাত্র ৩ মাসের প্রচেষ্টায় সম্পূর্ন দখলমুক্ত করে ফেলেছি। যশোরে যে ভৈরব নদী খনন হচ্ছে, এই নদী দখল হয়ে গিয়েছিল। এটা আমরা উদ্ধার করেছি। সালতা ভাদ্র্রার যে অংশটা অপদখলে ছিল সেটাও আমরা উদ্ধার করেছি। কাজেই নদীর পাড়ে অপদখলীয় জমি এবং বাইরের যে জমি অপদখলে আছে তা আমরা ক্রমান্বয়ে দখলমুুক্ত করবো। আমরা বলেছি যে, নদী তীরবর্তি এবং আমাদের কোথায় কোন জমি অপদখলে রয়েছে তার একটি তালিকা প্রনয়ন করার জন্য। এই তালিকা আমরা যেখান থেকেই পাচ্ছি, সেখানেই আমরা দখলমুক্ত করার চেষ্টা করছি। একদিনে সব জমিতো উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে আমরা বেশ কিছু জমি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা সব জমিই দখলমুক্ত করবো।
আমরা তালিকা প্রনয়নের পর দেখেছি, যে জমিটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন সেই জমিটাতেই আমারা আগে হাত দিয়েছি এবং দখলমুক্ত করছি।পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে আমরা পাউবো থেকে একটি চিঠি দিয়েছি যে, এখন থেকে আর কোন জমি আর কাউকে লিজ দেব না। উদ্দেশ্যটা হলো-আমরা আগে আমাদের পাউবো’র জমি কোথায় কোনটা আছে তার তালিকা তৈরি করবো এবং অপদখলীয় জমি উদ্ধার করে পাউবোর নিয়ন্ত্রনে আনবো। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন জমি পাউবোর কাজে ব্যবহার হবে এবং কোনটি হবে না। আমরা যদি দেখি যে, এই জমিটা আমাদের প্রয়োজনে লাগবে না, তখনই কেবল আমরা এই জমিটি অন্য কোন সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া কিম্বা লিজ দেওয়ার চিন্তা করবো। এই কারণে লিজ আমরা আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবো’র অনিয়ম, দূর্নীতি বন্ধে কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
পাউবো মহাপরিচালক : অনিয়মগুলো অতিতে হতো দরপত্র নিয়ে। এখনতো সমস্ত দরপত্র ই-টেন্ডার। এই ই-টেন্ডার কন্ট্রোল করা হয় সিপিটিইউ থেকে। এটা পাউবো কিম্বা কোন সংস্থার হাতে নেই। যে কারণে সব তথ্য ইলেকট্রিক্যালি সবার কাছে ওপেন। এধরণের টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর অনিয়ম অনেক কমে গেছে। আরেকটি হচ্ছে-মাঠ পর্যায়ের কাজে আমরা সর্বোস্তরে মনিটরিং করছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সবাই তদারকি করছি। সরাসরি আমরা ব্লক বানানো পর্যবেক্ষন করছি এবং ক্রুটিপূর্ন মালামাল বাতিল করে দিচ্ছি। আমরা এমনটি করছি-ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যাতে আরও সুন্দর হয়। নদী তীরে নেদারল্যান্ড কাজ করলে যেমন সকলে তাকিয়ে থাকে, বাংলাদেশও নদী তীর সংরক্ষণের কাজ করলে যাতে ওইভাবে তাকিয়ে দেখে বলতে পারে যে কাজটি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। এভাবে আমরা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের মাঠ প্রশাসনকে মোটিভেশন করছি। আমরা বলছি, এই কাজটা আমার নিজের কাজ, আমার দেশের কাজ। এটা আমাকে ভাল ভাবে করতে হবে। অতিতে এমন মোটিভেশন কেউ করেনি। এতে করে তাদের মধ্যে এক ধরণের সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং আমরা অনেক ভাল ফল পাচ্ছি। অর্থাৎ অনিয়ম আর আগের মত নেই বললেই চলে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনাকে আমরা এগিয়ে নিতে পারবো।
বাংলা৭১নিউজ : ভবিষ্যতে পাউবো’র প্রয়োজনে আপনার সহযোগিতা চাওয়া হলে আপনি তা করতে প্রস্তুত কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক : দেখুন, আমাকে সরকারই মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আমি আমার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছি। কাজের মধ্যে দিয়ে পাউবোতে আমি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। ভবিষ্যতে আমার কাছে যদি সহযোগিতা চাওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই আমি আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে কোন সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। যে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে আমি এত কিছু শিখেছি-সেই প্রতিষ্ঠাণের প্রয়োজনে যেকোন কাজে লাগতে পারাটাকে সব সময়ই আমার সৌভাগ্য বলেই মনে করবো।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবো’র কঠিন দায়িত্ব পালনের পর পরিবারকে কিভাবে সময় দেন, কিম্বা এ নিয়ে পরিবার থেকে কোন চাপ আসে কিনা?
পাউবো মহাপরিচালক : এটা সত্যি কথা, পরিবার কিছুটা বঞ্চিতই হয়। সকাল ৯টা মধ্যে অফিসে পৌঁছি আর ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা বেজে যায়। শুক্রবার বাদে একই নিয়মে চলছে। শুক্রবার ছুটির দিনেও কখনো কখনো ফিল্ডে চলে যাই। এরপরও যেটুকু সময় পাই তা স্ত্রী, সন্তান সকলকে নিয়ে একসাথে কাটানোর চেষ্টা করি। এই কম সময়ের মধ্যেই চেষ্টা করি পারিবারিক বন্ধনটাকে ধরে রাখার জন্য। সবচেয়ে বড় কথা, পরিবার সেক্রিফাইস করছে বিধায় আমি প্রতিষ্ঠানের জন্য, দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। কাজেই আমার জন্য এটুকু ত্যাগ পরিবারের সদস্যরাও হাসিমুখেই গ্রহণ করেন।
আমি মনে করি, দেশের জন্য একটা ভাল কাজ করতে পারাটাও ইবাদত। আর একটা দিক আমি সব সময়ই মাথায় রাখি যে, আমি যে পদে আছি এখানে যেন সকলের প্রতি সুবিচার করতে পারি। কারো প্রতি যেন পক্ষপাতিত্ব না হয়। সেভাবেই আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। বিনা কারণে আমার দারা যেন কারো ক্ষতি না হয়, সেটাও মনে রাখতে হবে। আমি আমার পরিবারের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও আমার পরিবার মনে করি। সেজন্যই আমি আমার চাকুরি জীবনে লস করিনি। বরং গেইন করেছি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করার সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ : পাউবো’র শীর্ষ পদে থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার এবং তার সাথে কাজ করার সুযোগ আপনি পেয়েছেন, আপনার মূল্যায়নে প্রধানমন্ত্রী কেমন?
পাউবো মহাপরিচালক : আমি সরারসরি ওনার সাথে কাজ করার সুযোগ পাইনি। তবে একনেকের বৈঠকে বেশ কয়েকবার উপস্থিত থেকেছি। আমি বলবো, ওনার যে মেধা এবং প্রজ্ঞা এটার তুলনা করা বোধহয় সম্ভব নয়। আমি একজন প্রকৌশলী এবং দীর্ঘ ৩৬ বছর চাকুরি করি। কিন্ত যখন আমি একনেক বৈঠকে বসি তখন উনি যে ধরণের বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং প্রকল্পগুলো যেভাবে বিশ্লেষন করেন, এটা শুধু পাউবোর ক্ষেত্রে নয়-প্রতিটি সেক্টরকেই; তাতে আমার কাছে মনে হয়-এটা আল্লার দান। সবার দ্বারা সম্ভব নয়। আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে যে মেধা এবং প্রজ্ঞা দিয়েছেন আর কাউকে তা দেননি। এটাই বাস্তবতা। উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কিভাবে একটা কাজ করাতে হবে এবং কী প্রক্রিয়ায় কাজটা সম্পন্ন করতে হবে-এসব ব্যপারেও তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এটা অকল্পনীয়।প্রতিটা জিনিষেই উনি বলেন, এদেশের জনগণের জন্য করছি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে।
বাংলা৭১নিউজ : ভবিষতের বাংলাদেশটাকে আপনি কিভাবে দেখতে চান?
পাউবো মহাপরিচালক : ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে আমি দেখতে চাই এভাবে যে, ২০৪১ সালে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মানুষ বাংলাদেশে চাকুরির জন্য আসবে। এখন যেমন এদেশের মানুষ বিদেশে চাকুরির জন্য ছুটছে। এটা যেন না থাকে। আমাদেরকে সেরকম একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। যা হবে সত্যিকারের সোনার বাংলা। যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। আমি চাই ঠিক সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি