চলতি বছরেই ৫০ সংবাদকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। যেসব দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেসব দেশে কোনো যুদ্ধ চলছিল না।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) স্থানীয় সময় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডারস (আরএসএফ) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
আরএসএফের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যেসব সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশি ছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিক, দুর্নীতি ও পরিবেশ ক্ষেত্রে কাজ করা।
রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডারস বলছে, ২০২০ সালে ৮৪ শতাংশ সাংবাদিককে সরাসরি তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ও হত্যা করা হয়েছে। আর ২০১৯ সালে সেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে মেক্সিকোতে আটজন, ভারতে চারজন, ফিলিপাইনে তিনজন ও হন্ডুরাসে তিনজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
মেক্সিকোর ‘এল মান্ডো’ পত্রিকার প্রতিবেদক জুলিও ভালদিভিয় রদর গুয়েজের মস্তকবিহীন লাশ পাওয়া গেছে। পশ্চিমের এলাকা আকাপুলকোতে স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটের সম্পাদক পুনতো এক্স পুনতো নোতিসিয়াসের মরদেহের টুকরা টুকরা অংশ পাওয়া গেছে। তবে মেক্সিকোতে সাংবাদিক হত্যায় জড়িত কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে আরএসএফ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে পাঁচজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ভারতে ‘রাষ্ট্রীয় স্বরূপ’ পত্রিকার প্রতিবেদক রাকেশ ‘নির্ভীক’ সিংকে ডিসেম্বর মাসে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ-পূর্বের তামিলনাড়ু রাজ্যে টিভি সাংবাদিক ইসরাভেল মোজেসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ইরানের আমাদনিউজ ওয়েবসাইট ও টেলিগ্রাম নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক রুহুল্লাহ জামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএফের প্রতিবেদনে। গত ডিসেম্বর মাসে রুহুল্লাহ জামেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
আরএসএফ জানিয়েছে করোনা মহামারির কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর কম সংখ্যক সাংবাদিক মাঠে কাজ করেছে। এর ফলে কম সংখ্যক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশে আরএসএফ জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয়েছে।
এ বছর ৩৮৭ জন সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই হার অনেক বেশি। আর করোনা ভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করায় তাদের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরএসএফ চীনের কথা উল্লেখ করে বলেছে, চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানকে (৩৭) সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।
ঝ্যাং এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে উহানে যেয়ে করোনার সংক্রমণ নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন করেন। তার প্রতিবেদনগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এরপরই সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সমালোচনা করে তথ্য প্রকাশ করায় সেখানে আটজনকে শাস্তি হিসেবে তাকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়।
আরএসএফ ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সহিংসতার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। আরএসএফের এডিটর ইন চিফ অ্যাডেস মেভেল বলেন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঘটনা কাভার করেন এমন গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সহিংসতা বেশি ঘটেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ও ফ্রান্সে বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইনের কথা উল্লেখ করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম