বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মালয়েশিয়ায় সড়কে প্রাণ গেলো বাংলাদেশির আজই কারামুক্ত হবেন ডেসটিনির রফিকুল আমীন-হোসেন, আশা আইনজীবীর ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট সাড়ে ৫ কোটি লিটার ভোজ্যতেল কিনছে সরকার টিউলিপ ও পুতুলের বিরুদ্ধে আরও দুর্নীতির অনুসন্ধান নির্বাচনের আগে ট্রায়াল কোর্টে বিচারের আশা আসিফ নজরুলের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিশন গঠন ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা গাজীপুরে দিনব্যাপী ‘মার্সেল ডিস্ট্রিবিউটর সামিট-২০২৫’ মারা গেছেন সাবেক আইজিপি আজিজুল ৩ কোটি টাকা মূল্যের শো-রুমের গাড়ি নিয়ে লাপাত্তা : গ্রেপ্তার ৫ দেশের ইতিহাসে প্রথম গোয়েন্দা জাহাজ উন্মোচন করল ইরান প্রাথমিকে শিক্ষক বদলি শুরু, চলবে মার্চ পর্যন্ত ক্যান্সার আক্রান্ত গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার বিধান বাতিলের প্রস্তাব ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু তাবলিগ জামাতের সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা বান্দরবানে ৭ শ্রমিককে অপহরণ

১৯৯৬ সাল থেকে মহিলা মেম্বার ‘গরীবের মা’ রহিছা

গাজীপুরপ্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়ীয়া ইউনিয়নের বন্দান গ্রামের হার না মানা এক নারী রহিছা খাতুন (৫৪)। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘গরিবের মা’ নামে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের রহিছা ৪র্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাড়ীয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহিলা মেম্বার পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এটি তার টানা পঞ্চম বিজয়। রহিছার বিজয়ে এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

রহিছা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠান ভর্তি নারী-পুরুষ। হিন্দু-মুসলিম, ধনী-গরিব, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কারো হতে ফুল, কারো হাতে মিষ্টি বা ফলমূল। বাড়িতে নেই বলে সবাই অপেক্ষা করছেন তার জন্য।

পুত্রবধূ সিনথিয়া ছিদ্দিকা জানান, এলাকার হিন্দু-মুসলিম, ছোট বড় সবার সঙ্গেই তার শাশুড়ির সুসম্পর্ক। তিনি সবাইকে সম্মান করেন। মানুষের বিপদ শুনলেই ছোটেন। তাকে কেউ আগে সালাম দিতে পারেন না। তিনি সবার আগে সালাম দেন। এসব কারণে মানুষ তাকে অসম্ভব ভালবাসেন। ভালবাসার কারণেই এলাকার লোকজন নিজের পয়সায় প্রচার করে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

সিনথিয়া বলেন, প্রায় ২৯ বছর ধরে তার শাশুড়ি জনপ্রতিনিধি। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে নিজের সংসার ভুলে যাননি তিনি। সংসার ও বাইরে তার সমান দৃষ্টি। তিন বছরের বিবাহিত জীবনে শাশুড়িকে কখনো কটূকথা বলতে শোনেননি। ভুল করলে বুঝিয়ে দেন। রাগ করতে দেখেননি কখনো। তার পুত্রবধূ হতে পেরে তিনি গর্বিত।

শুভেচ্ছা জানাতে আসা প্রতিবেশী হাজী শহিদুল্লাহ (৭১) ও ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দিন (৬০) বলেন, শুধু নিজ ওয়ার্ড নয়, ইউনিয়নের কোথাও কেউ বিপদে পড়েছেন শুনলেই হাজির হন রহিছা। গরিব মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ বা প্রসবজনিত সমস্যায় পড়লে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি, চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা এমনকি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকেন তিনি। এলাকায় কোনো নারী মারা গেলে গোসল করার তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের খোঁজ-খবর নেন।

সংসার জীবনেও তিনি সফল। দরিদ্রকে পরিশ্রম দিয়ে জয় করে তিনি এখন পুরো উপজেলায় সফল নারীদের মডেল।

মেয়ে সানজিদা নাজনীন জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী হারুনুর রশিদ ছিলেন স্থানীয় দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী। ছিল অভাবের সংসার। বাবাকে সহায়তা করতে মা আনসার-ভিডিপি সদস্য হিসেবে ভর্তি হন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস-মুরগি পালন এবং উপজেলা সমাজসেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। অভাব-অনটনেও মা তাদের ৪ ভাইবোনের লেখাপড়ার কথা ভুলে যাননি। তাদের ৪ ভাইবোনের দুইজন বিএ, দুইজন মাস্টার্স পাস।

তিনি জানান, বড় ভাই কাজী রুহুল আমীন বিএ পাস করে প্রশিক্ষণ নিয়ে পল্লী পশু চিকিৎসক। ছোট ভাই কাজী রাকিব মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরি করেন। বড় বোন রোকেয়া বেগমও মাস্টার্স পাস করে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করছেন। তিনি বিএ পাস করে এমএ পড়ছেন।

বেলা দেড়টায় বাড়ি ফিরলে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক রহিছা খাতুনকে ঘিরে চলে আনন্দ-উল্লাস।

তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে ভালো লাগে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম সংরক্ষিত নারী মেম্বার পদে নির্বাচন শুরু হলে এলাকার মানুষ তাকে প্রার্থী হতে বলেন। দরিদ্র হওয়ায় প্রার্থী হতে চাননি। পরে সবার অনুরোধে প্রার্থী হন। পোস্টার এবং নির্বাচনী খরচ সবই এলাকার মানুষ দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে তিনি তিন হাজারের বেশি ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন।

মানুষের দেওয়া টাকা নির্বাচনে খরচ করেও ২০ হাজার উদ্বৃত্ত হয়েছিল। পরে ওই টাকা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছিলেন। এর পর প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি এলাকাবাসীর অনুরোধে প্রার্থী হন। মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিতও করে। প্রতিবারই এলাকার মানুষ টাকা পয়সা খরচ করে। তার কোনোদিন এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। বাকি জীবন একইভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান তিনি।

ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ নিয়ে সুখী এক জনপ্রতিনিধি গরীবের মা খ্যাত রহিছা খাতুন বলেন, তিনি আজীবন জনগণের সেবা করেই কাটাতে চান। তিনি পুরো এলাকাকে তার পরিবার বলে মনে করেন। তাই এলাকাবাসীর সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com