বাংলা৭১নিউজ, কামাল ইয়াসীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় না রেখে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মোহনপুর শাখা গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ করার পরিনতিতে কৃষকদের উপর হামলা, মামলা, পাল্টা মামলা আর কৃষকের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে মোহনপুরের ভেটুপাড়া গ্রামের ১নং গভীর নলকূপ।
জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মোহনপুর- এর সহকারী প্রোকৌশলী প্রায় ৩ বছর পূর্বে কৃষকদের সঙ্গে কোনরূপ সমঝোতা না করেই বরেন্দ্র বিধি উপেক্ষা করে ভেটুপাড়া গ্রামের স্কীমে জমি না থাকা জনৈক আফজাল হোসেনকে ভেটুপাড়া গ্রামের ১নং গভীর নলকূপের অপারেটর পদে নিয়োগ প্রদান করেন। যদিও বিধি মোতাবেক স্কীমে জমি না থাকলে অপারেটর পদে কারো নিয়োগ পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারপরেও যেহেতু এম,পি মহোদয় পদাধিকার বলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সম্মানীয় উপদেষ্ঠা বিধায় আফজাল হোসেনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু কাগজে কলমে আফজাল হোসেন অপারেটর নিয়োগ থাকলেও মৌখিক ভাবে স্কীম পরিচালনার সকল দায় দায়িত্ব তারই ভাই আলী হোসেনকে ছেড়ে দিলে গভীর নলকূপটি সম্পূর্ণ রুপে আলী হোসেনের দখলে চলে আসে।
এতে স্কীমের মূল কৃষকরা কথিত অপারেটর আলী হোসেনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। গভীর নলকূপের নিয়ম অনুযায়ী ডিপ টিউবয়েল চালু করতে গেলে কৃষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে সর্বসম্মতিক্রমে ভাড়া ধার্য্য হয়ে স্কীম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কথিত অপারেটর আলী হোসেন কমিটি গঠন না করে স্কীমের হিসেব নিকেশ না দিয়ে মর্জি মাফিক ভাড়া ধার্য্য করে বরাবর কৃষকদের উপর আর্থিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। এতে মূল কৃষকরা ক্রমশ অতিষ্ট হয়ে প্রতিবাদ করলে আলী হোসেন সেলিম রেজা নামের একজন কৃষককে পিটিয়ে আহত করেন। এই নিয়ে বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে ৪০০০(চার হাজার) টাকা আর্থিক জরিমানা আদায় করে পরিষদ। শঙ্কিত নিরুপায় স্থানীয় কৃষকরা কথিত অপারেটরের বিরুদ্ধে বরেন্দ্র অফিস মোহনপুর শাখায় লিখিত অভিযোগ করেন এবং মোহনপুর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করান। গভীর নলকূপের কৃষকদের মধ্যে অপারেটরকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে বরেন্দ্র অফিস মোহনপুর এবং মোহনপুর থানার ওসি(তদন্ত) মোঃ আফজাল হোসেন পৃথক পৃথক ভাবে অপারেটর আলী হোসেনকে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সাময়িক ভাবে স্কীম বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি সকল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ৮ ডিসেম্বর জোর পূর্বক ওই গভীর নলকূপের দখল নিতে গেলে স্থানীয় কৃষকরা সম্মিলিত ভাবে থানা পুলিশ ও বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্মরণ করালে আলী হোসেন ও কৃষকদের মধ্যে বাক বিতন্ডা শুরু হয়। এরই একপর্যায়ে আলী হোসেন ও তার অনুসারীরা দ্বিতীয় দফায় কৃষকদের উপর আবারও হামলা চালায়।
হামলায় সেলিম রেজা, শাহজামাল সহ বেশ কয়েক জন কৃষক আহত হন। আহতরা মোহনপুর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৯/২৩৩। এই মামলার প্রেক্ষিতে মূল অপারেটর আফজাল হোসেন বাদী হয়ে কয়েক জন কৃষককে আসামী করে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১০/২৩৪।
রাজশাহী- ৩ (পবা- মোহনপুর) এলাকা মূলত কৃষি প্রধান অঞ্চল। কৃষির উপর নির্ভর করে এখানকার কৃষক/ ব্যবসায়ীদের জীবিকা নির্বাহ হয়। নিজস্ব ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে অপারেটর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যের এমন বিবেচনাহীন হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকলে ভেটুপাড়া গভীর নলকূপ তথা পবা-মোহনপুর এলাকার কৃষিখাত বা কৃষকদের মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জনসম্পৃক্ততা না রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কৃষকদের কাঁধে অপারেটর চাপিয়ে দেয়া যেমন শোভনীয় নয় তেমনি সাধারণের মধ্যে বিরক্তিও সৃষ্টি হয়। মোহনপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন জানান “প্রায় গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে এম,পি মহোদয়ের সুপারিশ রয়েছে।” এমন পদক্ষেপ কোন ভাবেই কৃষিখাতে উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা হতে পারে না। এমনিতেই এম,পি মহোদয়ের সম্মান রাখতে গিয়ে রাজশাহী-৩ এলাকা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে পবা- মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্যদের ডি’ও লেটার এবং সুপারিশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে লক্ষ্য করা গেছে।
ধোপাঘাটা এ,কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাকশিমইল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কৃষক লীগ সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, স্কীমের আওতায় ১২০ বিঘারও বেশি ফসলী জমি রয়েছে। তার মধ্যে তাদেরই নিজস্ব প্রায় ৩৫ বিঘা আবাদযোগ্য জমি রয়েছে এবং নিজেদের জমিতেই গভীর নলকূপটি স্থাপিত হয়েছে অথচ তিনিও এই মামলার আসামী। সফিকুল ইসলাম আরো জানান, ডিপটিউবয়েলকে কেন্দ্র করে যে ভাবে হামলা মামলা শুরু হয়েছে তাতে আদৌ স্কীমটি সুষ্ঠভাবে পরিচালনা হবে কী না তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে শংকা দেখা দিয়েছে। অপারেটর সংক্রান্ত জটিলতা দুর না হয়ে গভীর নলকূপ বন্ধ হয়ে গেলে ১২০ বিঘা জমির ফসলহানির সম্ভাবনা দেখা দিবে। এমন পরিস্থিতিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর মোহনপুর শাখার সহকারী প্রকৌশলী ফারুক সাহেব জানালেন, প্রায় ১ বছর হল তার এখানে যোগদান করা। খুব দ্রুত কৃষকদের সাথে নিয়ে অপারেটর বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যকর করে স্কীমটি অব্যাহত ভাবে চালু রাখার পদক্ষেপ নিবেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস