রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যাওয়া অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ ১০ দিন পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে সিআইডি।
সোমবার (১১ মার্চ) বিকেল তিনটার দিকে বৃষ্টি খাতুনের বাবা সবুজ শেখের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে সিআইডি।
এর আগে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার মরদেহ শনাক্ত করা হয়।
রোববার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম জানান, বাবা সবুজ শেখ ওরফে শাবলুল আলম এবং মা বিউটি খাতুনের দেওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিলেছে বৃষ্টির ডিএনএ। অর্থাৎ অভিশ্রুতিই আসলে বৃষ্টি খাতুন।
সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর আলম মাতুব্বর সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে একজনের মরদেহের দুইজন দাবিদার পাওয়া যায়। কালী মন্দিরের একজন দাবি করেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী সেখানে যাতায়াত করতেন এবং তার বাবা দাবি করেন সে বৃষ্টি খাতুন।
পরে আদালতের নির্দেশে তার মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তার বাবা-মায়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তার ডিএনএ বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলে যায় এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিলে যায়।
রমনা কালী মন্দিরের পক্ষ থেকেও লিখিতভাবে তাদের দাবি নেই বলে পুলিশকে জানানো হয়। যেহেতু অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের ডিএনএ স্যাম্পল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলে যায় তাই আজ তার বাবার কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হলো।
বৃষ্টির বাবা সবুজ শেখ জানান, আমি আমার মেয়ের লাশ ফিরে পেয়েছি। কারা আমার মেয়ের লাশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করলো আমি জানি না। আমি আমার মেয়ের লাশ কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার বনগ্রামে নিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগে মেয়ের লাশ দাফন করি। পরে যারা আমার মেয়ের লাশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেব কিনা ভেবে দেখব।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টি তার বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে অভিশ্রুতি নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মূলত মুসলিম পরিবারের সন্তান। কিন্তু অভিশ্রুতি নামে নিজেকে পরিচয় দেওয়ার কারণে তার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
মৃত্যুর পর রমনা মন্দিরের পুরোহিত বৃষ্টিকে সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং সবুজ শেখ ও বিউটি খাতুন নিজের সন্তান বলে দাবি করেন। ধর্ম পরিচয় নিয়ে চারদিকে শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা। মরদেহ হস্তান্তর আটকে দেওয়া হয়। মরদেহ শনাক্তে নেওয়া হয় ডিএনএ নমুনা। নমুনা নেওয়ার ১১ দিন পর বৃষ্টির ডিএনএর সঙ্গে তার বাবা-মায়ের ডিএনএ মিলেছে।
বৃষ্টির গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। কলেজের সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর নাম বৃষ্টি খাতুন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে