বাংলা৭১নিউজ, এম নাজিম উদ্দিন,পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর বাউফলে শতাধিক পরিবার হোগলা বুনে জীবিকা নির্বাহ করছে। সপ্তাহের মঙ্গল থেকে রবিবার ৬ দিন জুড়ে থাকে হোগলা বুনায় কর্ম ব্যস্ততা।ওই গ্রামের কর্মব্যস্ত নারীরা সোমবার দিন র্কম বিরতি পালন করেন। এবং গৃহের প্রধান পুরুষ বাজারে হোগলা বিক্রির কাজেই মহাব্যস্ত থাকে। দক্ষিণাঞ্চলে বিখ্যাত কালাইয়া বন্দরে সপ্তাহের সোমবারে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত হোগলা বিক্রি করে থাকে। হোগলা পাতার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে জানাগেছে, ৩/ ৪ হাত দৈর্ঘ্য প্রস্থ হোগলা তৈরি করা হয়।চৌকা হোগলা, কাইছা হোগলা এবং কাইত্যা হোগলা নামে বিভিন্ন হোগলার প্রকারভেদ রয়েছে। তবে মাঠে ধান শুকানো কাজ এবং মাছের ঢোল তৈরি করার জন্য চৌকা হোগলার বেশি চাহিদা রয়েছে। গৃহ পরিবারের শোয়ার ঘরে ব্যবহার করার জন্য কাইত্যা হোগলার বেশি কদর। হোগলা পাতার দামের সাথে হোগলার দাম বাজারে ওঠানামা করে। প্রতি হোগলার মূল্য কুড়ি ( ২০টি) মূল্য ১২০০ টাকা, ১শ’ হোগলা ৬ হাজার টাকা। মাছের গদীতে যখন বিক্রি করা হয় তখন শত হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে খুচরা মূল্যে হোগলা বিক্রি করা হয়। প্রতিটি চৌকা হোগলা মূল্য হচ্ছে ৬০ টাকা, কাইতা হোগলা ৯০ টাকা এবং তেকাছি হোগলা ৮০ টাকা। মাছ রাখার ঢোল তৈরি, ধান শুকানো, মসজিদ ও মাহফিলে নামাজে বসার জন্য এবং গৃহস্থলী কাজে হোগলা ব্যবহার করা হয়। উপকুুলীয় এলাকায় দক্ষিনাঞ্চলে লোহালিয়া ও তেতুলিয়া নদীর কুল ঘেষে রয়েছে ইলিশ মাছের আড়ৎ। ওই সব আড়ৎ এ বেশির ভাগ মাছের ঢোল তৈরি করার জন্য হোগলার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রতি ধানের মৌসুমে হোগলার চাহিদা বেশী থোকে। কারন ধান রৌদ্রে শুকানোর জন্য হোগলা ব্যবহার করেন কৃষকরা । হোগলা পাতা কেটে রৌদ্রে শুকাতে হয়। পাতার পিটের নীল কেটে হোগলা বুনা হয়। ২/৩ জন একসাথে বসে হোগলা বুনে থাকে। বাউফল উপজেলাসহ দক্ষিনাঞ্চলের দেড় শতাধিক বাজারে হোগালা বিক্রি করা হয়। উপজেলার কালাইয়া, বগা, বিলবিলাস, কালিশুরী , কনকদিয়া সহ পাশ্ববর্তী উপজেলা দশমিনা, গলাচিপা, দুমকী হাটবাজারে হোগলা বেচাকেনা হয়। পটুয়াখালী জেলা শহর পাটি দোকানে এবং মৎস্য আড়ৎ এ পাইকারী হোগলা অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। জৈষ্ঠ-শ্রাবন মাসে বেশি হোগলা বিক্রি হয়। বিলবিলাস গ্রামে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে গৃহের নারী একত্র হয়ে হোগলা বুনার কাজে ব্যস্ত। তার মধ্যে রয়েছে, জয়লক্ষী রানী,পিয়া রানী, আলো রানী, বিছা রানী, গোলাপি এবং শিখা রানী। প্রতিটি হোগলা থেকে ২০ টাকা মজুরী পেয়ে থাকে। দৈনিক ৩/৪ টি হোগলা বুনতে পারে বলে তারা জানান। তাছাড়া উপজেলার গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসহায় নারী যারা হোগলা বুনে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে বিলবিলাস গ্রামের মনি মোহনের সাথে কথা হয়। ছোট সময় থেকে ব্যবসা করছেন। মনি মোহনের দাদা হোগলার ব্যবসা করতেন। তার বাবা মোনো মোহন হোগলার ব্যবসা করেছিল। তাই পিতার থেকে শিখে আসা হোগলা ব্যবসা ধরে রাখতে মনি মোহন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে ১৫-২০ হাজার টাকার হোগলা বিক্রি করেন। প্রতি মাসে ৫/৬ হাজার টাকা আয় করেন। তিনি ৪০ হাজার টাকা পূঁজি নিয়ে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার লক্ষাধীক টাকার পূঁজি রয়েছে । ব্যক্তিগত জীবনে ২ ছেলে ২ মেয়ে তার । এলাকার অমল শিকদার, নিতাই ব্যাপারী, সতীষ মিস্ত্রী হোগালা ব্যবসা করেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে হোগলা ব্যবসা সমস্যা হচ্ছে। চরাঞ্চলে হোগলা পাতার চাষ হয়। বিশেষ করে দশমিনা উপজেলার চরহাদি, চরশাহজাল চরবোরহান,চরবাসুদেব পাশা এবং চরআমরখালী এলাকায় হোগলা পাতার বেশি চাষ হচ্ছে। ওই সব হোগলা পাতা বাউফল ও দশমিনা উপজেলার বড় বড় বাজারে বিক্রি করা হয়। উপজেলার ছোট বড় খালের দু পাশে হোগলা পাতার চাষ করা হচ্ছে। ২/৩ হাত ছোটার এক মুটি হোগলা পাতার মূল্য- ৫০-৬০ টাকা। একমুটি হোগলা পাতায় ৪ থেকে ৫ টি হোগলা তৈরি করা যায়। প্রতি একর জমি থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার হোগলা পাতা উৎপাদন করা যায়। বছরে দু বার হোগলা পাতা কাঁটা হয়। জোয়ার ভাটা নিচু জমিতে হোগলা পাতার চাষ বেশ লাভজনক।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস