বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—নবী কারিম (সা.) তাঁর সুমহান রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা, আমি জুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি, আর তা (জুলুম) তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট, শুধুমাত্র সে ছাড়া আমি যাকে পথপ্রদর্শন করি। সুতরাং আমার কাছে হেদায়েত চাও, আমি তোমাদের হেদায়েত দান করব। …’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
আলোচ্য হাদিসে মহান আল্লাহ বান্দাদের তার কাছে হেদায়েত তথা সুপথ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর কাছে হেদায়েতের দোয়া করতে বলেছেন। যে আল্লাহর কাছে হেদায়েত চাইবে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করবেন।
হেদায়েত লাভের ব্যাখ্যা
আরবি হেদায়েতের বাংলা অর্থ পথপ্রদর্শন। সেটা যেমন পথ দেখিয়ে দেওয়ার অর্থে হতে পারে, তেমনি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার অর্থেও হতে পারে। তবে কোরআনে বর্ণিত হেদায়েত শব্দের অর্থ নির্ধারণে ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘হেদায়েত অর্থ পথপ্রদর্শন—যে পথ রাসুল ও তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। সুরা রাদের সাত নম্বর আয়াতে আল্লাহ যেমন বলেছেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথপ্রদর্শক।’ (আল জামিউ লি-আহকামিল কোরআন : ১/১৪৫)
হেদায়েত কেন শুধু আল্লাহর কাছে চাইতে হবে
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, হেদায়েত বা সুপথ প্রাপ্তি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কোনো মানুষের ইচ্ছায় কেউ সুপথ লাভ করে না। তাই হেদায়েত শুধু আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে সত্পথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সত্পথে আনেন এবং তিনিই ভালো জানেন সত্পথ অনুসরণকারীদের।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৬)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘কেননা আল্লাহই ভালো জানেন কে হেদায়েত লাভের যোগ্য এবং কে পথভ্রষ্টের যোগ্য। আল্লাহর প্রজ্ঞার অনুকূল না হওয়ায় মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু তালিব হেদায়েত পাননি। যাকে মহানবী (সা.) ভালোবাসতেন এবং তিনি যার হেদায়েতের প্রত্যাশা করতেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
দোয়া করা আবশ্যক
আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন সে ছাড়া সব মানুষই পথভ্রষ্ট। তাই আল্লাহর কাছে সুপথ লাভের দোয়া করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা সুরা ফাতিহায় আমাদের এই প্রার্থনা শিখিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।’ (সুরা : ফাতিহা, আয়াত : ৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা ও পথভ্রষ্টতার ঊর্ধ্বে থাকার পরও হেদায়েত লাভের দোয়া করতেন—যেন উম্মত তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সঠিক পথনির্দেশন, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক নির্মলতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০৭৯)
হেদায়েত অনুসন্ধান ও তার অনুসরণ করা আবশ্যক
মুসলমানের জন্য হেদায়েত লাভের অবলম্বনগুলো অনুসন্ধান ও তার অনুসরণ করা আবশ্যক। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলার কাছে সঠিক পথের সন্ধান চাওয়া মানবজীবনের মৌলিক দায়িত্ব প্রমাণিত হলো, তখন তা অর্জন করা হবে আল্লাহ তাআলার সর্বোত্তম দান। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সঠিক পথের সন্ধানের প্রার্থনা করার শিক্ষা দিয়েছেন। আর তাদের আদেশ দিয়েছেন তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করার দ্বারা সামনে অগ্রসর হতে ও তাঁকে সম্মান করতে। তারপর বান্দার গোলামির (ইবাদতের) ও একত্ববাদের (তাওহিদের) উল্লেখ করেছেন। আর এ দুটি (একত্ববাদে বিশ্বাস ও ইবাদত) হলো তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ২/২৭)
যেসব কারণে মানুষ হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়
মানুষ যেমন তার অনুসন্ধান ও প্রার্থনার মাধ্যমে সুপথ লাভ করতে পারে, তেমনি কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে সে সুপথ লাভ থেকে বঞ্চিতও হতে পারে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘সন্দেহজনক বস্তুর দিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। বিশেষত সেসব সন্দেহজনক বস্তু যা তাকে হেদায়েতের পথে চলতে বাধা দেয়। নিশ্চয়ই সন্দেহজনক বিষয়গুলো এমন বাঁকা পেরেক যা এ পথের বাধা, পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং চলতে বাধার সৃষ্টি করে।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ২/১৫)
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক
কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট
গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা
বাংলা৭১নিউজ/এইচএম