বাংলা৭১নিউজ,(হিলি)প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাসের সংক্রামন রোধে ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতে প্রশাসনের নির্দেশনায় দিনাজপুরের হিলিসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে সাপ্তাহিক হাট লাগানো বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে গনপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাইকার না আসতে পারায় পান নিয়ে বিপাকের মধ্যে পড়েছেন পান চাষীরা। ক্রেতা না থাকায় খানিকটা কম দামে পান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন পানচাষীরা এতে করে উৎপাদন খরচ না উঠার কারনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পানচাষীরা।
হিলি পান চাষের জন্য বেশ বিখ্যাত, হিলির সীমান্তবর্তী এলাকা ঘাসুড়িয়া এলাকার বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। প্রায় ৪শটির মতো পানের বরজ রয়েছে, স্বাদ ও দেখতে ভালো হওয়ায় চাহীদা থাকায় এই অঞ্চলের উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। হিলিতে সপ্তাহে দুদিন রবি ও বৃহস্পতিবার এবং পার্শ্ববর্তী বিরামপুরে শনি ও মঙ্গলবার পানের বৃহত্তর হাট বসে থাকে। এসব হাটে অত্র অঞ্চলের পানচাষীগন যেমন তাদের উৎপাদিত পান নিয়ে যান তেমনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারগন এখানে আসেন পান কিনতে।
হিলির ঘাসুড়িয়া গ্রামের পানচাষী মোবারক হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই অঞ্চল পান চাষের জন্য বিক্ষাত, এখানে প্রায় ৫শটির মতো পানের বরজ রয়েছে। অত্র এলাকার মানুষের মুল পেশায় হলো পান চাষ, এছাড়া অন্যকোন আবাদ এখানে হয়না, আর এসব পানের দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ চাহীদা রয়েছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে আমরা পানচাষীরা সংকটের মধ্যে রয়েছি। বর্তমানে মৌসুমের শেষ যার কারনে পান বরজে রাখতেও পারছিনা রাখলে পান মোটা হয়ে যাচ্ছে এতে করে পান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার হাটবাজারে যেতেও পারছিন যার কারনে পান বিক্রি করতে পারছিনা। এর পরেও যদিওবা হাটে যাচ্ছি, প্রশাসন আসলে পান ফেলে পালিয়ে যাওয়া লাগে, কিন্তু দাম কম হওয়ার কারনে আমরা পান বিক্রি করে লোকশানের মধ্যে পড়েছি।
কিছুদিন আগে যে পান বিক্রি হতো ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার পোয়া (৪০বিরা), এখন করোনা ভাইরাসের কারনে সেই পান নেমে এসেছে আড়াইহাজার থেকে সাড়ে ৩হাজার টাকা পোয়া। এতে করে আমাদের যে উৎপাদন খরচ সেটিই উঠছেনা, এতে করে বরজে যেসব শ্রমিক কাজ করছে তাদের মজুরিও ঠিকমতো দিতে পারছিনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের নিষেধ করছে এখন পান ভাঙার জন্য কিন্তু আমাদের তো মৌসুম শেষ তাই বরজে যে পান রয়েছে সেগুলো ভাঙতেই হবে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ অন্তত পানের হাট বাজার যদি সময়মতো লাগতে দেওয়া হতো ও কোন ধরনের তাবড়া তাবড়ি না থাকতো তাহলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার আসতো যার কারনে পানের চাহীদা থাকতো এতে করে আমরা পান বিক্রি করে আমরা খানিকটা লাভবান হতাম।
হিলি বাজারের পান ব্যবসায়ী বুলন হোসেন বলেন, হাটে পানের আমদানি বেশ ভালো রয়েছে কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে বাহিরের পাইকাররা আসতে পারছেননা যার কারনে চাহীদা কম থাকায় পানের দাম কম। গতবছর যে পান ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পোয়া বিক্রি হয়েছিল এখন সে পান আড়াইহাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর পরেও প্রশাসনের কারনে ভয়ে ভয়ে তেমনভাবে হাটও লাগছেনা যার কারনে গৃহস্থরা তেমনভাবে আসতে পারছেনা তেমনি পাইকাররাও আসতে পারছেনা যার কারনে পানের দাম খানিকটা কম।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা নাজনীন বলেন, উৎপাদন খরচ হওয়ায় ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় হাকিমপুর উপজেলায় পানের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। গতবছর এই উপজেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হলেও এবারে তা খানিকটা বেড়ে ৩৬ হেক্টর জমিতে ৩৫৫টি বরজে পানের আবাদ হয়েছে। পানের বর্তমান অবস্থা ভালো, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পানের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে কৃষকদের সবধরনের পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রামন রোধে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যব্যাতিত মানুষের জনসমাগম হয় এই ধরনের হাটবাজার সহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এটা শুধু হিলিতে নয় সারাদেশ ব্যাপী এমন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। আমাদের এলাকার পানচাষী যারা রয়েছেন তারা হিলিসহ বিরামপুর হাটে গিয়ে পান বিক্রি করতেন। আমাদের যেহেতু কাঁচাবাজার দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা এই সময়ের মধ্যে তারা যদি তাদের পানগুলো বিক্রি করতে পারেন এতে করে তারা যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সেটি লাঘোব হবে। তবে পানচাষীদের ক্ষতির বিষয়ে কোন সিন্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে তাদের মধ্যে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, না খেয়ে থাকে দরিদ্র অসহায় হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/পিআর