সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা হাকিমপুর। এ উপজেলায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব। পারিশ্রমিক ছাড়া খড়ের বিনিময়ে ধানগুলো কেটে দিচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে করে শ্রমিক-মালিক উভয়ই খুশি। ধান কাটা শেষে আগাম জাতের আলুর জমি প্রস্তুত করবেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় আট হাজার ১১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আগাম জটাবাড়ি ধান রোপণ হয়েছে দুই হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া এই এলাকায় এবার আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিলির কয়েকটি মাঠে আগাম আলু চাষ করে থাকেন এলাকার কৃষকরা। বিশেষ করে উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের শাখা যমুনা নদীর তীরঘেঁষা মাধবপাড়া মাঠে। এই এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই এখন ধান কাটার আমেজ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা এই ধানের নাম দিয়েছেন জটাবাড়ি।
মাধবপাড়া এলাকার কৃষক জাহিদ ইকবাল রানা বলেন, আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে এই এলাকায় জটাবাড়ি ধান চাষ করে আসছি। এবার আমি ছয় বিঘা জমিতে এই ধান রোপণ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হয়েছে ১৬-১৮ মণ। প্রতিমণ ধান ৯৫০-১০০০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করেছি। এতে করে আমাদের মাঠে তিনটি ফসলের চাষ হচ্ছে।
একই এলাকার হবিবর রহমান বলেন, আমি এবার ১৮ বিঘা জমিতে জটাবাড়ি ধান রোপণ করেছি। মাঠে ধানের ফলন ভালোই। প্রায় তিন লাখ টাকার ধান বিক্রি করেছি। তবে শ্রমিকদের কোনো মজুরি দিতে হয়নি। তারা ধানের কাচা খড়ের বিনিময়ে জমির ধান কেটে দিয়েছেন।
কথা হয় কৃষি শ্রমিক ডাবলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গ্রামের ১০ জন মিলে একটি দল করে এলাকাবাসীর জটাবাড়ি ধান কেটে দেই। এতে বিনিময়ে ধানের কাঁচা খড়গুলো আমরা নিয়ে বাজারে বিক্রি করি। এতে করে যে আয় হয় তা দিয়েই সংসার ভালোই চলে।
বিরামপুর এলাকার কাজেম হোসেন নামের আরেক শ্রমিক বলেন, বর্তমানে আমাদের এলাকায় কাজের চাহিদা কম। এ কারণে আমরা এখানে এসে ধান কাটার কাজ করছি। চাষিদের কাছ থেকে নেওয়া ধানের গাছগুলো বাজারে ৩০০ টাকা ‘শ’ হিসেবে বিক্রি করি। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫শ থেকে ১৬শ আঁটি কাঁচা ধানের চারা উৎপাদন হচ্ছে। এতে বিঘাপ্রতি খড় প্রায় ৪৫০০ টাকা বিক্রি হয়।
ইমরান হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, এলাকার অনেকেই জটাবাড়ি ধান রোপণ করলেও আমি মাঠে হাইব্রিড ধান রোপণ করেছি। এরই মধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ধানের বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। এতে করে এবার ধান আবাদে অনেকটা লোকসান গুনতে হবে।
জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজিনা বেগম জানান, উপজেলার বেশ কয়েকটি মাঠে আগাম জাতের জটাবাড়ি ধানের চাষ হয়। বিশেষ করে এই ধান কাটার পর চাষিরা সেই জমিতে আলু আবাদ করে থাকেন। জটাবাড়ি স্থানীয়দের দেওয়া একটি নাম। এই ধানটি হাওড় এলাকায় বেশি আবাদ হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এবি