লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। সব ঠিক থাকলে শিগগরই লেবাননে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেবে ইসরায়েল।
আপতত এই বিরতির মেয়াদ হবে ২ মাস। পরে পরিস্থিতি সাপেক্ষে এই মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একজন সদস্য।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উদ্যোগ আর প্রচেষ্টার ফলাফল সম্ভাব্য এই যুদ্ধবিরতি; তবে যেহেতু ওই অঞ্চলের অবস্থা এমন যে যেকোনো সময় যে কোনো ঘটনা সার্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স— উভয়ই এ ইস্যুতে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিয়ষক মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “সবকিছু ঘটার আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলার সুযোগ নেই, তবেক আমরা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি রয়েছি।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও প্রায় একই তথ্য জানানো হয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির কোনো শর্ত নিয়ে আপত্তি নেই বৈরুতেরও। চুক্তির যে খসড়াটি লেবাননের দেওয়া হয়েছিল, তা ইতোমধ্যে বৈরুত অনুমোদন করেছে জানিয়েছে সরকারের চারটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র।
চুক্তিতে কী কী শর্ত রয়েছে— সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে এই আভাস পাওয়া গেছে যে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যুদ্ধবিরতির সময় শান্তি সংলাপ চলবে দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে।
সংলাপে লেবানন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি। মূলত হিজবুল্লাহর সঙ্গে নাবিহর মিত্রতার কারণেই তাকে প্রতিনিধি দলের প্রধান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইরানের সমর্থন ও মদতপুষ্ট হিজবুল্লাহ বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। লেবাননভিত্তিক এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাশেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এ অঞ্চলটি হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি এবং গোষ্ঠীটির অধিকাংশ সামরিক স্থাপনার অবস্থান এখানে। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ।
পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও। গত এক বছরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে লেবাননে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৫ শতাধিক। তবে আইডিএফের দাবি, এই নিহতদের মধ্যে অন্তত ৯৪০ জন হিজবুল্লাহ কমান্ডার ও যোদ্ধা রয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। প্রায় ১০ দিনের সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এতে গোষ্ঠীটির চেইন অব কমান্ডের সর্বোচ্চ স্তর প্রায় ভেঙে পড়েছে।
বিমান অভিযান পর্বের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে অভিযান শুরু করেছে আইডিএফের স্থল বাহিনী। এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইডিএফ বলেছিল, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে সীমিত ও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ইতোমধ্যে লেবাননে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
সূত্র : রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ