বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
পুলিশের জ্যাকেট পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সাংবাদিক সজীবকে সিলেটের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে রংপুর রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরাতে ফিলিপাইনের সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে কমিশন বদ্ধপরিকর: সিইসি ছাত্রশিবিরের নতুন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ১২ কর্মকর্তা ১৯ জন উদ্ধার না হতেই ফের ৭ অপহরণ! স্লোগানে উত্তাল শহীদ মিনার, শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি নতুন বছরে দেশবাসীর জন্য তারেক রহমানের বার্তা ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে শামীমের লড়াই, তবু খুলনার কাছে হার চট্টগ্রামের দেশ কোনো দলকে ইজারা দেওয়া হয়নি : ধর্ম উপদেষ্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিলামের পণ্য কেনা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মেরামত করতে আরেকবার যুদ্ধে অংশ নিতে হবে ৫৫ বছরে বাগদান সারলেন সোহেল তাজ, জানা গেল পাত্রীর পরিচয় পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত থার্টিফার্স্ট নাইটে বন্ধ থাকবে বার, করা যাবে না নাচ-গান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাড়িবহরে হামলা, আহত ২০ গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল চব্বিশের অভ্যুত্থানে অন্যতম সহযোদ্ধা ছিল ছাত্রশিবির: সারজিস আলম বিপ্লব নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র থেমে নেই: মঞ্জুরুল ইসলাম

হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে ♦ সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দেশে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা।ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণের (পিপিই) সংকটের মধ্যেই এখন পর্যন্ত তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তবে বিপত্তি ঘটছে লক্ষণ গোপন করে হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের নিয়ে। অনেকে তথ্য গোপন করে হাসপাতালে যাওয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল তাদের সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আর সরকারি হাসপাতালগুলো চালু থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। ফলে অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে দেশের হাসপাতাল ব্যবস্থা এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম।

অপদিকে, করোনাভাইরানে আক্রান্ত রোগিদের সেবা দিতে যেয়ে এখন পর্যন্ত দেশে করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালনকারী প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক এবং ৫৭ জন নার্স প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।এমন অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই আতঙ্কিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা। তাদেরকে করোনা যুদ্ধে ‘সম্মুখ সারির যোদ্ধা’ বলা হলেও পর্যাপ্ত ঢাল-তলোয়ার বা বর্ম পড়িয়ে আগেভাগেই প্রস্তুত না করার কারণে তারা নিজেরাই ঘায়েল হচ্ছেন বলে আক্ষেপ করছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরূপম দাশ জানিয়েছেন, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে ১২ জন, ময়মনসিংহে ৭ জন এবং গাজীপুরের কালিগঞ্জে ৬ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা অন্যান্য জেলার।’

এ ছাড়া, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিন আছেন বলেও তিনি জানান। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা নিম্নমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামকে (পিপিই) দায়ী করছেন নিরুপম দাস।তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “এই সংখ্যা যদি এভাবেই বাড়তে থাকে তবে রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য কোনো ডাক্তার থাকবে না।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হচ্ছেন বংলাদেশে করোনা যুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী প্রথম চিকিৎসক।

এদিকে, কভিড-১৯ উপসর্গ গোপন করে গত বুধবার রাজধানীর শ্যামলীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে চিকিৎসা নিতে আসেন এক বদ্ধ। দুদিন চিকিৎসার পর পরীক্ষায় তার শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্তত ১৩ স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়েছে, যার মধ্যে একজন এরই মধ্যে জ্বরাক্রান্ত।

বাংলাদেশে প্রথম কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এ রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা আছে।কিন্তু পরীক্ষার অপ্রতুলতার কারণেও আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা নিতে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ভিড় করছে অসংখ্য মানুষ। ফলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ অন্যদেরও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করছেন এসব রোগী।

চিকিৎসকরা বলছেন, পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই চিকিৎসকদের সেবা দিতে হচ্ছে। রয়েছে পিপিইর সংকট।একই পিপিই একাধিক চিকিৎসককে ব্যবহার করতে হচ্ছে। সরবরাহ করা হয়নি এন৯৫ বা সমমানের কোনো মাস্ক। অথচ বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের মতো চিকিৎসকরাও ব্যাপক হারে সংক্রমিত হচ্ছেন নভেল করোনাভাইরাসে।

চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদেরও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নার্সদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটির হিসাবে, এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ৫৭ জন নার্সের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে আছেন আরো প্রায় ২৭০ জন নার্স।

আর গত শুক্রবার পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এমন হাসপাতালের সংখ্যা সারা দেশে ২৪টি। এর মধ্যে সারা দেশে ১৪টি সরকারি হাসপাতাল ও রাজধানী ঢাকার ১০টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভারকেয়ার হসপিটাল (এ্যাপোলো হসপিটাল), বারডেম জেনারল হাসপাতাল, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হসপিটাল, আজগর আলী হসপিটাল, মিরপুরের ডেল্টা হসপিটাল, মগবাজারের ইনসাফ বারাকা হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইমপালস্ হাসপাতাল এবং গাজীপুরের কেপিজে হাসপাতাল।

উপসর্গ গোপন করে আসা রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধও হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল প্রথম রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের দুজন নার্সের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে চিকিৎসকসহ সর্বমোট ৬২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই পরীক্ষা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)। পরীক্ষায় দুজন চিকিৎসকসহ ১৩ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এলে বেসরকারি এই হাসপাতালটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডিএমডি আলতাব হোসেন জানান, একজন নার্সের জ্বর আসার পর তাকে প্রথমে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের এখন কোনো উপসর্গ নেই। সবাই সুস্থ আছেন। বর্তমানে তারা ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালেই অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

একই দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের একটি সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হার্টের সমস্যার কথা জানিয়ে ১৩ এপ্রিল এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। কভিড-১৯ সংক্রমণের বিষয়টি গোপন করলেও পরবর্তী সময়ে তা জানাজানি হলে হাসপাতালটির একটি সিসিইউ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া চিকিৎসক ও নার্সদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

১৫ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালের চার চিকিৎসক ও দুই নার্সের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর দুটি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।ইমপালস হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার ডাক্তার খাদিজা জুমা চারজন চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গাইনি ও সার্জারি বিভাগ লকডাউন করা হয়েছে।

রোগীরা কভিড-১৯ এর উপসর্গ গোপন করায় শুধু বেসরকারি হাসপাতালগুলোই নয়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন দেশের ১৪টি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল।

এর বাইরে নেত্রকোনার কালিয়াঝুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের কালিগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নরসিংদী ১০০ বেড সদর হাসপাতাল। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে কোনো এন৯৫ মাস্ক দেয়া হয়নি। সার্জিক্যাল মাস্ক যা দেয়া হয়েছে, সেগুলোর সংখ্যাও অপ্রতুল। আবার ডিসপোজেবল পিপিই সরবরাহ করে সেগুলো আবার ধুয়ে ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। সেগুলোও সংখ্যায় খুব কম। কিন্তু প্রায়ই কভিড-১৯ এর উপসর্গ গোপন করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনজন নার্সের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর পর থেকে অন্য নার্সরাও তাদের কার্যক্রম সীমিত করে এনেছেন।

এদিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক, নার্স ও তাদের স্বজনসহ আরো ২৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম সরকার জানান, কভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক, নার্স, অন্য বিভাগের কর্মী ও তাদের স্বজনরা রয়েছেন। আক্রান্ত সবাই আইসোলেশনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের গাইডলাইন আছে, একইভাবে হাসপাতাল কীভাবে পরিচালিত হবে তারও গাইডলাইন আছে। গাইডলাইনগুলো লক্ষ করলে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।আর এ বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তারও গাইডলাইন আছে। অর্থাৎ কতজন চিকিৎসক রিজার্ভ থাকবে, কতজন ডিউটি করবে—তা বলা আছে। অবশ্যই সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে, চিকিৎসকরা সম্মুখসারিতে আছেন, তাদের যথাযথ সুরক্ষিত থাকতে হবে। তা না হলে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, এসব বিষয়ে কমিটি আছে। সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার এই দূর্বলতার পরও স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যেভাবে বক্তব্য রাখছেন তাতে চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।এই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎস। এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ  তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগে কর্মরত মেডিকেল অফিসার আবু তাহের ১৬ই এপ্রিল তার ফেসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তার বিভাগের চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় মাস্ক এবং সুরক্ষা উপকরণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।মাস্ক ও সুরক্ষা উপকরণ মজুদ রাখা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ঐ স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে শনিবার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের দপ্তর থেকে আবু তাহেরের নামে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ জারি করা হয়।চিকিৎসক আবু তাহের স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগকে ‘শিষ্টাচার বর্জিত শব্দ প্রয়োগ’ করে অভিযুক্ত করার ‘অপচেষ্টা’ চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয় নোটিশে।

আবু তাহেরের ঐ স্ট্যাটাস ‘সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোনো শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে বা অন্যকে প্ররোচিত করতে’ পারে অভিযোগ তুলে তার নামে জারি করা হয় ঐ নোটিশ।

চিকিৎসক আবু তাহের তার স্ট্যাটাসে লেখেন: “এখন পর্যন্ত আমি সহ আমার ডিপার্টমেন্ট এর কেউ ১টিও n95/kn95/ffp2 মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্থ্য সচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি n95 ইকোয়িভেলেন্ট মাস্ক দিচ্ছেন? এই মিথ্যাচার এর শাস্তি কি হবে?” এছাড়া তার বিভাগে ৮ জন চিকিৎসকের জন্য ২টি পিপিই দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন।

 তিনি বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দরকার, যেহেতু আমাদের রোগীর মুখের সবচেয়ে কাছে থেকে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমাদের বিভাগে এসব সুরক্ষা উপকরণ দেয়া হচ্ছে না।” তিনি মনে করেন সুরক্ষা উপকরণ না থাকায় চিকিৎসকরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, তেমনি অসুরক্ষিত অবস্থায় বহু রোগীকে চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসকরাও অন্য রোগীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।

আবু তাহের বলেন, “আমাদের মত দেশে সরকার সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীকে সব ধরনের সুরক্ষা উপকরণ দিতে পারবে না, এটা স্বাভাবিক। সেই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমরা চিকিৎসা দেই। কিন্তু তাহলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার করছে যে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ মজুদ আছে?”

এ ব্যপারে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশটিতে আবু তাহেরের অভিযোগকে মিথ্যাচার হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয়- নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড, ফ্লু কর্ণার, জরুরি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ ও শিশু বিভাগসহ সব বিভাগে কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই সহ যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

তবে ঐ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা একজন চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী নতুন পিপিই পেলেও যথাযথ মাস্কের অভাবে তারা অনিরাপদ অবস্থাতেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।ঐ চিকিৎসক বলেন, “আমাদের বিভাগে যথেষ্ট পিপিই থাকলেও আমরা সাধারণ মানের একটি মাস্ক ব্যবহার করি, যা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়।”

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

 

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com