বাংলা৭১নিউজ,(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। বৃহস্পতিবার (২১ মে) দিবাগত মধ্যরাতে হালদা নদীর কয়েকটি স্পটে নমুনা ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘হালদা নদীর কাগতিয়ার মুখ থেকে গড়দুয়ারা নয়াহাট পর্যন্ত বিভিন্ন নৌকার ডিম সংগ্রহকারীরা জানাচ্ছেন, তারা প্রতি জালে ১০০-১৫০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম পাচ্ছেন, তাদের ভাষ্যমতে এগুলো নমুনা ডিম।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, বুধবার (২০ মে) রাতে বৃষ্টিতে পুরোদমে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ ছিল। এরপরও এদিন মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে শিগগিরই মা মাছগুলো পুরোদমে ডিম ছাড়বে।
স্থানীয়রা জানান, এবার মা মাছ রক্ষায় হালদা নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করায় ডিম সংগ্রহ গতবারের চেয়ে বেশি হতে পারে।
হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা এলাকার বাসিন্দা জানে আলম বলেন, ‘বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রাতে বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টিতে হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমরা রাত ৯টা থেকে ডিম সংগ্রহ করার জন্য হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করেছিলাম। কিন্তু এদিন মা মাছগুলো পুরোদমে ডিম ছাড়েনি। তবে আজ সামান্য কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাধারণত মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে শিগগিরই মা মাছগুলো পুরোদমে ডিম ছাড়বে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবশ্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতের আভাস।
মাছ আগে নমুনা ডিম ছেড়ে পরীক্ষা করে নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ আছে কিনা। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে। পাহাড়ি ঢল, ব্রজসহ বৃষ্টি, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, পূর্ণিমা, অমবশ্যার তিথিতে মূলত মা মাছ ডিম ছাড়ে, এখন সে ধরনের অনুকূল পরিবেশ আছে।
হালদা থেকে গত বছর ১০ হাজার ২০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবছর অনাবৃষ্টি, মা মাছের মৃত্যু, দূষণ, চলমান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজে ড্রেজার ও নৌযান চলাচল বৃদ্ধি এবং ‘কুম’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। তবে এবার প্রকৃতি ‘সদয়’ থাকলে আরও বেশি ডিম ও রেণু মিলত বলে ধারণা তাদের।
বাংলা৭১নিউজ/জেআই