বাংলা৭১নিউজ, মোঃ মনজুর-ই-মওলা সাব্বির, নাটোর প্রতিনিধি : উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শস্যভান্ডার বলে খ্যাত নাটোর জেলার কৃষকগণ চলতি মৌসুমের ইরি বোরোর চাষাবাদ প্রায় শেষ করেছেন। এবারের প্রচন্ড শীতে চারা নষ্ট হওয়ার কারণে বোরো চাষাবাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা দূর হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি বছর নাটোর জেলার ৫৫ হাজার ৫৩৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কওে, যা থেকে প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। নাটোরের চলনবিল ও হালতি বিল অঞ্চলের কৃষকদের কাছে প্রধান ফসল হলো বোরো ধান। বন্যার পানিতে আসা পলি পড়ে জমির উর্বরা শক্তি বেড়ে যাওয়ায় বোরো ধানে ব্যাপক ফলন পায় কৃষকরা। এবারের দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকরা বুক ভরা স্বপ্ন আর অনেক আশা নিয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন। বাজারে ধান চালের দাম এখন পর্যন্ত অনেকটা বেশি থাকায় তাদের আশা ভরসার মাত্রাও বেড়ে গেছে অনেকখানি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোর জেলার সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩হাজার ৫০০জন দুঃস্থ কৃষকের প্রত্যেককে ৫কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে প্রদান করেছে বোরো চাষাবাদের প্রণোদনা হিসেবে। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মওসুমের বোরো চাষাবাদ সন্তোষ জনকভাবে শেষ হয়েছে। আশা করা যায় উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
নাটোর জেলায় বোরো মওসুমে যেসব ধানের চাষাবাদ বেশি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে সরু জাতের জিরাশাইল ও মিনিকেট এবং অপেক্ষাকৃত কম সরু জাতের ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ ধান। এ জাতগুলো অধিক উৎপাদনের জন্যও বেশ জনপ্রিয়। চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার কুমিরা গ্রামের আদর্শ কৃষক জুলফিকার আলম তারা জানান, চলতি মওসুমে তিনি ১৭ বিঘা জমিতে ঝড়বৃষ্টি সহনীয় ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ জাতের ধান চাষ করেছেন, যার প্রতি বিঘা থেকে তিনি গড়ে ৩০ মণ করে ধানের ফলন আশা করছেন।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি বিলের বাঁশিলা, সোনাপাতিল, তেঘরিয়া, মাধনগর খোলাড়িয়া, হালতি ও পাটুল গ্রামের শত শত হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষাবাদে ব্যাপক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হালতি বিলের খোলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত জিয়া খালের ১৫টি অংশে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে পুকুর তৈরী কওে মাছ চাষ করায় বন্যার পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে এসব গ্রামের শত শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষে প্রতি বছর দেখা দিচ্ছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। এসব গ্রামের শতশত কৃষক তাদের একমাত্র ফসল বোরো ধান চাষের জন্য জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছিলেন।
এ প্রেক্ষিতে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের নির্দেশে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মুহঃ রেজা হাসান গত সপ্তাহে নিজে উপস্থিত থেকে দকলকৃত খালে তৈরী করা পুকুরের বাধঁগুলো কেটে দিয়ে আটকে থাকা পানি বের করে দেন। এরপরে ঐ গ্রামগুলোর কৃষকগণ তাদেও জমিতে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১ মাস পর বোরো ধানের চাষাবাদ শেষ করেছেন।
প্রশাসনের এমন মহৎ উদ্যোগে গ্রামবাসীরা খুবই আনন্দিত। তারা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আবেদন জানিয়েছেন। খোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মাকসুদুর রহমান জানান, খালে অবৈধ ভাবে পুকুর তৈরী ছাড়াও বিলে জলাবদ্ধতার আরও একটি কারণ হলো সোঁতিজাল পেতে মাছ শিকার। মাছ শিকারীরা খালে বাঁধ দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকারের জন্য সোঁতিজাল পাতায় তা পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে মারাত্মক ভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
তিনি মনে করেন হালতি বিল অঞ্চলের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস বোরো ধান চাষাবাদ স্বাভাবিক সময়ে শুরু করা এবং মাছের বিভিন্ন প্রজাতি নির্বিচারে নিধন বন্ধ করার জন্য সোঁতিজাল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। মাকসুদুর রহমান আশা প্রকাশ করেন দেরীতে হলেও নাটোরের আবাদযোগ্য প্রায় সকল জমিতেই যেহেতু বোরো চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে সেহেতু এবার উৎপাদনও অনেক বেশি হবে ইনশা আল্লাহ্ ।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস