শারীরিক অক্ষমতা কাউকে পিছিয়ে রাখে না। বরং সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন মনোবল ও সাহস। আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রম থাকলে সব ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।
বিশ্বে এমনও অনেক ব্যক্তি আছেন যারা দু’হাত ছাড়াই জীবনযাপন করছেন। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও তারা কিন্তু থেমে নেই। কেউ পা দিয়ে বিমান চালাচ্ছেন, আবার কেউ পা দিয়ে ছবি আঁকছেন এমনকি পা দিয়ে গাড়িও চালাচ্ছেন।
ঠিক তেমনই একজন হলেন বারটেক ওস্টালোভস্কি। পোল্যান্ডে বসবাসকারী এই ব্যক্তি ২০০৬ সালে এক মারাত্মক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দু’হাত হারান। মাত্র ২০ বছর বয়সেই পঙ্গুত্ববরণ করেন তিনি।
তবে তিনি দমে যাননি। বরং নিজেকে নতুন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। শত বাঁধার সম্মুখীন হয়েও তিনি আজ একজন পেশাদার স্পোর্টস ড্রাইভার। ডজনখানেকেরও বেশি কার রেসিংয়ে জিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
জানলে অবাক হবেন, তিনিই বিশ্বের একমাত্র হাতছাড়া পেশাদার স্পোর্টস কার ড্রাইভার। দুই পা দিয়েই স্পোর্টস কার চালিয়ে রেস জিতে নজির সৃষ্টি করেছেন বারটেক ওস্টালোভস্কি।
এই পোলিশ ড্রাইভার প্যাডেল নিয়ন্ত্রণে তার ডান পা ব্যবহার করেন। আর বাম পা দিয়ে স্টিয়ারিং ধরেন। বারটেক ওস্টালোভস্কি জানান, ‘দুর্ঘটনায় দু’হাত হারানোর পর আমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। নিজেকেই প্রশ্ন করি, কীভাবে এগিয়ে যাব আমি?’
‘অতঃপর পোল্যান্ডে আমার মতোই একজনের কথা শুনি, যারা দু’হাত ছিল না। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চালান। এরপর তার সঙ্গে দেখা করি। এরপর পা দিয়ে ড্রাইভিং শিখি।’
টানা তিন বছর কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে রেসিং কার চালানো শেখেন তিনি। এরপর একদিন মনের জোর আর প্রবল সাহস নিয়ে রেসিং করার সিদ্ধান্ত নেন বারটেক ওস্টালোভস্কি।
পোলিশ রেসিং সার্কিটের তালিকায় নিজের নাম লেখান। জানলে অবাক হবেন, বারটেক ওস্টালোভস্কি বড় এক চ্যালেঞ্জ ‘ড্রিফট রেসিং’ করার সিদ্ধান্ত নেন।
যদি আপনি ড্রিফট রেসিংয়ের বিষয়ে জানেন, তাহলে নিশ্চয়ই বুঝবেন সেটি কতটা কঠিন। ট্র্যাকের চারপাশে স্কিড করার সময় গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। এক্ষেত্রে চোখ ও হাতের সমন্বয় দরকার হয়। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জীবনের প্রথম ড্রিফট রেসিং জেতেন তিনি।
২০১৯ সালে বারটেক ওস্টালোভস্কি পোলিশ ড্রিফট চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০ জন চালকের মধ্যে নবম স্থান অধিকার করেন। যা সমগ্র ইউরোপের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ।
এর আগের বছর বারটেক ওস্টালোভস্কি আন্তর্জাতিক চেক ড্রিফট সিরিজও জিতেছেন। এছাড়াও ডজনখানেকেরও বেশি রেসে অংশগ্রহণ করে অনেক পুরস্কার ও সম্মান জিতেছেন তিনি।
বারটেক ওস্টালোভস্কি সত্যিকারের হিরো হিসেবে তকমা পেয়েছেন। সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুপ্রেরণা তিনি। ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয় তা প্রমাণ করেছেন এই সাহসী ব্যক্তি।
অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশ্যে বারটেক বলেন, ‘অবশ্যই আমি অন্যান্যদেরকে মোটরস্পোর্টে যুক্ত হতে উৎসাহিত করি। আপনার স্বপ্নকে সত্যি করে তুলুন।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ