বাংলা৭১নিউজ, রাজশাহী প্রতিনিধি: ছাড়পত্র দিয়ে দেয়ার কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়েছে ছাত্রলীগ নেতার হাতুড়িপেটায় পা ভাঙা তরিকুল ইসলামকে। কিন্তু তিনি সুস্থ বোঝ করছেন না। এই অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
লাঠির ক্রমাগত আঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এই ছাত্রের গায়ের প্রচ- ব্যাথা কিছুটা কমে এসেছে। তবে পায়ের ব্যাথায় এখনও তিনি কাতর।
রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ‘রয়্যাল হাসপাতালে’ চিকিৎসক সাঈদ আহমেদ বাবুর তত্বাবধানে তরিকুলের চিকিৎসা চলছে। এই চিকিৎসক বলছেন, হাতুড়িপেটায় তরিকুলের ভেঙে যাওয়া ডান পায়ের হাড় জোড়া লাগতে লম্বা সময় প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসক সাঈদ জানান, শুক্রবার সকালে তারা তরিকুলের এক্সরেসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করেছেন। সবগুলোর রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। এগুলো পেলেই তাকে হাসপাতালে কতদিন থাকতে হবে বা অস্ত্রোপচার লাগবে কি না।
তবে রাজশাহী মেডিকেলের অর্থোপেডিক বিভাগ তরিকুলের আঘাতকে জটিল মনে করেনি। তাই হাসপাতালে ভর্তির দুই দিন পরই বৃহস্পতিবার তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
তরিকুলের ছোট বোন ফাতেমা খাতুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিলাম। ডাক্তাররা কথা শোনেননি। জোর করেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কেন এমন করা হলো, আমরা জানি না। ছুটি দেওয়ার পর বিকালে ভাইয়াকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি।’
ঢাকায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতাদের পিটুনির প্রতিবাদে গত সোমবার বিকেলে পতাকা মিছিল বের করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি রাবির প্রধান ফটকের সামনে গেলে রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখনই মাটিতে পেটানো হয় তরিকুলকে। ক্রমাগত লাঠির আঘাতের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ-আল-মামুনকে হাতুড়ি সদৃশ একটি বস্তু দিয়ে তরিকুলকে পেটাতে দেখা যায়।
পিটুনিতে তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায়। সেদিন রাজশাহী মেডিকেল লেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথায় সেলাই পড়ে নয়টি। পুরো পা প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। এখনও তিন-চারজন না ধরলে উঠে বসতে পারেন না তরিকুল। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান এমএকে শামস্ উদ্দিনের বক্তব্য, ‘যা যা চিকিৎসা প্রয়োজন তা দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ হাসপাতালে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই তরিকুলকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।’
শুক্রবার রয়্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তরিকুল বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলা হয়েছে। যখন ছুটি দেওয়া হয়, তখন অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তবু ছুটি দেওয়া হয়।’
‘এখানে আসার পর শরীরের ব্যাথাটা একটু কমেছে। কিন্তু পা নড়াতে পারছি না। তবে শরীরের ব্যাথা কমায় এখন কিছুটা ভালো লাগছে।’
তরিকুল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সুন্দরখোল উত্তরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তরিকুলের বাবা বাবা খোরশেদ আলম একজন কৃষক। তিন ভাই বোনের মধ্যে তরিকুল মেজ।
বাবা খোরশেদ আলম ও মা তাহমিনা বেগম এখনও রাজশাহী আসতে পারেননি । বোন ফাতেমা ও বন্ধুরাই তরিকুলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
তরিকুলের মতোই ঢাকায় চাত্রলীগের পিটুনিতে আহত কোটা নিয়ে আন্দোলন করা সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম নুরকেও একটি বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা শেষ না করেই ছেড়ে দেয়। অভিযোগ উঠে চাপের মুখে তাকে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সৌজন্যে: রিমন রহমান, ঢাকাটাইমস।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস