বাংলা৭১নিউজ, এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
নেত্রকোনার হাওর জুড়ে এখন পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ। নতুন ধান ঘরে তুলার স্বপ্নে বিভোর হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে ধাকায়, ধান ক্ষেতে রোগ বালাইয়ের প্রকোপ দেখা না দেয়ায় এবং কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাত আগাম রোপন করায় এসব ধান পেকেছেও আগে। ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে হাওরে ধান কাটা শুরু হবে। গত বছর আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলের কৃষকরা এক মুঠো ধানও গোলায় তুলতে না পারলেও চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপুতা হাওরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা মনের আনন্দে ধান কাটছেন। মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া জানান, ‘হাওরে ধান কাটা লেগেছে। আমি ১০ একর জমিতে ধান লাগাইছি, বুধবার ৫ কাটা জমির ধান কাইট্যা বাড়িত আনছি’। হাওরের একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, হাওরাঞ্চলের বেশীর ভাগ এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। বিশেষ করে বড় কৃষকরা পড়েছেন বেকায়দায়। অগ্রিম টাকা দিয়েও ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তি করতে পারছেন না তারা।
শেওড়াতলী গ্রামের কাঞ্চন মিয়া জানান, সকাল থেকেই কৃষকরা ধান কাটার যন্ত্র নিয়ে হাওরে যাচ্ছে। আর কৃষানীরা তাদের সোনালী ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তেতুলিয়া গ্রামের জব্বার মিয়া জানান, ধান কাটা শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেরাই ক্ষেতের ধান কাটছেন। বিকালে মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করবেন। এবার কাটা প্রতি ৫/৬ মন ধান পাওয়া যাবে। বরান্তর গ্রামের জুয়েল মিয়া জানান, গত বছর ফসল হারিয়ে হাওরের কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। এবার ভালয় ভালয় ফসল ঘরে তুলতে পারলে কৃষকদের দুঃখ দুদর্শা লাঘব হবে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৫ শত হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯ শত হেক্টর জমি। জেলার হাওর উপজেলা হিসাবে চিহ্নিত খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা, আটপাড়া এবং বারহাট্টা উপজেলার কিয়দংশ এলাকাজুড়ে হাওরে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান রোপন করা হয়। ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। আর ব্রি-২৯ জাতের ধান আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে কাটা শুরু হবে। কারণ ব্রি-২৯ জাতের ধান একটু উঁচু জমিতে লাগানো হয়েছে এবং এর ফলনও একটু দেরীতে হয়।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, এবার নেত্রকোনায় হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা জন্য ১৬ কোটে টাকা ব্যায়ে ৭৩টি পিআইসি’র মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সরকারের পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্থ হাওরাঞ্চলের কৃষকদের কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি’র আওতায় উন্নতমানের বীজ, সার ও কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান করায় হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শেষ মূহুর্তে আগাম বন্যা না হলে হাওরের কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি ইতিমধ্যেই খালিয়াজুরী এবং মোহনগঞ্জের হাওর এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। বেশ কিছুদিন আগেই হাওরের ফসল রক্ষা বাধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এসকল বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর মনিটরিং করায় এবার বাঁধের নির্মাণ কাজ অনেক ভাল হয়েছে। আগাম বন্যা হলেও এখন ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্বিপাক না হলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস