বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের হিসাব দাখিল না করার (নন-সাবশিন) মামলায় হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের তিন বছর সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ আগামী ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রের অনুকূলে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আসামির হাজতবাস মূল দন্ডাদেশ থেকে বাদ যাবে।
আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় জেসমিন ইসলামকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর জেসমিন ইসলামের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। অপরদিকে দুদকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন মাহমুদ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন আদালত। এই প্রথম হলমার্ক গ্রুপের কোনো ব্যক্তির সাজার রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, সুনিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করে দুদক। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর দুদকের উপসহকারী পরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির হলমার্ক গ্রুপের অফিসে গিয়ে গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আসামির স্বাক্ষরপূর্বক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশের কপি জারি করেন। এরপর ২৪ নভেম্বর জেসমিন ইসলাম তার আইনজীবী মো. আফাজুল হকের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য সময় আবেদন করেন।
পরবর্তীতে কমিশন থেকে আসামিকে আরও সাত কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপরও আসামি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি। এজন্য ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় জেসমিন ইসলামের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর এ মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে দুদক। মামলায় চার্জশিটভুক্ত সাত সাক্ষীর মধ্যে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৭ জুন সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন করপোরেট শাখায় (বর্তমানে রূপসী বাংলা) ঋণ জালিয়াতির সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরে দুই দফায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। তাতে হলামর্ক গ্রুপ ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট তিন হাজার ৬৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।
অনুসন্ধান শেষে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় হলমার্ক গ্রুপ কর্তৃক ফান্ডেড এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা করে দুদক। মামলাগুলোয় হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ডিজিএম এ কে এম আজিজুর রহমানসহ মোট ২৭ জনকে আসামি করা হয়।
পরবর্তী সময়ে দুজন মারা যাওয়ায় ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন। পরবর্তীতে ওই ১১টি মামলা বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলি করা হয়। বর্তমানে এ আদালতেই মামলাগুলোর বিচার কাজ চলছে।
বাংলা৭১নিউজ/বিএনসি