বাংলা৭১নিউজ, মোঃ মনজুর-ই-মওলা সাব্বির, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়ার চলনবিল অধ্যূষিত প্রত্যন্ত গ্রাম তিরাইলে একটি হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় এবং বাদীর সাথে আপোস করার চেষ্টার অভিযোগ এনে ওই আট পরিবারকে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে। এতে আট কৃষক পরিবারের প্রায় ৫শ’ বিঘা জমির ধান কাটতে দিচ্ছে না মামলার অপর আসামীরা। প্রভাবশালীদের হুমকি ধামকির ফলে জীবন বাঁচাতে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে । ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কৃষকদের পরিবারগুলো সিংড়া থানায় অভিযোগ করলেও এখনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২২ শে আগস্ট সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের আগ তিরাইল পশ্চিম পাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহত হান্নানের ভাই আকরাম আলী বাদি হয়ে ১৮জনকে অভিযুক্ত করে সিংড়া থানায় মামলা করেন। আগ তিরাইল পূর্ব পাড়া গ্রামের মাহাতাব উদ্দিন মাস্টার ও তার ছেলে মজনু এবং ভাতিজা ভট্টু সরদারকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয় মামলায়। মামলার স্বাক্ষী করা হয় আইযুব আলী সহ আগ তিরাইল গ্রামের আরোও পাঁচ পরিবারের সদস্যদের ।
২০১৫ সালে সংঘটিত একটি হত্যাকান্ডের তিন বছর পর হঠাৎ করে এ ঘটনার পর ওই আট জনের বাড়িতে কেউ যেন কাজ না করে ও কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখে সে জন্য চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর বিকেলে পূর্বপাড়া মসজিদের মাইকে মাইকিং করা হয়। চলনবিলের দূর্গম ওই এলাকার আট কৃষক পরিবারের আত্মীয়-স্বজনকেও রাস্তা দিয়ে হাটতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। এদিকে জমির ধান কাটতে না পারায় অনেক ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। ধানগুলো খাওয়ানো হচ্ছে গবাদি পশু ও হাঁস দিয়ে। হুমকির মুখে মাহাতাব উদ্দিন মাস্টার ও তার ছেলে মজনু , ভাতিজা ভট্টু সরদার এবং স্বাক্ষী আইয়ুব আলী সহ অন্যন্য স্বাক্ষীরা গ্রাম থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে । এসব পরিবারে মহিলা ছাড়া আর কোন সদস্য নেই ।হত্যা মামলার আসামী এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসী আসামী হান্নান, রুহুল,বাবু সরদার, সাদ্দাম , শাহীন , শামীম সহ বেশ কয়েকজন মিলে মাইকিং করার পর থেকে জমিতে পালা করে পাহারা দিচ্ছে ।
তবে হাটতে না দেওয়া ও হুমকি দেওয়া হয়নি বলে দাবি করে অপর অভিযুক্ত হান্নান, রুহুল ও বাবু সরদার জানায়, হান্নান হত্যা মামলায় তাদের বাদ দিয়ে মাহতাব উদ্দিন মাস্টার আপোষ করে নেয়ায় তারা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু জানা যায়, আদৌ হত্যা মামলার কোন মিমাংসা করা হয়নি ।
হত্যা মামলার স্বাক্ষী আইয়ুব আলী সরদার জানান, আমি যেন হত্যা মামলায় স্বাক্ষী না দেই এবং বাদীকে মামলা তুলতে বাধ্য করি সেজন্য হত্যা মামলার আসামী হান্নান, রুহুল,বাবু সরদার, সাদ্দাম, শাহীন, শামীম আমাকে হুমকি ধামকিসহ চাপ সৃষ্টি করে । আমি তাতে রাজি না হলে তারা মাইকিং করে আমি সহ ৮ পরিবারকে এক ঘরে করে। আমাদের জমিতে কোন কৃষাণ কাজ না করে সে মর্মে মসজিদের মাইকে মাইকিং করে । ফলে প্রাণভয়ে আমরা গ্রাম ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি ।
ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মাহতাব আলী মাস্টারের আত্মীয় আইয়ুব আলী সরদার গত ৩০ অক্টোবর সিংড়া থানায় জিডি করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পুলিশ। তবে ধান কাটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি এই পুলিশ কর্মকর্তার।
নাটোরের সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান বলেন , আমরা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি । গ্রামের একঘরে পরিবারগুলোর নিরাপত্তা দানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা যেন নির্বিঘেœ ধান কাটতে পারে সে ব্যাপাারে সহযোগিতা করা হবে ।
২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর আগতিরইল পশ্চিম পাড়া গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আব্দুল হান্নানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় হান্নানের ভাই আকরাম আলী বাদি হয়ে ১৮জনকে অভিযুক্ত করে সিংড়া থানায় মামলা করেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস