বাংলা৭১নিউজ,(খুলনা)প্রতিনিধি: মেলা মানে আনন্দ, মেলা মানে খুশি, মেলা মানে হরেক রকম জিনিসপত্রের পসরা। পিকআপ ভ্যানে ঢোল বাজিয়ে খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার প্রচারের মাইকিংয়ে নগরবাসী অতিষ্ঠ। শুধু নগর নয় বিভাগের আশে-পাশের উপজেলাগুলোতে বাণিজ্য মেলায় জনসমাগম ঘটাতে চলছে মাইকিং।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কাট-ছাঁট। ১৭ মার্চ মুজিববর্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় মূল অনুষ্ঠানটি ওই দিন হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও খুলনায় বাণিজ্যমেলা চলছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ১৮ মার্চ (বুধবার) থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করছে সরকার।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজের সম্মেলনকক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ (ডিসি) হেলাল হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
সভায় ওয়াজ মাহফিল বা নামযজ্ঞের ন্যায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দূর হওয়ার পর আয়োজনের জন্য সর্ব সাধারণকে পরামর্শ দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সভাপতি । কিন্তু তার একদিন পরেই বুধবার (১১ মার্চ) খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃক আয়োজিত ১৯তম খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করা হয়।
খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি থেকে মেলার উদ্বোধন করেন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক।
মেলার মাঠে একটি ডিজিটাল ফোয়ারসহ প্রায় দেড় শতাধিক দেশি-বিদেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য শিশুজোন, পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক নামাজের স্থান, অজুখানা, টয়লেট ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোনের ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে ক্রেতা ও দর্শনার্থী সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছে বাণিজ্যমেলা। অথচ চীন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
খুলনার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে গোটা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা জনসমাগম কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তার ব্যতিক্রম খুলনায়। বিশ্বজুড়ে মহাসঙ্কটময় মুহূর্তে একটি অদৃশ্য শক্তির দাপটে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে খুলনা বাণিজ্যমেলায় জনসমাগম বাড়াতে মাইকিং করা হচ্ছে।
তারা বলছেন, খুলনায় কি কোনো প্রশাসন নেই বাণিজ্যমেলা বন্ধের জন্য।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, এ দুর্যোগের মুহূর্তে যারা মেলা চালাচ্ছে তারা অন্যায় করছে। অপরাধ করছে। দেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এজন্য সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যেই বাণিজ্যমেলা কীভাবে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। বিষয়টি প্রশাসনকে দেখার অনুরোধ করছি।
মেলা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মেসার্স চামেলী ট্রেডার্সের মালিক মো. রাসেল মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরা যতটুকু বুঝি বাংলাদেশে এখনো সংক্রমিত হয়নি। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এটা আসলে আতঙ্ক নয় একটা সচেতনতার ব্যাপার। আমরা যদি সচেতন হই আশা করি করোনা ভাইরাস আমাদের আক্রান্ত করতে পারবে না। মেলাতে দর্শকদের জন্য গেটের সামনে আমরা পানি ও হ্যান্ডওয়াশ লিকুইডের ব্যবস্থা করেছি। মেলাতে যখন দর্শনার্থীরা ঢুকবে তারা যেন হাত ধুয়ে ঢোকে তার জন্য আমরা এ ব্যবস্থা রেখেছি। আমরা আসলে বাণিজ্যমেলা করছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পারমিশন হয়। প্রধানমন্ত্রীর যে আহ্বান রয়েছে তা উপেক্ষা করা নয়। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে এ মেলা করছি। সরকার থেকে যদি আমাদের কোনো নির্দেশনা আসে তাহলে আমার মেলা স্থগিত করে দেবো।
সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বার বার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, যেহেতু সোমবার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই আমি বাণিজ্যমেলার বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো তারা মেলার বিষয়ে কি করবে। এ বিষয়ে খুলনা সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্বলিতভাবে মেলা বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। মেলার আয়োজকরা অনেক ইনভেস্ট করেছেন। যাই হোকে যেটা জনগণের জন্য ভালো আমরা সেটাই করবো।
বাংলা৭১নিউজ/এফআর