বাংলা৭১নিউজ, রাজশাহী: রাজশাহীর দুর্গাপুরে ‘না জানিয়ে’ পরিচালনা কমিটির তালিকা করায় স্কুলে ঢুকে পিস্তল উঁচিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার লোকজন।

আজ উপজেলার কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ সরদার ও তার লোকজন এ কাণ্ড ঘটান।

আহতরা হলেন- বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন (৫৫), সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) সাইফুল ইসলাম (৪০) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে রবিউল ইসলাম (৪২)। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্কুলের শিক্ষকরা জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ সরদার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ আরও দুইজনকে মারধর করে তারা।

প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে তালিকা পাঠানো হয়। কিন্তু আবদুল মজিদকে না জানিয়ে ওই তালিকা শিক্ষা বোর্ডে পাঠানোর কারণে লোকজন নিয়ে তিনি স্কুলের অফিস কক্ষে আসেন।

শিক্ষকরা জানান, এসময় প্রধান শিক্ষককে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর শাহের ছেলে রবিউল ইসলাম বাধা দিলে আবদুল মজিদ পিস্তুল উঁচিয়ে তাদের হুমকি দেন। পরে তাদেরকেও পেটানো হয়।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর শাহ জানান, ক্লাস চলাকালে আবদুল মজিদ লোকজন নিয়ে হামলা করেছে। অফিস কক্ষ ভাংচুর করেছে। প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেনকে বাঁচাতে গেলে তার ছেলে রবিউল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেওয়ান নাজমুল আলম জানান, আহতদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেনের অবস্থা গুরুতর। তার ডান চোখের নিচে হাতুড় দিয়ে আঘাত করার কারণে চোখের নিচে ফুলে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এছাড়া ডান কানের পর্দা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ সরদার বলেন, স্কুলের অভিভাবক ও সদস্যদের না জানিয়ে এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারার কথামতো কমিটির তালিকা শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এর প্রতিবাদ জানিয়ে কিছু অভিভাবক শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করে নিয়ম অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের দাবি জানান।

তিনি বলেন, আজ বোর্ড প্রতিনিধি হিসেবে রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিকের সরেজমিন তদন্ত করার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের আপত্তির কারণে তিনি বিদ্যালয়ে যাননি। এনিয়ে স্কুলে উপস্থিত অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে ধাক্কাধাক্কি হলে আমি তাদের শান্ত করি।’

তবে মারধর ও পিস্তলের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ সরদার।

এবিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি রুহুল আলম জানান, খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে মজিদ ও তার লোকজন সেখানে ছিল না। পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। মামলা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলা৭১নিউজ/এম