যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আর ক্রমশ ক্ষয়ক্ষতির মুখে ভঙ্গুর দশায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামার একমাত্র জেটি। ওপর থেকে আপতদৃষ্টিতে ঠিকঠাক মনে হলেও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে অবকাঠামোটি। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের বুকে সাড়ে আট বর্গকিলোমিটার দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাসিন্দা ও পর্যটকদের টেকনাফ থেকে আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ২০০২-০৩ অর্থবছরে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে জেটিটি নির্মাণ করা হয়। ব্যয় হয় প্রায় চার কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির পার্কিং পয়েন্ট সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দুটি গাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকেই জেটিটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এরপর সময় যত গড়িয়েছে অবস্থা আরো নাজুক হয়েছে।
প্রতিদিন এই জেটি ব্যবহার করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম- কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথের ৭টি পর্যটক জাহাজ, কয়েক শতাধিক নৌযানের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বীপে জাহাজ ও নৌযান নোঙরে রয়েছে একটি মাত্র জেটি। ওপরে দেখতে ফিটফাট হলেও অনেকটা ভঙ্গুর বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে ১৯ বছর আগে নির্মিত স্থাপনাটি। কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে রেলিং, পিলারে ধরেছে ফাটল, নিচের অংশের পুরো আস্তরণ উঠে বিপজ্জনকভাবে বেরিয়ে পড়েছে রড।
নৌযান পার্কিং অংশের সিংহভাগই ধসে পড়েছে। ওই অংশে স্টিল আর কাঠের জোড়াতালি দেওয়া পাটাতনই এখন ভরসা। ৩শ মিটার কাঠামোটির পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। প্রতিবছর ইজারা দিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হলেও জেটির দেখভালের যেন কেউ নেই।
পর্যটক রমজান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়। কিন্তু আগে রক্ষণাবেক্ষণ থাকে না। সেন্টমার্টিনের জেটির যে অবস্থা, দেখলেই ভয় করছে।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট এটি, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই দ্বীপে যাতায়াত করে। জেটির উপর দিয়ে ভালো দেখা গেলোও নিচের অবস্থা খুব খারাপ। পর্যটক হিসেবে আমার দাবি দ্রুত এই জেটিটি সংস্কার করা হোক।
স্থানীয় মনির হোসেন বলেন, ভাঙলে একটু একটু কাজ করে। কিন্তু পুরোপুরি ঠিক কখনোই করে না। দ্বীপের মালপত্র সব এই জেটি দিয়ে নামানো-ওঠানো হয়। কয়েক বছর ধরে শুনতাছি নতুন জেটি নির্মাণ হবে। কিন্তু হচ্ছে না।
কণ্ঠশিল্পী জুনায়েদ ইভান বলেন, যেহেতু সেন্টমার্টিনে একটাই জেটি। এটির রক্ষণাবেক্ষণের দরকার আছে। আমি চাই কর্তৃপক্ষ যেন এরদিকে নজর দেয়।
এদিকে অবকাঠামোটির সামনের পার্কিং পয়েন্ট সংস্কারে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ওয়ার্ক অর্ডার পেলে সেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার। তবে এতেও সংস্কার বাকি থেকে যাবে সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত অংশের। পুরো জেটির সংস্কার চান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, জেটিটি সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ থেকে একটি টেন্ডার হয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকার। জেটির সামনের অংশ সংস্কারের কাজ করা হবে বলে শুনেছি। তবে সড়কের মতো অংশটির জন্য কোনো বরাদ্দ হয়নি। আমরা চাই পুরো অংশটিই সংস্কার করা হোক।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন জানান, ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার দরপত্র পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। জেটির সামনের অংশ প্লাটফর্মের কাজ করা হবে। নিচে পাইলিং করে স্টিলের প্লাটফর্মের কাজ করা হবে। ঠিকাদরকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু হবে, ঠিকাদারকে কাজ সম্পূর্ণ করতে ২ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জাহামা এন্টারপ্রাইজের হাসান মাসুদ জানান, জেটি সংস্কারে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার হাতে পাওয়ার পরপরই কাজ শুরু করা হবে। জেটির সামনের অংশের কাজ আমরা করবো। অন্য অংশের কাজ নেই এই দরপত্রে।
এদিকে নতুন জেটি নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী।
তিনি জানান, জেটির বর্তমান অবস্থা এমনিতেই খারাপ। নতুন করে একটি জেটি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে বিআইডব্লিউটিএ এটি করবে। খুব দ্রুতই কাজ শুরু করার কথা বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর যেন ছাড়পত্র দেয় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত মাসের ২৪ তারিখ এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। বর্তমানটির সংস্কারের বিষয়টি হয়তো জেলা পরিষদ থেকে আলাদাভাবে হবে। তবে নতুন জেটি নির্মাণটাই মূল ফোকাস।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে