সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে লেনদেনে ধীরগতি রয়েছে বেশ।
প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে কয়েক দফা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট বেড়েছে। আর লেনদেন হয়েছে দেড়’শ কোটি টাকার কিছু বেশি।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে লেনদেনের সময় পাঁচ মিনিট না যেতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। এতে লেনদেনের ১৯ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে যায় ১০ পয়েন্ট।
অবশ্য এরপর আবার দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে থাকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে লেনদেনের ৫০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
সূচকের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কারণ প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই আবার বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে। এতে দেখতে দেখতে ফের ঋণাত্মক হয়ে পড়ে সূচক।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের তুলনায় ২ পয়েন্টে কমেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২ পয়েন্ট। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১ পয়েন্ট কমেছে।
এসময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির। আর ৩৬৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৯৭ কোটি ২ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪১ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৫৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির।
এদিকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করে শেয়ারবাজারে ফ্রেশ ফান্ড (নতুন অর্থ) বিনিয়োগের জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বুধবার চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে দেশের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়া উচিত।
এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রতিটি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের অনুমোদন দেয়। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকের এক্সপোজারের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আইন অনুযায়ী ব্যাংক মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ এই সীমার নিচে রয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে, ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন এবং পুঁজিবাজারে নতুন অর্থ বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
তারল্য সংকট ও আস্থাহীনতার কারণে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন দেখা দিলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চায়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক সাড়া দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়।
এরপর ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা বিষয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যে কোনো তফসিলি ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সুবিধা দেওয়ার পর দীর্ঘদিন চলে গেলেও এখনো ২৮টি ব্যাংক এই বিশেষ তহবিল গঠন করেনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ