সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একতরফা নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এ দাবি জানান।
একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ‘একতরফ’ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবিও জানান বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে যে তথাকথিত নির্বাচন তা বাতিল করে দিয়ে আবার নতুন করে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দা্বি জানাচ্ছি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ‘একতরফা’ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সভাপতি পদে মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক হিসেবে একই প্যানেলের আব্দুর নূর দুলালসহ পূর্ণ প্যানেল নির্বাচিত হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) গভীর রাতে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ব্যাপক হট্টগোল, পুলিশের পিটুনির মধ্যে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হয়। এদিকে বুধবার (১৫ মার্চ) ভোটগ্রহণের প্রথম দিন ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বিএনপির নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দস কাজলসহ ৩৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত আওয়ামী লীগের মুখোশ আরেকবার উন্মোচিত হলো। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনের শেষ পেরেকটি ঠেকানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে। আমি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে, এখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে যারা দায়িত্বরত রয়েছেন, কর্মরত রয়েছেন তাদের পবিত্র দায়িত্ব এ রাষ্ট্রকে রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পবিত্রতা সেই পবিত্রতা রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে, সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের আক্রমণ করবে, প্রহার করবে, তাদের আহত করবে। এটা ছোট কথা নয়, এটা হালকা করে দেখার বিষয় নয়।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় রাষ্ট্রের চরিত্র কী দাঁড়াচ্ছে? আমরা যেটা বলছি যে, এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে তারই প্রমাণ আমরা দেখতে পারছি। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাব যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য।
ফখরুল বলেন, আমরা বার বার বলে এসেছি যে, বাংলাদেশ আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নেই, বাংলাদেশ এখন আর সত্যিকার অর্থে কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নেই। বাংলাদেশে যত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলো আছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো এ আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত প্রতিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তার সর্বোচ্চ ন্যাক্কারজনক উদারহরণ আমরা সর্বোচ্চ আদালতে এটা দেখলাম। বার অ্যাসোসিয়েশন হচ্ছে বা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বলা হয়, অফিসিয়ার্স অব দ্য কোর্ট। সেই আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মধ্যযুগীয় কায়দায় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে তা ধ্বংস করে দিল। আওয়ামী লীগ দেশে এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ করায়াত্ব করে নিয়ে এখন চূড়ান্ত করতে চায়, বারগুলোকে জোর করে দখল করে নিতে চায়- এ কথাগুলো ক্ষোভ, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে আজকে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস