বৃহস্পতিবার যশোর-চট্টগ্রাম সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার উদ্বোধন হবে যশোর-কক্সবাজার বিমান চলাচল। ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্সের লাঞ্চিং সিরিমনি অনুষ্ঠানে এই দুই রুটে বিমান চলাচলের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতি মন্ত্রী মো. মাহাবুব আলী এমপি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গর্ব সুন্দরবন।
এই সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন খাত বিকাশে কাজ করছে সরকার। সুন্দরবন কেবল দেশের মধ্যে নয় সারাবিশ্বে গৌরবময় স্থান। বিদেশি এভিয়েশন শিপ গুলো পর্যটক নিয়ে সন্দুরবনে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সে লক্ষ্যে ১৬ থেকে ২০টি স্পটে ইকো-ট্যুরিজম চালু করার প্লান রয়েছে। এ জন্য সেখানে ট্যুরিজম স্পট বাছাই করেছে সরকার। যশোর বিমান বন্দর পার্কিং জোনের প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে লাঞ্চিং সিরিমনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী মো: মাহাবুব আলী এমপি বলেন, স্পট গুলো তৈরির সময় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকটি বিবেচনায় এনে কাজ করছে সরকার। এজন্য বুয়েটকে দিয়ে একটি সার্ভে করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় যশোর বিমানবন্দর চত্বরে যশোর থেকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সরাসরি ফ্লাইট চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পাশাপাশি বলেন, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। কাজেই এখানকার কৃষ্টি কালচার সব কিছুই অন্যরকম।
এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার উন্নয়নের প্লাটফর্মে যশোর কে রেখেছে। আর সব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট এই যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি জনবান্ধব সরকার। একই সাথে এটি উন্নয়নের সরকার। কাজেই যশোর গড়তে সরকারের বিশেষ প্লান রয়েছে। এখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ। ২০৪১ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হওয়ার পথে ঠিকঠাক এগুচ্ছে সরকার। এভিয়েশন ও সিভিল এভিয়েশন খাত এখন সরকারের দারুন আস্থার একটি খাত। ফলে সরকার এই খাত কে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে আন্তরিক। সরকার এই খাতকে ঢেলে সাজিয়েছে বলা যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতি মন্ত্রী মো. মাহাবুব আলী এমপি বক্তব্যে আরও বলেন, দেশে একাধিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। নতুন করে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে সরকার কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে যশোর বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশের রুটের দিকে তাকিয়ে থাকে সারা বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলো। কেননা ছোট্ট একটি দেশের ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের একটি বাজার ধরতে সকলে আগ্রহী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, যশোর -১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন, ঝিনাইদহ-৪ কালীগঞ্জ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দীন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মেস কমান্ডার মো: শাফাকত আলী ও প্রেসক্লাব যশোরের সাধারন সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার থেকে যশোর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। এ ফ্লাইট প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার যশোর থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে উড্ডয়ন করবে। আর বিকেল ৫টা ১০মিনিটে যশোরের উদ্দেশে ফিরে আসবে। এছাড়া প্রতি শনি, সোম, বুধ ও শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে যশোরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করবে। একই দিনে সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম বিমান রুট উদ্বোধন হচ্ছে।
আন্তজার্তিক রুটে রাজধানী ঢাকা থেকে চেন্নাই, কলকাতা, দোহা, মাস্কট, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কুয়ালামপুর, ব্যাংকক, গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট চালু রয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরের ৩য় সপ্তাহ থেকে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাগত বক্তব্যে বলেন এখন দেশের বিমান সংস্থাগুলোর শেয়ার মাত্র ১৮ পার্সেন্টের মত। আগামী দুই বছরে শেয়ার ৫০ পার্সেন্টে উত্তরনে সরকার ও বিমান সংস্থা গুলো আন্তরিক ভাবে কাজ করছে।
ট্যাক্স ও সার চার্জসহ যশোর থেকে চট্টগ্রামে ওয়ান ওয়ের ন্যূনতম ভাড়া ৬০০০ টাকা ও রিটার্ন ভাড়া ১২ হাজার টাকা। এছাড়া যশোর থেকে কক্সবাজারে ওয়ান ওয়ের ন্যূনতম ভাড়া ৬৫০০ টাকা ও রিটার্ন ভাড়া ১৩ হাজার টাকা। ভাড়া কমাতে অথবা ছাড়ে প্যাকেজ ঘোষনা করতে যশোর-১ শার্শা আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দীন অনুরোধ করেন।
মাত্র দুইটি এয়ার ক্রাফট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স। তখন তাদের জনবল ছিল মাত্র ১৫০ জন। এখন ১৪ টি এয়ার ক্রাফট চালু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, সাতটি ব্রান্ড নিউ ৭২-৬০০ ও ড্যাশ ৮- কিউ ৪০০ ফ্লাইট বহরে। এছাড়া নতুন ১৬ টি নতুন বিমান উড্ডয়নের পাইপ লাইনে রয়েছে। বাংলাদেশ- মধ্যপ্রাচ্য, ঢাকা- রোম, ঢাকা- টরেন্টো এবং ঢাকা- হিথরো বিমান রুট চালুর পথে রয়েছে সংস্থাটি।
আগে যেখানে ২৫০ টি ট্রাভেল এজেন্সী ছিল এখন সেখানে প্রায় ২৫০০ ট্রাভেল এজেন্সী কার্যকর রয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষিত বেকারের চাকুরি হয়েছে। এখন বছরে চার হাজার কোটি টাাকা রেমিটেন্স দিচ্ছে বিমান সংস্থা গুলো।
২০১৪ সালে রাজধানী ঢাকার সাথে যশোরের বিমান চলাচল শুরু করে ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স। সাত বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কক্সবাজার বিমান চলাচল শুরু হচ্ছে। তবে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি সংসদ সদস্য ও প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন যাত্রী হয়রানি এড়াতে যশোর থেকে কলিকাতা বিমান রুট চালুর দাবি জানান। একই সাথে অতিথিবৃন্দ বলেন, বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় স্থল বন্দর। সার্বিক উন্নয়নে বেনাপোলের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশের বিজিবি, কাষ্টমস ও পুলিশ প্রশাসন এবং ভারতীয় এলাকায় যাত্রীরা বেজায় নাজেহাল হয়ে থাকেন। যাত্রীদের সড়ক পথে বেজায় তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। অথচ ঢাকা থেকে কলিকাতা গমনকারি বিমানের যাত্রীরা মোটেও হয়রান হননা। যাত্রী হয়রানি এড়াতে হলেও যশোর- কলিকাতা বিমান রুট চালু করা প্রয়োজন। প্রতিদিন বেনাপোল হয়ে আট হাজার থেকে ১২ হাজার যাত্রী ভারতে যায় সড়ক পথে। লাঞ্চিং সিরিমনি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপস্থাপক মৌসুমী।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস