বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আলী আকবর বেলায়েতি সিরিয়ার পূর্ব গৌতা সফর করেছেন। গতকাল তিনি ওই এলাকার কিছু সুড়ঙ্গ পথও পরিদর্শন করেন যা উগ্র সন্ত্রাসীরা সিরিয়ার সরকারি সেনা ও মিত্রবাহিনীর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হামলার কাজে ব্যবহার করত।
পূর্ব গৌতা প্রায় সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়েছে। ড. বেলায়েতি সেখানে সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি সিরিয়ার প্রতি ইরানের নিশ্চিত সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “যেকোনো বিদেশী আগ্রাসনের মুখে আমরা সিরিয়া সরকারের পাশে থাকব।” পাশাপাশি তিনি আমেরিকা, ইসরাইল ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের হুমকির মুখে ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার করার কথা বলেন।
পূর্ব গৌতায় সিরিয়ার সেনাদের বিজয়ে অভিনন্দন জানান ড. বেলায়েতি। এ বিজয়কে তিনি ইরান ও সিরিয়ার মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলে অভিহিত করেন।
এর আগে ড. বেলায়েতি সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মুয়াল্লেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তারা সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও মার্কিন হুমকি মোকবেলায় ভ্রাতৃপ্রতীম দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাক্ষাতে ওয়ালিদ আল-মুয়াল্লেম সিরিয়ার সর্বশেষ ঘটনাবলী ড. বেলায়েতিকে জানান এবং সিরিয়ার প্রতি ইরানের পূর্ণ সমর্থনের জন্য তেহরানকে ধন্যবাদ দেন।
সিরিয়ার আকাশে মার্কিন যুদ্ধবিমান, সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় সিরিয়ার সেনারা:
সিরিয়ার আকাশসীমায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের যুদ্ধবিমান ওড়ার খবর বেরিয়েছে। বিদ্রোহী অধ্যুষিত সিরিয়ার পূর্ব গৌতার দুমা শহরে রাসায়নিক হামলার অভিযোগে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যখন আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো সামরিক হামলার হুমকি দিচ্ছে তখন সিরিয়ার আকাশসীমায় মার্কিন জোটের বিমান উড়ার খবর বের হলো।
হোমস প্রদেশের আল-থান্ফ শহরের আকাশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমানগুলো খুব নিচু দিয়ে টহল দিয়েছে। ইরাক ও জর্দানের আকাশ দিয়েও সিরিয়ার দিকে উড়ে যেতে দেখা গেছে মার্কিন জোটের যুদ্ধবিমান।
ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে আমেরিকা ও তার মিত্ররা ভারী ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। জোটের বিমানগুলো দেইর আজ যোরের মরুভূমির আকাশে গর্জন করছে।
রাশিয়ার বিমানগুলো সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আকাশে উড়ছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, মার্কিন নৌবাহিনী বলেছে, বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ হ্যারি এস ট্রুম্যানকে আজ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মাঝে মোতায়েন করা হবে। এ জাহাজে সাড়ে ছয় হাজার নৌসেনা রয়েছে। এর সঙ্গে থাকবে সাতটি অ্যাটাক শিপ।
এদিকে, মার্কিন সরকারের হুমকির মুখে সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছে সিরিয়ার সরকার। ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশের সমস্ত সামরিকঘাঁটি ও বিমানবন্দরকে এ সতর্কতার আওতায় আনা হয়েছে।
সাইপ্রাস থেকে একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ সিরিয়ার পানিসীমার দিকে রওয়ান দেয়ার পর কৃষ্ণসাগরে অবস্থিত রুশ নৌবহরকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা পাওয়া যায় নি। কিন্তু রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ভ্লাদিমির শ্যামানভ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, সিরিয়ার ওপর মার্কিন হামলা হলে মস্কো, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক -সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
পূর্ব গৌতার দুমা শহরে কথিত রাসায়নিক হামলার অভিযোগে সিরিয়ার ওপর সামরিক আগ্রাসনের হুমকি দিচ্ছে আমেরিকা। মার্কিন সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সও একই কথা বলছে।
দেশগুলো বলেছে, রাসায়নিক হামলার ঘটনা সত্য প্রমাণিত হলে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে সিরিয়ার সহযোগী দেশ রাশিয়া ও ইরানকেও তারা হুমকি দিচ্ছে।
রাসায়নিক হামলার ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে শিগগিরি তিনি তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। রাসায়নিক হামলা নিয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা মার্কিন প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া।
সিরিয়া ও রাশিয়া সুনির্দিষ্টভাবে রাসায়নিক হামলার বিষয়ে পশ্চিমা অভিযোগ নাকচ করেছে। কিন্তু তা মানতে রাজি নয় আমেরিকা ও তার মিত্ররা। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সোমবার বলেছেন, তিনি সিরিয়ার ওপর সামরিক হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে সৌদি আরব:
ফ্রান্স থেকে অস্ত্র কেনার জন্য প্রায় ২০০০ কোটি ডলারের আরেকটি চুক্তি সই করেছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান। প্যারিসে তিন দিনের সফরের শেষ দিনে তিনি এ চুক্তি করেন।
এ চুক্তির আওতায় ফ্রান্স থেকে সৌদি আরব সিজার আর্টিলারি কামান ও যুদ্ধজাহাজ কেনবেন।
আগে থেকেই ফ্রান্স হতে কেনা হচ্ছে সিজার আর্টিলারি গান, স্নাইপার রাইফেল, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান এবং যুদ্ধজাহাজ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র বিক্রেতা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ দাবি করেন, ফ্রান্স অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে খুব সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।
এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রয়োজন, মানবাধিকারের আইন ও বেসামরিক জনগণের জীবনের ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের সঙ্গে অস্ত্র কেনার জন্য বিশাল চুক্তি করেছে সৌদি আরব। এসব চুক্তির আওতায় রিয়াদ সরকার বহু যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত অস্ত্র পাবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সময় ১১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছিল সৌদি আরব। আগামী ১০ বছরে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়েরও চুক্তি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সামরিক অস্ত্র উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ দেশটিতে রফতানি করেছে। পাচ্ছে ১৫০টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার ‘ব্ল্যাক হক’, যা এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অ্যাটাক হেলিকপ্টার বহর। রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এবং চড়া মূল্যের লকহিড মার্টিনের এন্টি ব্যালাস্টিক মিসাইল রাডার।
রাশিয়ার এস-৪০০ অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির বড় বাজার সৌদি আরব; গত তিন বছরে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রি করেছে।
সৌদি আরবের কাছে যেসব দেশ অস্ত্র রফতানি করে ফ্রান্স তাদের মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি সামরিক অস্ত্র উৎপাদনবিষয়ক প্রদর্শনী চলাকালে বিভিন্ন দেশের সাথে রিয়াদের অস্ত্র বিক্রি সংক্রান্ত ৩৩টি চুক্তি সই হয়েছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
এ সাক্ষাতে সৌদি যুবরাজকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি করে অস্ত্র কেনা ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের আহ্বান জানান ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, সৌদি আরব মার্কিন অস্ত্রের ‘সবচেয়ে বড় ক্রেতা’।
সৌদি অস্ত্র ক্রয়ের কারণে শত শত কোটি ডলার ঘরে ফেরাতে সমর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অস্ত্র ব্যবসায় ৪০ হাজার মার্কিন নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। সূত্র : এরাবিয়ান জার্নাল।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস