বাংলা৭১নিউজ, এম.নাজিম উদ্দিন,পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বাউফলের তেতুঁলিয়া নদীতে ‘বানের পানি তখন ১২/১৪ ফুট উঁচ্চতায় ভেঙ্গে পড়ছিল। তার সাথে বাতাসের শো-শো শদ্ধ আর প্রচন্ড বেগে বইছে তুফান। এ অবস্থায় একটি পাতিলে ভাসিয়ে দেয়া হলো মাত্র এক মাস আট দিন বয়সের শান্তকে প্রায় ৫ ঘন্টা মাতাল সেই ঢেউয়ের মধ্যেও অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় সে । ঝড় থেমে যাওয়ার পর শান্তকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় চরওয়াডেলের পশ্চিম পাশে একটি ধান ক্ষেতে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের এ দিনে সিডর তান্ডবে সব কিছু যখন লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখন শিশু শান্তকে স্ত্রী নুরুন্নাহারের বুুক থেকে কেঁড়ে নিয়ে একটি পাতিলের মধ্যে ভরে উত্তাল তেতুঁলিয়া নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা রাজ্জাক পঞ্চায়েত। সে দিন জীবন বাচাঁনোর যুদ্ধে শিশু শান্ত জয়ী হলেও এ চরের প্রান হারিয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। শান্ত (১০) এখন সেই চরের উদর মাটি গায়ে মেখে শান্ত বেড়ে উঠলেও সেই চরের অভাবি মানুষগুলো এখনো জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সিডরের সেই ক্ষত বুকে ধারন করে এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্থ সেইসব মানুষগুলোর পুনর বাসনের জন্য যতাযত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ এর মধ্যে অতিবাহিত হয়েগেছে ১০ টি বছর। সিডর পরবর্তী জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চরফেডারেশনের বসতি গড়েন মিনারা ও খোরশেদ গাজী। সিডরে এই মিনারা আর খোরর্শেদ গাজী হারিয়েছে তার ৫ সন্তান আয়শা (২২),সীমা (১২),আজিম (৮), রুমা(৬) ও তানিয়া (৪) কে। কেবল বেচেঁ আছেন মেঝ মেয়ে সাহেরা(১৮)।
তাকে পাশ্ববর্তী চর ওয়াডেল বিয়ে দেয়া হয়। সিডর ধবংস জজ্ঞের পর তাদের ঠাইঁ হয় অন্যের ঘরে। সেখানে মানসুরা (৮) তানজিলা (৬)এই ২ ছেলে/মেয়ে নিয়ে নতুন ভাবে তারা স্বপ্নের জাল বুনছেন। বর্তমানে শ্রম বিক্রি করে চলছে মিনারা ও খোরশেদ গাজী সংসার। নুরুন্নাহার, মিনারার মত এরকম বাউফলের চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখনও সিডরের ক্ষত চিহ্ন বুকের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছেন। এখনও তারা আঁতকে ওঠেন সিডরের সেই তান্ডবতার কথা মনে করে। সিডরে সর্বহারা পরিবারগুলো এখনও ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। চর ফেডারেশনের সাহেরা ভেজা চোখে জড়ানো গলায় বলেন, ‘এ অবাগারা জাইবে কই, আল¬ার দুইন্যাইতে জাওনের জায়গা নাই।
মাইনষের জমিন বর্গা চইয়া, ছড়া- নাড়া টোহাইয়া, মাছ ধইরা তবু প্যাট চালাই। এলেকশন আইলে ভোটটা পাওনের লইগ্যা হগোলে কয়, এবার পাস করলে তোমাগোরে থাহনের জন্য এই চরে ২/৪ একর জমি বন্দোবস্ত দিমু। এর পর তারা আমাগো খবর রাহেনা। খোরশেদ গাজী বলেন, ‘প্যাডের টানে এই চরে আইয়া মাইয়া-পোলাগুলারে হারাইছি। তয় এককরা জমিন পাইলে ও থাহার একটা ঘর করতে পাড়লে চরডারে ছারতাম না। সিডর পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে সামান্য কিছু সাহায্য সহযোগিতার কথা তুলে তিনি জানান, অনেকেই ঘর পাইছে তা তিনি শুনেছেন, কিন্তু চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ভোটার হয়েও জায়গা জমি না থাকায় তিনি সাহায্য সংস্থার আবাসন প্রকল্পের ঘর পাননি। পায়নি উলে¬খযোগ্য কোন আর্থিক সাহায্য।
সিডরের পরে বিভিন্ন নেতারা অনেক কিছু দেয়ার আশ্বাস দিলে ও আজও পযর্ন্ত কিছুই পাইনি। পাতিলে চড়ে বেঁচে যাওয়া শান্তর বাবা রাজ্জাক পঞ্চায়েত মারা গেছেন ৭ বছর আগে। অসহায় শান্তরর মা নুরুন্নাহার বলেন, ‘পোলাডারে দেখতে আর ফটোক উডাইতে বহুলোক আয়। পোলাডা কেমনে লেহাপড়া কইরা বড় অইবে, কি খাইয়া বাঁচপে, হে কতা কেউ কয়না।’ সিডরকে পুঞ্জি করে এ অঞ্চলে অনেক মেম্বর চেয়ারম্যানদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কথা চালু আছে, চালু আছে অনেক সরকারি বেসরকারি এনজিও কর্মীর রাতারাতি ধনী হওয়ার গল্প। রিলিফের মালামাল চুরি করতে গিয়ে সেনা কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়ে সাজা ভোগের নজির আছে। এ অঞ্চলের সিডর বিধ্বস্ত মানুষগুলো মইন উল আহম্মদ, ফখরুউদ্দিনসহ দেশী বিদেশী অনেক নামিদামি লোকের দেখা পেয়েছেন। কিন্তু পেট চালাতে চরভূমে একখন্ড জমি ও বানের সময় মাথা গুজবার ঠাঁই হিসেবে একটি শক্ত চালা ঘরের দেখা এখনও পাননি হোসনেআরা, নুরুন্নাহার ও মিনারার মত অনেকে পরিবার
বাংলা৭১নিউজ/জেএস