ব্যাংকিং খাতে লুকায়িত অরাজকতার নাম বিভিন্ন পর্যায়ের সার্ভিস চার্জ। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিমাণ নির্ধারণ না করায় ইচ্ছেমতো আদায় করছে ব্যাংকগুলো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। গ্রাহক স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চার্জ নির্ধারণ ও ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় সব ধরনের কমিশনের তালিকা টানানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
ব্যাংকে জমা রাখা অর্থ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ, ঋণ দেয়া ও স্থানান্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের সার্ভিস চার্জ আদায় করে থাকে তফসিলি ব্যাংকগুলো। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে এসব চার্জের পরিমাণ কত এবং আদৌ চার্জ নেয়া যৌক্তিক কিনা, তার উত্তর জানা নেই গ্রাহকের।
জনতা ব্যাংকের একজন গ্রাহক জানান, তার অ্যাকাউন্ট জনতা ব্যাংক করপোরেট শাখায়, বহনের সুবিধার কারণে মতিঝিল ব্রাঞ্চে জমা দিতে যাবো, তারা (কর্তৃপক্ষ) ওই ব্রাঞ্চ থেকে এই ব্রাঞ্চে দেয়ার জন্য ৮২৫ টাকা চার্জ দিতে হবে।
অভিযোগের খবর পেয়ে, জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় যায় । কিন্তু কথা বলতে রাজী নন সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা। তবে জানানো হয়, শুধু নিজস্ব একাউন্টে অনলাইনে এক লাখ টাকা পাঠাতেই চার্জ নেয়া হয় ৪৬ টাকা।
যদিও আরেক রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার মহা-ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হোসেন জানান, অনলাইনে নিজের একাউন্টে লেনদেনে নেয়া হয় না কোন চার্জ।
এতো গেলো সরকারি ব্যাংকের চিত্র। বিপরীতে ইচ্ছেমতো চার্জ নিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংক ১০ পাতার একটি চেক বইয়ের দাম ২৫ টাকা রাখলেও বেসরকারি ব্যাংক রাখছে প্রায় ১১০ টাকা। একাউন্ট মেইন্টেনিং এ সরকারি ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা নিলেও বেসরকারি ব্যাংকে নেই কোন পরিসীমা। প্রতিটি পর্যায়েই কেটে নেয়া হয় বিভিন্ন পরিমাণে কমিশন। এমন স্বেচ্ছাচারি বিষয়ের পক্ষে মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রাইভেট ব্যাংকের স্বাধীনতা আছে, স্বাধীনতা এক্ষেত্রে যে আমার যদি মনে হয় আমি চার্জ বেশি নেব। আবার আরেকজন যদি মনে করে লোকবল বেশি আছে আমি চার্জ কম নেব।
চার্জ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতার বিষয়টি উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নরের বক্তব্যে। তিনি বলেন, পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি জোরদার করতে হবে মনিটরিং কার্যক্রম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক আগে যেমন সার্ভিস চার্জের একটা তালিকা করে দিত, এখন করছে না। এখন ব্যাংকগুলো কি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু সংরক্ষণ করছে। এতে গ্রাহকদের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত বিভিন্ন ক্ষেত্রের সার্ভিস চার্জের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া।
দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা রয়েছে ৬০টি। ব্যাংকগুলোতে জুন মাস পর্যন্ত জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
বাংলা৭১নিউজ/এএম