বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: অবশেষে এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে ৫০ টাকা ঘুষ দেয়ার দশ বছর পুরনো মামলায় মাইক্রোবাস চালক মো. কবির হোসেন মোল্লাকে গ্রেফতার দেখানো হল।
মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করেছে ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই গ্রেফতার দেখানোর আবেদনটি গ্রহণ করেন।
চলতি বছরে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৫০ টাকা ঘুষের মামলা তদন্ত চলছে ১০ বছর’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর পর পরই দীর্ঘদিন ধরে জামিন নিয়ে পলাতক থাকা কবির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেফতার হন।
সূত্র জানায়, জামিন নিয়ে বছরের পর বছর পলাতক থাকা আসামি কবিরের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদলত। পরোয়ানা চলে যায় আসামির গ্রামের ঠিকানা অনুসারে বরিশাল থানায়। দৈনিক যুগান্তরে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বরিশাল থানা পুলিশ সম্প্রতি রামপুরা থানা পুলিশকে আসামি সম্পর্কে অবহিত করে পরোয়ানাটি পাঠিয়ে দেয়। ৫ মে রামপুরা থানা পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করে। ৬ মে আসামিকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তার ফরোয়াডিংয়ে ‘৫০ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলার’ তথ্যও উল্লেখ করা হয়। ওই দিন আসামির জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর থেকে আসামি কারাগরে রয়েছেন।
মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানধীন শিশুমেলা সিগনাল থেকে কল্যাণপুরের দিকে যাচ্ছিল একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো ১৩-১৬৮৫)। ওই মাইক্রোবাসকে থামার জন্য সিগন্যাল দিলে চালক মো. কবির হোসেন মোল্লা তা অমান্য করেন। একটু এগোতেই মাইক্রোবাসটি জ্যামে আটকা পড়ে। জ্যামে থাকা অবস্থায় মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট প্রদীপ কুমার সাহা ওই গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান। এতে গাড়ি থেকে নেমেই চালক জনসম্মুখে ওই সার্জেন্টকে ৫০ টাকার নোট (যার নম্বর খচ৪৫৮৭৯৩৭) দিতে চাইলে সার্জেন্ট তাৎক্ষণিক ওই চালকের হাত ধরে ফেলেন। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫০ টাকা ঘুষ দেয়ার অপরাধে গাড়িসহ ওই চালককে আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় ওই সার্জেন্ট বাদী মামলাটি দায়ের করেন। মামলার একমাত্র আসামি কবির হোসেন বরিশাল বাকেরগঞ্জ থানার সন্তোষদি গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার ছেলে। মামলার ৯ দিন পরই আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
এদিকে মামলাটি দায়েরের পর তা তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক মামলাটি ‘অতি তুচ্ছ প্রকৃতির’ বিবেচনা করে পুলিশ কর্তৃক ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারার বিধান মোতাবেক নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) মীর মো. জয়নুল আবেদনী শিবলীর সাক্ষরিত এক চিঠিতে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়। আর এ মামলা তদন্তে দুদকের অনীহার বিষয়টি ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. আতাউর রহমান আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
এরপর তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ২১ মে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. আব্দুল লতিফ একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। ওই বছরের ২ জুন এ চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করা হয়। একই বছরের ২০ জুন আদালত এক আদেশে বলেন, ‘মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় দুদক ছাড়া আর কেউ তদন্ত করতে পারবে না বিধায় মামলার নথিটি পুলিশ জিআর থেকে দুদক জিআরে পাঠানো হোক। অর্থাৎ পুলিশের দেয়া চার্জশিট গ্রহণ না করে আদালত মামলাটি দুদককে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। আর এরপর থেকেই আদালত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বার বার দিন ধার্য করে চলেছেন। তবে অদ্যাবধি দুদক তা দাখিল করেনি। আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর আসামি কবির হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস