বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: হঠাৎ করেই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে একটি শব্দ- সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সেখান থেকে সবার মুখে মুখে এই শব্দটি।
বুধবার গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ভেতর ঢুকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর খবরটা গণমাধ্যমে আসার পর উপমহাদেশে শুরু হয়েছে টানটান উত্তেজনা। পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দুই দেশের যুদ্ধ কি তাহলে লেগেই যাচ্ছে?
আসলেই কী এটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? ভারতের আন্দবাজার পত্রিকায় বর্ণনা করা হয়েছে এ সম্পর্কে।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কোনও যুদ্ধ নয়। এমনকি কোনও ছায়া-যুদ্ধও নয়। অথবা একটাকে যুদ্ধের মহড়াও বলা যায় না। শব্দটা সাধারণ মানুষের কাছ নতুন লাগতে পারে। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীকেই এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাতে হয়েছে।
কোনও দেশের সেনাবাহিনী এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামের হানাদারি চালায়, অতর্কিতে। কোনও প্রাক-ঘোষণা ছাড়াই। দেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক দীর্ঘদিনের কোনও সমস্যা মেটাতেও এটা চালাতে হয়।
অভ্যন্তরীণ শত্রু, সংস্থা বা সংগঠন হোক কিংবা বহিরাগত- ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সব সময়েই হঠাৎ করা হয়। আগেভাগে তার খবর ঘোষণা করা হয় না। খুব অল্প সময়ে, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শত্রুদের গোপন ডেরা বা সুড়ঙ্গ বা কোনও দুর্গম, দুর্ভেদ্য ঘাঁটির ওপরে চালানো হয় এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।
ওই হানাদারি চালিয়ে শত্রুদের ঘাঁটিগুলিকে গুঁড়িয়ে-উড়িয়ে দিয়ে আসার পর সেনাবাহিনী আর সেই এলাকায় মোতায়েন থাকে না বা সেই এলাকা দখল করে বসে থাকে না। হানাদারির উদ্দেশ্য সফল হলেই সেনাবাহিনী আবার দেশে বা তার আগের অবস্থানে ফিরে আসে।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়ে সেনাবাহিনী শত্রুদের আটক বা গ্রেফতার করে না। তাদের একেবারে ধ্বংস করে দেয়। তুমুল গোলাবর্ষণে তাদের ঘাঁটিগুলি মাটিতে মিশিয়ে দেয়। এমন হানাদারিতে সবটাই সেনাবাহিনী করে প্রায় আলোর গতিতে।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। যে দেশের সেনাবাহিনীই এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাক, তাদের নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব সামান্য রাখতে হয়। এমনকি, যে এলাকায় গিয়ে সেনাবাহিনী হামলা চালাচ্ছে, সেই এলাকার পরিধি যাতে খুব বেশি না বেড়ে বা ছড়িয়ে যায় বা যারা ‘টার্গেট’, তাদের ছাড়া যেন অন্য কেউ সেনাবাহিনীর ওই ‘স্ট্রাইকে’ না মারা যায় বা জখম হয়, সে দিকেও সেনাবাহিনীকে কড়া নজর রাখতে হয়।
সে জন্যই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করতে হয় প্রায় আলোর গতিতে। আচমকা, চোখের পলক পড়ার আগেই।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করার জন্য সেনাবাহিনীর কোনও সবিস্তার পরিকল্পনা বা দফাওয়ারি বৈঠকেরও প্রয়োজন হয় না। সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক সংশ্লিষ্ট কর্তার চটজলদি বৈঠকের পরেই দুম করে শুরু হয়ে যায় এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। আর মাছ নয়, তির ছোঁড়ার আগে ‘মাছের চোখ’ দেখার মতোই নিশানাকে নির্ভুলভাবে বেছে নিতে হয়।
এখানে ‘এটা না হলে, ওটা’ বা ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড’ খাটে না। একটাই নিশানা হবে, আর সেটাকেই নির্ভুল হতে হবে। আর একেবারে একশো ভাগ নিশ্চিত হয়েই সেই নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে হবে। এটাই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র মূল মন্ত্র।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার প্রবীর সান্যাল বলেন, ‘গতকাল রাতে ভারত যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে, তা বেশ বড় রকমের। আর সেই স্ট্রাইক অসম্ভব রকমের সফল হয়েছে। কারণ, অত্যন্ত নিখুঁতভাবে শত্রুশিবিরে হানা দেওয়া হয়েছে আর তাতে শত্রুশিবিরের অসম্ভব রকমের ক্ষতি হয়েছে। আর তার পরেও নিজেদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরে আসতে পেরেছে।’
বহু দেশই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর সেটা চেপে রাখতে চায়, বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায়। তাই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র সব ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে না বেশির ভাগ সময়েই। তবে নাগা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি নির্মূল করতে গত জুনে মিয়ানমারে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।
তাতে সেনাবাহিনীর ৭০ জন কম্যান্ডার ওই জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে নেমে ৪০ মিনিটের মধ্যে ৩৮ জন নাগা জঙ্গিকে শেষ করেছিল। শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই দমনেও এক বার ভারতীয় শান্তিরক্ষীবাহিনী চালিয়েছিল ওই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: আনন্দাবাজার পত্রিকা অবলম্বনে