‘গত বছরের এ সময়ে গোলাপে ভর্তি ছিল বাগান। এ বছর কিছুই নেই। ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ টাকার গোলাপও বিক্রি করতে পারিনি। ফুল না ফুটতেই ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক-সার দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এবার মনে হয় লোকসান নিশ্চিত।’
এভাবেই হতাশার কথা জানান গোলাপচাষি মজিবর রহমান।
শুধু মজিবর নয়, সাভারের গোলাপ গ্রামের সব চাষিরই একই কথা। ছত্রাকের কারণে নষ্ট হচ্ছে গোলাপ ফুল। ফলে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন তারা। তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, ঠান্ডা বেশি হওয়ায় ফুলের পাপড়ি ঝরে যাচ্ছে।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে বিরুলিয়ার ভাগিনী বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বাগানে ফোটেনি গোলাপ। গাছের পাতা ও কলির পাপড়ি কালো হয়ে মুচড়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো হয়েছে। এমন চিত্র বদলাতে কেউ কেউ বাগান পরিষ্কার করছেন। সেখানেই কথা হয় চাষি আওলাদ হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জানান, সামনে ২১ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবস এবং ২৬ মার্চ। এ সময়টায় ফুলের চাহিদা থাকে। দামও পাওয়া যায় বেশ। অথচ অজ্ঞাত রোগে সব শেষ। প্রতিটি বাগানের একই চিত্র।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন দু-একবার ঘুরে গেছেন। কিন্তু কিছুই বলছেন না। বারবার যোগাযোগ করলেও কোনো কাজে হচ্ছে না। এর আগে ২০১৭ সালেও এমন রোগ হানা দিয়েছিল গোলাপ গ্রামে।
এদিকে, গোলাপ না থাকলেও থেমে নেই দর্শণার্থীর আগমন। ফুলের উপর শিশিরের ছোয়া পেতে ছুটে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। ভালোবাসার পরিবারকে গোলাপের সুভাস দিতে নিয়ে এসেছেন অনেকেই। এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।
রাজধানীর বারিধারা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন অনুপম রায়। তিনি জানান, প্রতিবছর শীতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসি গোলাপ গ্রামে। যেখানে খেজুরের রস খাওয়াও হয়, সঙ্গে নানা রঙের গোলাপের সুভাসও নেওয়া যায়। তবে এবার রস খেলেও গোলাপের সুভাস নিতে পারছি না। বাগান ফাঁকা।
ভালোবাসার মানুষকে গোলাপের রাজ্য দেখাবেন বলে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন সেন্টু। তবে এসেই হতাশ তিনি। তার মতে এখন ফুলই নেই গাছে। যা আছে তাও নষ্ট হয়ে পড়ছে।
সাভারের ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলচাষ হলেও বিরুলিয়াতেই রয়েছে ২০০-২২০ হেক্টর। যার বেশির ভাগই গোলাপ। তবে কসমস, গাঁদা, জারভারা ও গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষও হয় এ গ্রামে।
স্থানীয় ফুলচাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বলেন, এরই মধ্যে ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশ বাগানের ফুলই নষ্ট হয়ে গেছে, যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলছে, অতিমাত্রায় শীতের কারণে এবার বাগানে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। একটু গরম পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে মাটি ও পানি পরীক্ষা করে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে