মূসকের (ভ্যাট) বৃহৎ করদাতা ইউনিটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।
ওই কমিশনারকে বিদেশ ভ্রমণে ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারটি মোবাইল কোম্পানিকে ১৫২ কোটি টাকা সুদ ছাড়ের অভিযোগ রয়েছে।
শুনানিতে অংশ নেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম শেখের সই করা নিষেধাজ্ঞার এই চিঠি পাঠানো হয়েছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) কাছে।
দুদকের পাঠানো নোটিশে বলা হয়, রাষ্ট্রের ১৫২ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে আত্মসাৎ পূর্বক দণ্ডবিধির ২১৮/৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
এ অভিযোগে ওয়াহিদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম শেখ বাদী হয়ে মামলা করেন।
দুদকের নোটিশে বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ওয়াহিদা রহমান দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির মধ্যে গ্রামীণফোন লিমিটেডের ৬টি নথিতে ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৭ টাকা, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডের ৭টি নথিতে ৫৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫১ টাকা, রবি আজিয়াটার ১৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৮৮ টাকা এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের ২০ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৫২ টাকাসহ মোট ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা অপরিশোধিত সুদ মওকুফ করেন ওয়াহিদা রহমান।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, স্থান ও স্থাপনার ওপরে ভ্যাট প্রযোজ্য হওয়ায় তা মেনে নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভ্যাট পরিশোধের বিষয়ে Alternative Dispute Resolution (ADR) সভায় সম্মত হয়। এরপর যথাসময়ে ১৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার ৪৩০ টাকা পরিশোধ করা হয়। উক্ত রাজস্ব নির্ধারিত কর মেয়াদে পরিশোধ না করায় মূসক আইন অনুযায়ী সুদের পরিমাণ হয় ১৫২ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯০ টাকা।
মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৭(৩) অনুসারে সুদ আদায়ের জন্য নথি উপস্থাপন করা হলে তৎকালীন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী দ্রুত সুদের হিসাব করার নির্দেশ দেন। কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী কিছু যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে একক নির্বাহী আদেশে অসৎ উদ্দেশ্যে সুদ আদায় করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
১৫২ কোটি টাকা সুদ আইনানুগভাবে আদায়যোগ্য ছিল। কিন্তু তিনি উক্ত সুদ আদায় না করার নির্বাহী সিদ্ধান্তটি প্রদান করেন। ফলে সরকারের ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা আদায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয় দুদকের কাছে।
কাস্টমস কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার হিসেবে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি পিআরএলে রয়েছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ