জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুমিল্লা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী (নজরুল), চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহুরুল ইসলাম চাকলাদার ওরফে রেন্টু চাকলাদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নাছিমুল আলম চৌধুরী (নজরুল) ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদক অনুসন্ধান সূত্র জানা যায়, নাছিমুল তার নিজ নামে বিজে জিও টেক্সটাইল লিমিটেড নামীয় কোম্পানিতে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
ঢাকার বনানী ডিওএইচএস এবং নিকুঞ্জে দুটি ফ্ল্যাট, কুমিল্লার বরুড়া বাজারে প্রায় ১৭ টি দোকান, কুমিল্লা সদরে ঠাকুরবাড়ি ও ঝাউতলায় দুটি বহুতল বাড়ি, এছাড়া নামে-বেনামে প্রায় ৪৫০ শতাংশ জমির মালিকানা রয়েছে।
জহুরুল ইসলাম চাকলাদার ওরফে রেন্টু চাকলাদার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে যশোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে নিজের বা পৈত্রিকভাবে উল্লেখ করার মতো সম্পদ ছিল না। কিন্তু মেয়র হওয়ার পর তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০১৮ সালে একই সময়ে শহরে ৭২ টি রাস্তাঘাট নির্মাণ ও শহরে বাতি স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রেন্টু শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করে প্রায় ৪০ একর জমি আত্মসাৎ করেছেন। যশোর শহরের আরাবপুর এলাকায় প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর বিশাল বাগান বাড়ি, যশোর শহরের রূপদিয়া বাজার এলাকায় ২০ বিঘা জমির ওপর একটি ফিড মিল, শহরের কাজিপাড়ায় সুদৃশ্য অট্রালিকা নির্মাণ করেছেন।
তিনি যশোরের বাঘারপাড়ার একাধিক স্কুল-কলেজের সভাপতি হওয়ায় নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
মাহফুজুর রহমান মিতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ছিল ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৮০৫ টাকা। ওই আয় ১০ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা।
যা ২০১৪ সালের বার্ষিক আয়ের তুলনায় ১০১.২ শতাংশের বেশি এবং অস্থাবর সম্পদ ২০১৪ সালের তুলনায় ১৯৯.২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তার স্ত্রী মাহমুদা মাহফুজের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ টাকা। যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৮ টাকা অর্থাৎ ১৯০.১১ শতাংশ বেড়েছে এবং অস্থাবর সম্পদ ২৯.০৫ শতাংশ বেড়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক এ সংসদ সদস্যের পরিবারের নামে পূর্বাচলে প্লট, মতিঝিলে ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত বিল্ডিং, গুলশানে ফ্ল্যাট, উত্তরায় দিয়াবাড়িতে ৫ কাঠার প্লট রয়েছে।
মাহফুজুর রহমান মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ