বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ৩১ ডিসেম্বর দেশের ৩৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা এর আগের বছর ছিল ৩ হাজার ১২৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বিনিয়োগে বরাবরের মতো এগিয়ে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন। ২০১৫ সাল শেষে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫০ কোটি টাকা।
তবে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত এ কোম্পানির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা এর আগের বছর ছিল ২৩৯ কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বীমা কোম্পানিগুলোর। তবে এফডিআরকেই বেশি নিরাপদ ও লাভজনক মনে করছে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো। কিছু সাধারণ বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে জমি, অফিস স্পেস ও বহুতল ভবনে। ২০১০ সাল পর্যন্ত কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী থাকলেও বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ আগ্রহ অনেক কমে এসেছে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে অনেক বীমা কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ উঠিয়ে নিয়েছে।
এদিকে এখন পর্যন্ত আইডিআরএর বিনিয়োগ নীতিমালা চূড়ান্ত না হলেও ঝুঁকিমুক্তভাবে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন খাতে কোম্পানির অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে বলে জানান গ্রীন ডেল্টার প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা নাসির এ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট কমিটি রয়েছে। কমিটি সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখে, কোথায় কোন খাতে ঝুঁকিমুক্তভাবে বিনিয়োগ করা সম্ভব। এর পর তা বোর্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। এ কোম্পানির প্রায় ১০০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রয়েছে বলে জানান তিনি।
আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। আগের বছর এ কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগ ২০১৫ সাল শেষে ১৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আগের বছর তা ছিল ১৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আগের বছর এ কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। পঞ্চম স্থানে থাকা ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগের পরিমাণ ১১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা ২০১৪ সালে ছিল ১১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ৯০ কোটি টাকা এফডিআর করা আছে। এছাড়া শেয়ারবাজারেও অল্প কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। সরকার যদি ঝুঁকিমুক্তভাবে অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগের নির্দেশনা দেয় তাহলে আমরা তা করব।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের শেষ দিকে শেয়ারবাজারে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ বিষয়ে সময়োপযোগী একটি প্রবিধান প্রণয়নের কাজ শুরু করে আইডিআরএ। গত বছরের মার্চে বীমা খাতের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ-সংক্রান্ত খসড়া প্রণয়ন করে তারা। একই বছরের ২১ এপ্রিল খসড়া প্রবিধানটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী জীবন বীমার জন্য সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন পরিমাণ হবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ৩০ শতাংশ। আর সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ।
বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে উভয় শ্রেণীর বীমা কোম্পানি বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। মিউচুয়াল ফান্ডে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ; ঋণপত্র অথবা অন্যান্য সিকিউরিটিজে জীবন বীমা কোম্পানি বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ১০ শতাংশ এবং সাধারণ বীমা কোম্পানি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।
স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত যে কোম্পানি পূর্ববর্তী দুই হিসাব বছরে ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ (বোনাস শেয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে) দিয়েছে সে কোম্পানির সাধারণ বা অগ্রাধিকার শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে বীমা কোম্পানি। তবে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ৫ শতাংশ বা ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না।
পূর্ববর্তী তিন বছর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়া অথবা পাঁচ বছর ঋণপত্রের ওপর সম্পূর্ণ সুদ পরিশোধ না করা কোম্পানিতে কোনো বিনিয়োগ করা যাবে না। আর শেয়ারে পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ হবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, সাধারণ বীমা কোম্পানি শর্তসাপেক্ষে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আমানত হিসেবে তফসিলি ব্যাংকে ৮০ শতাংশ ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ পর্যন্ত রাখতে পারবে। এছাড়া স্থাবর সম্পত্তিতে ৩০ শতাংশ, সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ২০ এবং আইডিআরএর অনুমোদিত অন্যান্য সম্পদে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।
ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইস্যু করা বন্ডে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পর অবশিষ্ট বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম