শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
রোহিঙ্গা সংকট আমাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাষাসৈনিক আব্দুল গফুর আর নেই পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জলবায়ুঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান ফিলিস্তিনে অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান ড. ইউনূসের সব রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে: ড. ইউনূস স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তি এনে দিয়েছে ছাত্র-জনতা ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩২১ ‘মহানবীকে কটূক্তি সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরির জঘন্য ষড়যন্ত্র’ গণহত্যা নিয়ে আইসিসিতে অভিযোগ করতে পারে বাংলাদেশ এক পদে দুই মেয়াদের বেশি না থাকার নির্দেশনা ক্রীড়া উপদেষ্টার কখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে, জানালেন নাহিদ অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা রাসেল দুই গ্রুপের মামলাতেই আসামি হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শিগেরু ইশিবা তাদের রক্তদানে আমরা নতুন বিজয় দিবস পেয়েছি: সালাহউদ্দিন কানপুর টেস্ট চলাকালে বাংলাদেশের পতাকা পোড়াল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দেশবাসী নতুন করে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা নেতৃত্ব মেনে নেবে না: জামায়াত ইন্দোনেশিয়ায় সোনার খনিতে ভূমিধস, নিহত ১৫ ইদ্রাকপুর কেল্লায় পরিদর্শনে গিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

সাতক্ষীরায় মৎস্য ঘেরে আইলের মাচায় সবজি বিপ্লব

এবিএম মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৩০৭ বার পড়া হয়েছে

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ বিল এলাকা সবুজ-সোনালি ধানের হারিয়ে যাওয়া মিষ্টি গন্ধের জায়গাগুলো দখল করেছে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ির ঘের। বড় বড় বিলগুলো এখন মাটির আইল বা বাঁধ ঘেরা লোনা ও মিঠা পানির জলাশয়। লবণ পানি সবুজ-সোনালী ধানের ফসল গ্রাস করে নষ্ট করে আশপাশের ফসলি পরিবেশ বদ্ধমূল এ ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে সাতক্ষীরা জেলার মৎস্যচাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি), সাতক্ষীরার প্রচেষ্টায় বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মৎস্য ঘেরের মাটির বাঁধ বা আইলের পাড়ে সবজি চাষ। ‘সাথী ফসল’ হিসেবে শুরু হলেও এখন মূল ফসলের সাথে পাল্লা দিচ্ছে সমান তালে।

মৎস্য ঘেরের আইলের মাচায় চাষ হচ্ছে সবুজ সবজি আর মাচার নিচে পানিতে চাষ হচ্ছে মাছ। মৎস্য ঘেরের আইলে উৎপাদিত সবুজ-সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় সারা দেশজুড়ে এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ।

সাতক্ষীরা জেলায় বছরে যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সবজি মৎস্য ঘেরের আইলে ও মাচা উৎপাদিত হয়। মৎস্য ঘেরের আইলে বা বাঁধে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলার অধিকাংশ মৎস্য ঘেরে দিন দিন সবজির চাষ বাড়ছে। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে সাতক্ষীরার সবুজ-সবজি ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি), সাতক্ষীরার তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় মৎস্য ঘেরের ৬৮১ হেক্টর জমির বাঁধ বা আইলে বিভিন্ন ধরনের সবুজ-সবজি চাষ হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় চাষকৃত মৎস্য ঘেরের জমির আইলে হেক্টর প্রতি গড়ে ১৯ মেট্রিক টন হারে মোট ১২ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন সবুজ-সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি বছর মৎস্য ঘেরের আইলে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায়, আর সবচেয়ে কম চাষ হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে ৩৩০ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিক টন হারে ৯ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন, তালা উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর জমির মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে হেক্টর প্রতি ২২ মেট্রিক টন হারে ৩ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন, কলারোয়া উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমির মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে হেক্টর প্রতি ১৮ মেট্রিক টন হারে ৯৯০ মেট্রিক টন, আশাশুনি উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমির মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে হেক্টর প্রতি ১৭ মেট্রিক টন হারে ৯৩৫ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমির মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে হেক্টর প্রতি ১৬ মেট্রিক টন হারে ৬৪০ মেট্রিক টন, দেবহাটা উপজেলায় ২০ হেক্টর জমির আইলে হেক্টর প্রতি ১৪ মেট্রিক টন হারে ২৮০ মেট্রিক টন ও শ্যামনগর উপজেলায় মৎস্য ঘেরের ১৬ হেক্টর জমির মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে হেক্টর প্রতি ১৪ মেট্রিক টন হারে ২২৪ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে (তথ্য সূত্র কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ি, সাতক্ষীরা)।

বিভিন্ন উপজেলা ভিত্তিক সবুজ-সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণ সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, মাটির গুণাগুণ ও পানির লবণাক্ততা ও এলাকার পরিবেশকে দোষারোপ করেন। তারপরও জেলায় বিগত কয়েক বছর যাবৎ মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে ‘বিষমুক্ত সবজি চাষ’ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ধান ও মৎস্য চাষের পাশাপাশি ঘেরের বাঁধ বা আইলে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে জেলার কয়েক হাজার কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন ।

স্থানীয়রা জানায়, মৎস্য চাষীরা ঘেরের বাঁধ বা আইলে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ ও নেট দিয়ে ঝুলন্ত মাচা তৈরি করে বিষমুক্ত সবজির আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরফলে জায়গা কম লাগে, অল্প পরিচর্যায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। মৌসুমী ধান ও মাছ চাষ করে এক-সময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, বর্তমানে তারা সমন্বিত সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছে এবং তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। ‘অল্প পুঁজিতে অনেক লাভ’ এ আশায় উৎসাহিত হয়ে অনেকেই সমন্বিত এই সবজি চাষ করছেন।

সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলার অধিকাংশ মৎস্য ঘের গুলোতে যতদূর চোখ যায় শুধু সুজ আর সবুজের হাতছানি। মৎস্য ঘেরের আইলের উপর নির্মিত সারি সারি মাচায় ঝুলছে করলা, পুঁইশাক, কুমড়া আর শসা সহ নানান সবজি। এ ছাড়াও মৎস্য ঘেরের আইলে অনেকে বর্ষাকালীন সবজির পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি চাষও শুরু করেছেন।

সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি বিল এলাকায় শত শত বিঘা জমির মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়া ও করলার চাষ করা হয়েছে। মাচায় ঝুলছে হাজার হাজার করলা, শতশত লাউ ও কুমড়া। একই সাথে ঘেরের পাড়ে লাগানো হয়েছে পুঁইশাক ও ঢেঁড়স। এসময় নগরঘাটা ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের জাফর সরদারের ছেলে ইসরাইল হোসেন জানান, আমি ১৬ একর জমিতে মৎস্য ঘের করেছি। এ মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলের তিন পাশে সবজি চাষ করেছি, সেখান থেকে কম-বেশি সবজি পাওয়া শুরু হয়েছে। যদিও সবজি চাষ আমার মূল লক্ষ্য ছিলো না, তবে মৎস্য ঘেরের আইলে সবজি চাষ করাটা অধিক লাভজনক। এ কারণে প্রতি বছরই আমি ঘেরের বেড়িবাঁধ বা আইলে সবজি চাষ করে আসছি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমার ১৬ একর জমির তিন পাশের বেড়িবাঁধ বা আইলে মোট সবজি চাষসহ প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে ও বাজার দর ভালো পেলে আশাকরি আমি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবো।

একই এলাকার অপর মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী মোহর আলী জানান, তিনি ১ একর জমিতে মৎস্য ঘেরের পাশাপাশি সবজি চাষ করেছেন। মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধ বা আইলে ডাবল সিস্টেমে বেড়া দিয়ে সবজির মাচা তৈরি করেছেন, আমার লক্ষ্য সবজির মাচা থেকে খরচ বাদে ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় হবে বলে তিনি জানান।

সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য ঘেরের সবজি চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ও বিদেশে সবুজ-সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছরে মৎস্য ঘেরের আইলে সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে মৎস্য ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে সবুজ-সবজির চাষ কৃষিতে নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছেন বলে দাবি করে তারা বলেন, মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে বদলে গেছে তাদের মতো জেলার বহু কৃষকের ভাগ্য।

বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতে সবজির বাজার দর নিয়ে চিন্তিত মৎস্য চাষীরা। চাষীরা বলেন, সবজির বাজার যেন কোন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেজন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বাজার মনিটরিং এর দাবী জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি), সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক নুরুল হুদা জানান, জেলার অধিকাংশ মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলে সবজি চাষ হচ্ছে। মৎস্য ঘেরের বাঁধ বা আইলের মাচায় উৎপাদিত লাউ, উচ্ছে, শসা ও বরবটি ইতোমধ্যে জেলার বাজারগুলোতে আসতে শুরু করেছে। কৃষকেরাও এসব সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন।

জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষের আয়ের একটা বিশাল অংশই এই মৎস্য ঘেরের আইলে সবজি চাষ থেকে আসে। এ কারনে আমরা কৃষকদের পাশে মাঠ পর্যায়ে সব সময় আছি। প্রান্তিক কৃষকদের সবজি বাগান পরিদর্শন করে তাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, মৎস্য ঘেরের আইলে সবজি চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে সাতক্ষীরায়। এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনে কোন সিন্ডিকেট যেন বাঁধা না হয়ে দাড়ায় সেজন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে জেলা প্রশাসন। জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা হবে। কোথাও কোন সিন্ডিকেট কাজ করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির আওতাই আনা হবে বলে তিনি জানান।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com