ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নকশাবহির্ভূত কাজ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২০ মে) দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—খুলনার মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমিন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাতক্ষীরা উপ-বিভাগ-২ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ অফিসের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া ফেরদৌস এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনি দাস।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কনস্ট্রাকশন অব ড্রেনেজ কাম ফ্লাশিং রেগুলেটর ২ ভেন্ট অন কুলুটিয়া খাল প্রকল্পে নকশাবহির্ভূতভাবে ছয় মিটারের শিট পাইলের স্থলে তিন মিটার শিট পাইল ব্যবহার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে উপ-সহকারী অনি দাস জানান, মাটির গভীরে স্থাপন করা ১০৩টি শিট পাইলের দৈর্ঘ্য ৩ মিটার। এরইমধ্যে ৬ মিটার দৈর্ঘ্য হিসাব করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, উক্ত প্রকল্পের প্রতিনিধি সাইট ম্যানেজার মো: আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রকলপস্থলে উপস্থিত শিট পাইল স্থাপনকারি শ্রমিকদের বক্তব্য ও মতামতের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসিকুর রহমান, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: জাকারিয়া ফেরদৌস, উপ-সহকারি প্রকৌশলী অনি দাস মতামত প্রদান করেন যে, মাটির গভীরে স্থাপনকৃত ১৪০টি শিট পাইলের মধ্যে ১০৩টি শিট পাইলের দৈঘ্য ৩ মিটার। এর মধ্যে থেকে ২টি পাইল উত্তেলন করা হয়। বাকি পাইলগুলোর দৈর্ঘ্য একই হওয়ায় সেগুলো আর উত্তোলন করা হয়নি।
সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান
এজাহারে আরও বলা হয়, রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়-এই কাজের এসও অনি দাস মালামালের মেজারমেন্ট নিয়ে পরিমাপ বইয়ে লিপিবদ্ধ করেন। এরপর এসও এবং এসডিই স্বাক্ষরপূর্বক বিল তৈরি করেন । এই বিল এসডিই মো: জাকারিয়া ফেরদৌস সার্টিফাই করেন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসিকুর রহমান বিল অনুমোদন করে আঞ্চলিক হিসাব কেন্দ্র (র্যা ক) খুলনায় প্রেরণ করেন। র্যা ক অফিস উক্ত বিল একাউন্টে পাঠালে প্রকল্প পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করেন।
এতে বুঝা যায়, আসামিরা সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। পরে কমিশন থেকে মামলার অনুমোদন দিলে সোমবার (২০ মে) মামলাটি দায়ের করা হয়।
তদন্তের সময় অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, অনিয়ম ও দূর্নীতি জানার পরও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তা ঠিক না করে ঠিকাদারকে বিল পরিশাধ করে দেওয়াটা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। এ ব্যপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয় যে- এই দূর্নীতির সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরও যোগসাজস রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ