বাংলা৭১নিউজ, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : গরুর ব্যবসা করে এখন আর লাভ হয় না। তবে এই ব্যবসা করি কেন জানেন? ভারতে অনেক টাকা পড়ে রয়েছে তাই। এই টাকা আদায় করার জন্য লোকসান করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ভারতীয়রা যে দাম ধরে গরু পাঠায় সেই দামে গরু বিক্রি করা খুবই কঠিন। আর বাংলাদেশের মাটিতে গরু পা রাখার সাথে সাথে গুনতে হচ্ছে এক কাড়ি চাঁদার টাকা । এই টাকা যাচ্ছে গরুর খাটাল মালিক, অসাধু কিছু বিজিবি সদস্য ,পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতারা। যার ফলে কেউ এর প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। সাতক্ষীরার ঘোনা সীমাস্তে গরুর খাটালে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের একথা গুলো বলেন ব্যবসায়ী বাবলু . ফিরোজ, মশিয়ার,আব্দুর রহমানসহ অনেকে।
এইভাবে সাতক্ষীরার ঘোনা সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চাঁদাবাজদের কবলে । চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট দফায় দফায় আদায় করছে চাঁদা। গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাষ্টমস এর রাজস্বের ৬ থেকে ৭ গুন টাকা চাঁদা দিতে হয় । আর খাটাল মালিকরা বলছেন, টাকার পরিমাণ বাড়েনি আগের মতই আছে । এভাবে প্রতিদিন সাতক্ষীরা সীমান্তের গরু ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় । তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব কোন খোঁজ খবর রাখে না।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, সম্প্রতি ঘোনা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে গরু আসছে। সাতক্ষীরার অন্য সীমান্তেও গরু আসছে তবে সংখ্যায় কম। সেখানেও চলছে চাঁদাবাজি। সীমান্তে খাটাল মালিকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা । আর ভারত থেকে গরু চোরাই পথে আসে বলে কেউ এর প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না । গরু ব্যবসায়ীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী ভারত থেকে একটা গরু বাংলাদেশে আসার পর ৫শ টাকা রাজস্ব দিয়ে বৈধ করতে হয় । আর খাটাল মালিকদের দিতে হয় ৫০ টাকা । অথচ খাটাল মালিকরা ৫৫০ টাকার স্থলে আদায় করছেন ৩ হাজার থেকে ৩৫শ টাকা পর্যন্ত । আর ব্যবসায়ীদের নামে গরু করিডোর না করে খাটাল মালিকরা নিজের নামে সব গরু করিডোর করেন । এই টাকার ভাগ অসাধু বিজিবি সদস্য, পুলিশ সদস্য , জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতার পকেটে যার যার প্রাপ্য অনুসারে পৌঁছে যায় ।
গরু ব্যবসায়ী তজিবব, শহিদুল , লতিফ সাংবাদিকদের জানান , শুধু ঘোনায় নয় কালিয়ানি, শাখরা কোমরপুর , বৈকারি, তলুইগাছা , কাকডাঙ্গা, মাদরা হিজদি, চান্দুড়িয়া সীমান্তে গরু কম আসলেও খাটালের টাকা নেয় ঘোনা খাটালের চেয়ে দুই একশ টাকা কম বেশি মাত্র ।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, ভারত থেকে যে গরু নিয়ে আসা হয় তার দাম ধরা হয় খুব চড়া । সে দামে গরু বিক্রি করা সম্ভব হয়না । তারপর আবার খাটাল মালিকদের নিয়ম বর্হিভূত চাঁদা আদায় । প্রতিদিন লোকসান করে ব্যবসা করতে হচ্ছে । আর ব্যবসা না করলে তাদের ভারতে পড়ে থাকা লাখ লাখ টাকা আর আদায় হবে না । ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, খাটাল মলিকরা যদি চাঁদার পরিমাণ কমাতো তবে সামনে কোরবানি উপলক্ষে প্রচুর গরু আসতো সে দেশ থেকে । আর দেশীয় বাজারে গরু বেশি আসলে কোরবানির পশুর দাম কমতো ।
এদিকে,খাটাল মালিকরা কাষ্টমস করিডোরে নিজেদের লোক পাঠিয়ে শুল্ক রশিদ কেটে নিয়ে আসে। গরুর পিঠে সিল দেওয়া এবং নাম্বার দেওয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব চলে গেছে খাটাল মালিকদের হাতে। গরু রাখার দায়িত্ব পেয়ে খাটাল মালিকরা সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছে। টু-পাইস পাওয়ার কারণে অসাধূ পুলিশ, বিজিবি, চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে খাটাল মালিকরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মোশা সাংবাদিকদের জানান, খাটালে গরু প্রতি ২৫শ টাকা নেওয়া হয় । তার মধ্যে ৫শ টাকা ভ্যাট খরচ । বাকি টাকা তার আনুসঙ্গিগ খরচ হয়।
সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবির ঘোনা ক্যাম্পের সুবেদার আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিজিবি শুধু মাত্র সিলিপ লিখে দেন । গরু প্রতি কত টাকা আদায় করা হয় এটা জানার বিষয় নয় বিজিবির । এসবের সাথে বিজিবি জড়িত নয়।
সাতক্ষৗীরা সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ খাটালের অনুমতি দেয় না । যারা অনুমতি দেয় তাদের জিঙ্গাসা করেন কিভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে । যারা অনুমতি দেয় তারা যদি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আমরা সাথে থাকবো ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো: মহিউদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, তারা শুধু মাত্র খাটাল পাহারা দেওয়ার অনুমতি দেয় । অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি কে দেখবে ? যাদের দেখার দায়িত্ব তারা এর সাথে জড়িত কি- না খোঁজ খবর নেন । তবে তার কোন লোক এর সাথে জড়িত নন ।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস