বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ ১০/৩। অস্ট্রেলিয়া ১৪/৩। শুরুর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস যে ২৬০ রানে থেমেছে, তা এতক্ষণে সবারই জানা হয়ে গেছে। এখন অস্ট্রেলিয়া এখান থেকে কতদূর যেতে পারে, সেটাই দেখার।
আগেরদিন ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছিলেন, দু’দলেরই সুযোগ রয়েছে ফিফটি-ফিফটি। রোববার মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনে সকালের বাংলাদেশ এবং বিকালের অস্ট্রেলিয়া যেন সেই ফিফটি-ফিফটিতে মিলে গেল।
ক্রিকেটের বরপুত্র স্যার ডন ব্যাডম্যানের জন্মদিন এবং সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ৫০তম টেস্টের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে দু’দল মিলে উইকেট হারিয়েছে ১৩টি। সফরকারীরা দিন শেষ করেছে ওই তিন উইকেটে ১৮ রানে।
সাত উইকেট হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে ২৪২ রানে। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ৩ এবং ম্যাট রেনশ ৬ রানে ব্যাট করছেন। বাংলাদেশ যে আজ শুরুতে ‘ডেঞ্জারম্যান’ স্মিথকে ফেরাতে চাইবে, সেটা কালই জানিয়ে দিয়েছেন সাকিব।
ভীতিজাগানিয়া সকালের পর শেষ বিকালে স্পিন ভেলকিতে অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি কার্যত নিজেদের করে রাখল বাংলাদেশ। নাটকীয় শুরু ও শেষের মাঝের সময়টুকুতে রাজত্ব করেছেন নিজেদের ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা সাকিব ও তামিম। চতুর্থ উইকেটে ১৫৫ রানের অনবদ্য জুটি গড়ার পথে দু’জনই পেয়েছেন ফিফটি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে হাজারবার মিরাজের নামটা উচ্চারিত হয়েছে। যেন এই অফ-স্পিনার একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। তার ওপর প্রত্যাশাটা শুধু আবেগের নয়, সেটা কালই বুঝিয়ে দিলেন মিরাজ। প্রথমদিনে তার বোলিং ফিগার ৪-২-৭-১! মিরাজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই ওয়ার্নারকে এলবিডব্ল– দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ওয়ার্নার।
পরের বলেই ওয়ার্নারকে ফের এলবিডব্ল–র ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপর্যয়ের শুরু। পরে সাকিবের বলে উসমান খাজা নিজের ভুলেই মুশফিকের থ্রোতে সৌম্যর হাতে রানআউট হয়ে ফেরেন। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নাথান লায়নকে নামিয়ে দিনটা পার করতে চেয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ। যদি আগে জানতেন, তাকেই আজ মাঠে নামতে হবে, তাহলে হয়তো লায়নকে বাঘের মুখে ঠেলে দিতেন না। লায়নকে ফিরিয়ে সাকিব তুলে নিলেন নিজের প্রথম উইকেট। শেষবেলায় মিরাজ-সাকিবরা অস্ট্রেলিয়াকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আজ ঠিক কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
সকালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার পর অসি পেসার প্যাট কামিন্সের ছোট্ট এক দমকা হাওয়া, তাতেই তছনছ বাংলাদেশের টপঅর্ডার। সকালের প্রথম চার ওভার, আরও নির্দিষ্ট করে বললে, কামিন্সের প্রথম দুই ওভার। তখনও প্রেস বক্সে অনেকে ল্যাপটপই ওপেন করেননি। বাইরে থেকে কেউ একজন ফোন করে জানতে চাইলেন, খেলা কী শুরু হল? এমন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে এক সাংবাদিক জোরে জোরে বলতে লাগলেন, ‘খেলা শেষ হতে যাচ্ছে, এখন শুরুর কথা শুনছেন!’ আসলেই তাই। খেলা তো শুরুর আগেই কামিন্সের ওই দুই ওভারে শেষ হতে বসেছিল। সৌম্য সরকার (৮), ইমরুল কায়েস (০) ও সাব্বির রহমানকে (০) ফিরিয়ে স্পিন স্বর্গে কীভাবে পেস রাজত্ব করতে হয়, সেটা দেখিয়ে দিলেন কামিন্স। চার ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর তখন ১০/৩! ২০০৪ সালের পর এই প্রথম টাইগাররা ১০ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারায়।
কাল ছিল স্যার ডন ব্রাডম্যানের জন্মদিন। ১৯০৮ সালের এই দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন ৫২ টেস্ট খেলা সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। সেই দিনেই ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে মাঠে নেমেছিলেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। এমন দিনে নির্ভার হয়ে খেলার সুযোগই পেলেন না দুই বন্ধু। দিনের পঞ্চম ওভার থেকেই প্রবল চাপ। সাকিব তো আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের ২-০তে জেতার ভালো সুযোগ রয়েছে। সিরিজ জেতার আত্মবিশ্বাস রয়েছে তামিমেরও।
সেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উইকেটে টিকে থাকার চোয়ালবদ্ধ সংকল্পতেই শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় স্বাগতিকরা। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বলার মতো সাফল্য বলতে এ জুটিই। অথচ ৫০ টেস্টে এটি সাকিব-তামিমের মাত্র পঞ্চম জুটি। গত বছর দেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্টেই তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মন্থর এক ইনিংস খেলে স্বভাববিরোধী রূপ দেখিয়েছিলেন তামিম। কাল একটা সময় তামিমের রান ছিল ৩৩ বলে ১৭। সেখান থেকে ৬৭ বলে হল ১৮। মাঝে ২৪ বলে কোনো রানই পাননি। অন্যপাশে সাকিব নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
সকালের ধাক্কাটা সামলে বাংলাদেশ যখন লাঞ্চে যায়, সাকিব ৬২ বলে তখন ৪৮*, তামিম ৯১ বলে ৩৩*। স্কোর ওই তিন উইকেট হারিয়ে ৯৬। বিরতির পর প্রথম ওভারেই ক্যারিয়ারের ২২তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন সাকিব, ৬৫ বল খেলে। তামিমের ২৩তম ফিফটি পূর্ণ করতে বল লেগেছে ১১৯টি। এরপর অপেক্ষা ছিল জোড়া শতকের। কিন্তু শিরোনামটা পঞ্চাশে শতক না হয়ে, পঞ্চাশে পঞ্চাশ হয়ে রইল।
দু’জনেই প্রায় একই ধরনের বল খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলটা কাট করতে গিয়ে তামিম ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে এবং সাকিব প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। তামিম ফিরেছেন সেঞ্চুরি থেকে ২৯ রান দূরে থাকতে। সাকিবের আফসোস ১৬ রানের জন্য। চতুর্থ উইকেটে তাদের ১৫৫ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ দু’জনের বিদায়ের পর মুশফিকও কিছু করতে পারেননি।
দুই বছর পর টেস্ট খেলতে নামা নাসির হোসেন ও মিরাজ ৪৩ রানের আরও একটি কার্যকরী জুটি গড়ায় বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশ’ পার হয়। মিরাজ অবশ্য আউট হন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে।
কিন্তু রিভিউ শেষ হয়ে যাওয়ায় আম্পায়ারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি তিনি। সাব্বির এবং মুশফিক আগেই রিভিউ নিয়ে কোটা শেষ করে রেখেছিলেন। মিরাজ ফেরেন মূল্যবান ১৮ রান করে। এদিন লায়ন তিনটি উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অষ্টম বোলার হিসেবে ২৫০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন। তিনটি করে উইকেট নেন কামিন্স ও অ্যাশটন অ্যাগার।
বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও টেস্ট ম্যাচের প্রথমদিনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। হালকা বৃষ্টিতে মাঝে খেলা আধঘণ্টার মতো বন্ধ ছিল।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস