বাংলা৭১নিউজ, শামছুর রহমান শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার সময় শাহজাদপুর পৌরমেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) হালিমুল হক মিরুর বাড়িতে হামলার ঘটনায় তার স্ত্রী লুৎফুননেছা পিয়ারীর দায়ের করা মামলার ১০ আসামি আদালতে আত্মসর্মপণ করার পর জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন সিরাজগঞ্জ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক । অপরদিকে, একই মামলায় শাহজাদপুরের আমলী আদালতের বিচারক পলাতক ৪ আসামি বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। মঙ্গলবার সকালে উভয় আদালত দন্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনের দুটি ধারায় পৃথক ভাবে এ আদেশ দেন বলে বাদির আইনজীবীরা জানিয়েছেন। আত্মসর্মপণ করা আসামিরা হলো- সোহেল, জাহান, জীবন ওরফে বেলাল, রাসেল, এরশাদ, তারিকুল, আল মাহমুদ, বিপ্লব, আল আমিন ও সেলিম। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীরা হলো- শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সভাপতি মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল, সাবেক ভিপি আব্দুর রহিমের শ্যালক মাসুদ, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহু ও স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপনের ভাগ্নে মিঠু। বাদির আইনজীবী সিনিয়র অ্যাড. সানোয়ার হোসেন জানান, “মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়িতে হামলার ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার বিস্ফোরক আইনের ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১০জন সিরাজগঞ্জ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ফাহ্মিদা কাদেরের আদালতে আত্মসর্মপণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।” বাদির অপর আইনজীবী সিনিয়র অ্যাড. রফিক সরকার জানান, “মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়িতে হামলার ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার দন্ডবিধি ধারায় আজ মঙ্গলবার আসামীদের শাহজাদপুর আমলী আদালতে হাজির হওয়ার দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু কোন আসামী হাজির না হওয়ায় পলাতক ৪ আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হাসিবুল হক। ১৯ জনের মধ্যে বাকি ১৫ জন উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছেন। ২৫ জানুয়ারী তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হবে।” উল্লেখ্য, গত বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরের পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়িতে হামলা, আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি ও স্থানীয় ‘সাপ্তাহিক জনতার মশাল’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আব্দুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন মারা যায়। ওই ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই সময় মেয়রের বাড়িতে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় মেয়রের স্ত্রী লুৎফুননেছা পিয়ারী বাদি হয়ে থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা মামলা না নেয়ায় তিনি পরবর্তীতে ২৩ শে এপ্রিল ১৭ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে সকল আসামীদের বাদ দিয়ে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর মামলার বাদি আদালতে নারাজি দিয়ে মামলাটি জুডিশিয়াল তদন্তের জন্য আবেদন করেন। আবেদনটি আমলে নিয়ে জুডিশিয়াল স্বাক্ষী গ্রহণের পর ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে আদালতে প্রমাণিত হয়। পরে মামলাটি দন্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনের দুটি ধারার মধ্যে শাহজাদপুর আমলী আদালতের বিচারক দন্ডবিধি ধারায় আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন এবং বিস্ফোরক আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এ নথি প্রেরণ করেন। শুনানি শেষে ২রা জানুয়ারি ১৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক। অপরদিকে, সাংবাদিকের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় সাময়িক বহিস্কৃত মেয়র মিরু এখনও জেলহাজতে রয়েছে। জামিনে রয়েছেন ২৯ আসামি, আর পলাতক রয়েছে ৮ আসামি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস