বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক প্রয়াত শাহ আলমগীর স্মরণে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রতিমুহূর্তে বদলে যাচ্ছে সাংবাদিকতা। এর সঙ্গে তাল মেলাতে হলে নিজের উদ্যোগে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের জায়গা খুঁজে নিতে হবে। শাহ আলমগীরদের মতো উদ্যামী মানুষের দেখানো পথে হাঁটতে হবে।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রয়াত শাহ আলমগীরের স্বজন ও সুহৃদদের আয়োজনে ‘সাংবাদিকতায় শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়নের জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই না সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রিত হোক। সেটা সরকার হোক কিংবা মালিক পক্ষ। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশাকে যদি সম্মান না দিই, তাহলে সমাজ কীভাবে এগিয়ে যাবে? একজন সাংবাদিক সমাজ ও রাষ্ট্রের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। যার ফলে তার বন্ধুর চেয়ে শত্রুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ ধরনের পেশা যারা বেছে নেবেন, তাদের যদি আমরা সম্মান দিতে না পারি তবে তিনি কেন সাংবাদিকতায় থাকবেন?
শিক্ষক নেতা আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট একটি নিয়ন্ত্রণমূলক আইন। আজকে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে, সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু না কিছু আইন থাকা দরকার। কিন্তু কোনোভাবেই সেটি যেন সাধারণের মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না করে।
তিনি আরো বলেন, সংবিধান সর্বোচ্চ আইন। সেটিকে আইন অনুসারে আমরা অধিকারগুলো পাচ্ছি কি না সেটা দেখা দরকার। অ্যাক্টের যেমন দরকার আছে, তেমনি সেটি যেন আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ না করে সেটাও দেখার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ধারা যে বহু মামত্রিক হতে পারে সেটা শাহ আলমগীর দেখিয়েছেন। শাহ আলমগীরকে মূল্যায়ন করতে হলে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করা শিখতে হবে। সাংবাদিকদের জ্ঞান অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সাংবাদিকতার উন্নয়নে শাহ আলমগীরের এত কাজ কাছাকাছি সময়ে কেউ করেনি। এর মূল্যায়ন হওয়া দরকার। শাহ আলমগীরের দিকে হাত তুলে কেউ বলতে পারে না, তিনি দুর্নীতিবাজ ছিলেন। তার মতো সৎ ও সাহসী হতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, শাহ আলমগীর একদিকে ভালো সংগঠক ছিলেন, অন্যদিকে ভালো সাংবাদিকতার বিষয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি সবাইকে সম্মান করতেন। কোনো কারণে যদি কাউকে অপছন্দ হতো, সেটি তাকে বুঝতে দিতেন না। সবাইকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন।
শাহ আলমগীরের বোন তাহমিনা চৌধুরী বলেন, দাদা একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন। তার অনেক কবিতাই পরে গান হয়েছে, সেগুলো আমরা জানতাম না। বাবা-মা পারলে আমাকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দেন, শুধু দাদার জন্যই আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তৃতা করেন শাহ আলমগীরের সহধর্মিণী ফৌজিয়া বেগম মায়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক তাহমিনা খাতুন, সংসদ সচিবালয়ের পরিচালক লাবণ্য আহমেদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু ও নির্বাহী সদস্য সাকিলা পারভীন প্রমূখ। সূচনা বক্তব্য উত্থাপন করেন একাত্তর টিভির যুগ্মপ্রধান বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি