১৯৪১ সালে মক্কায় লাগাতার সাতদিন বৃষ্টি হয়। ফলে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে প্রায় ছয় ফুট পানি হয়ে ভায়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বন্যার মধ্যে বাহরাইনের একজন পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করেন। তাওয়াফের ছবি তোলার পর শায়খ আলি আল আওয়াদি নামের বাহরাইনের লোকটি সবার কাছে পরিচিত হন।
৮ দশক আগে তোলা ছবিতে দেখা যায়, আল আওয়াদি পানির মধ্যে সাঁতার কাটছেন। কাবা প্রাঙ্গণে মাকামে ইবরাহিম থেকে মাত্র দেড় মিটার দূরত্বে আছেন। এদিকে তাঁর ভাই ও বন্ধুরা পেছনে কাবার দরজায় বসে আছেন।
২০১৫ সালে তাওয়াফ সাঁতার কেটে তাওয়াফ করা আল আওয়াদি ৮৬ বছর বয়সে মারা যান। এক বিবৃতিতে আল আওয়াদি বলেন, ‘তখন আমার বয়স মাত্র ১২ বছর। মক্কার একটি স্কুলে পড়ছি। লাগাতার সাতদিন অবিরত বৃষ্টি হয়। তখন ও দুই বন্ধু মিলে একজন শিক্ষকের সঙ্গে হারাম শরিফে যাই। পুরো কাবা প্রাঙ্গণে ভয়াবহ বন্যা দেখতে পাই। তখন আমি পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণ তাওয়াফ শুরু করি।’
মৃত্যুর আগে ২০১৩ সালে কুয়েতের টিভি আল রাই টেভিতে স্মৃতিচারণ করে শায়খ আল আওয়াদি বলেন, ‘বন্যার পানিতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। এমনকি বাড়ি-ঘর, গাড়ি, ও গবাদি পশু ভেসে যেতে দেখেছি। সাতদিন পর বৃষ্টি থামলে আমার ভাই হানিফ, বন্ধুবর মুহাম্মদ আল তাইয়িব, ও হাশিম আল বার মসজিদুল হারামের অবস্থা দেখার জন্য যাই। আমাদের শিক্ষক আব্দুল রউফ-ও সঙ্গে ছিলেন।
সাঁতার কেটে তাওয়াফ করছেন শায়খ আল আওয়াদি। এদিকে পবিত্র কাবা ঘরের দরজায় বসে আছেন তাঁর দুই বন্ধু।
তিনি আরো বলেন, ‘একজন দক্ষ সাঁতারু ছিলাম। তাই সাঁতার কেটে তাওয়াফের চিন্তা মাথায় আসল। আমরা চারজন পানিতে সাঁতার শুরু করি। এদিকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আমাদের থামানোর চেষ্টা করে। পুলিশ ভেবেছে, সাঁতার কেটে আমরা হাজরে আসওয়াদ চুরি করার চেষ্টা করছি। আমি পুলিশকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে আমরা শুধুমাত্র সাত চক্কর দেব। এদিকে অপর দুই বন্ধু ক্লান্ত হয়ে সাঁতার বন্ধ করে কাবা ঘরের দরজায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।
শায়খ আল আওয়াদি আরো জানান, ‘আদেশ অমান্য করায় পুলিশ আমাকে গুলি করে কিনা সেই ভয়ে তটস্থ ছিলাম। তবে মনে মনে আনন্দ হচ্ছিল। কারণ পৃথিবীতে এভাবে সাঁতার কেটে কাবা তাওয়াফের ঘটনা খুবই বিরল। পরে জানতে পারি, আসলে পুলিশের বন্দুকে গুলি ছিলো না।’
বর্তমানে মসজিদুল হারামের জাদুঘরে ও বিভিন্ন প্রাচীন চিত্রকলার দোকানে সাঁতার কেটে তাওয়াফের দুর্লভ ছবিটি ঝুলানো আছে। আল আওয়াদির ছেলে আব্দুল মজিদ অনেক বছর আগে হজ করতে গিয়ে মক্কা থেকে বাবার দুর্লভ ছবি বাবাকে উপহার দিতে কিনে আনেন।
তবে তিনিই প্রথম সাঁতার কেটে তাওয়াফ করেছেন বিষয়টি মোটেও তা নয়। বরং মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত থেকে জানা যায়, সাহাবি আবদুল্লাহ আল জুবায়ের (রা.) প্রথম সাঁতার কেটে কাবা তাওয়াফ করেছেন।
এছাড়াও আরো অনেকে সাঁতার কেটে পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করেছেন। প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার আল দিন বিন জামাআ (রহ.)-ও সাঁতার কেটে তাওয়াফ করেন। এমনকি তিনি প্রতি বার হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন।
ইসলামের ইতিহাসে সাঁতার কেটে কাবার তাওয়াফের ঘটনা খুবই বিরল। মক্কা নগরীতে বেশ কয়েক বার বন্যা হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, তবে তা সাঁতার কাটার পরিমাণ মতো ছিল না। তাছাড়া বন্যা দুই বার সংঘটিত হয়। একবার ইসলামী যুগে। আরেকবার আজ থেকে ৮০ বছর আগে।
সূত্র : আল আরাবিয়া
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ