বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ‘মুসলিমবিরোধী’ পরিচয় ফুটিয়ে তুলতেই সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মঙ্গলবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানের সময়েও ঘটনা হয়েছিল, হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল, খাদ্য দেওয়া হয়েছিল, পানি দেওয়া হয়েছিল, ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা আপনি রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেবেন না, কারণ আপনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে দেখাতে চান আপনি মুসলমান বিরোধী।
“আপনি মুসলিম বিরোধী- এই পরিচয়টা ফুটিয়ে তোলার জন্যই আজকে ওইদিকে রোহিঙ্গারা গুলি খাচ্ছে, শিশুরা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে, খাদ্যের জন্য ছটফট করছে, আর এইদিকে বাংলাদেশ তাদেরকে ঠেকাচ্ছে তারা যেন আসতে না পারে।”
রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে সরকারের ‘ভুল নীতি’ ও ‘দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতাকে’ দায়ী করে রিজভী বলেন, “তাদের ভুল নীতি ও দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে আজকে রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। একটা জাতিকে, একটা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিকে তিলে তিলে যুগের পর যুগ নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, সারাদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভুতিশীল।
“অথচ বাংলাদেশ সরকার নির্বিকার, নিশ্চুপ এবং তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে রোহিঙ্গাদের মৃত্যু, তাদের অনাহারে-অর্ধাহার অবস্থা। আমরা সরকারের এহেন ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতের পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন,এর মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।
আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত অভিযানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরব ভূমিকারও সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “আজকে এতো আন্তর্জাতিক সংস্থা অন্যান্য দেশে কিছু হলেই কত তৎপর হয় তারা। অথচ রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা খুব একটা তাদের তৎপরতা দেখালাম না।”
‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে ‘বিচার বিভাগকে আক্রমণ করে আওয়ামী দু:শাসনকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’ শীর্ষক এই মানববন্ধন হয়।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে সরকার সরাসরি বিষোদগার করে মল্লযুদ্ধে নেমেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
“আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য যেখানেই দেখবে ন্যূনতম বাধা আসছে সেখানেই প্রচণ্ড আক্রমনে তা সমতল করে ফেলবে, সেটা রাখতে দেবে না, ভেঙে ফেলবে। সেটারই আমরা এখন নমুনা দেখতে পাচ্ছি- প্রধান বিচারপতিকে টার্গেট করে ওরা যে কথাগুলো বলছেন, প্রকাশ্যে তার বিচারের কথা বলছেন।
“প্রধান বিচারপতির কাছে ওবায়দুল কাদের গেলেন। আবার রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে ঢেকে পাঠালেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার কথা ছিল না, প্রধানমন্ত্রী গেলেন। আরো দুই-একজন মন্ত্রী গেলেন। তাকে বলা হচ্ছে যে, তার (প্রধান বিচারপতি) সাথে মল্লযুদ্ধ চলছে- ‘আমাদের কথা শুনো, তুমি রায়ের পর্যবেক্ষণ থেকে ওইগুলো বাদ দাও’।”
রিজভী বলেন, “একদিকে তারা (সরকার) সমঝোতা করছে, অন্যদিকে তারা মানসিকভাবে ঘায়েল করার জন্য তার (প্রধান বিচারপতি) কত কাঠা জমি আছে, সেটা বৃদ্ধি করেছেন কী করেননি- বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, দুদক সবাইকে লেলিয়ে দিয়েছে যে, প্রধান বিচারপতিকে ঘায়েল করার কথা বলো। তাদের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বশেষ পর্যন্ত তার সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলছেন।”
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক মিলন মেহেদি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস