শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
মাও সেতুংয়ের জন্মদিনে চীনের আকাশে ‘গোপন বৈশিষ্ট্যের’ যুদ্ধবিমান ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপি নেতার পরিবারকে বাড়ি দিচ্ছেন তারেক রহমান নাশকতাকারীরা কোনোভাবেই দেশপ্রেমিক হতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা গুম অবস্থায় ভারতের কারাগারে যাওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন ঢাকা মেইলের সাংবাদিক কাজী রফিক আর নেই পাকিস্তানে পৃথক সংঘর্ষে এক মেজর ও ১৩ সন্ত্রাসী নিহত ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে ড. ইউনূসের শোক বারবার জাতীয় পতাকাকে খামচে ধরছে পুরোনো শকুন: উপদেষ্টা আদিলুর রহমান আরাকান থেকে পালিয়ে দেশে ঢুকেছে আরও ৩৪ রোহিঙ্গা তেল আবিব বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি হুথিদের আবাসন মেলায় ৪০৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট-প্লট বুকিং নির্বাচনেও যেতে হবে কিন্তু তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: দেবপ্রিয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীর বরখাস্তের আদেশ বাতিল: আইএসপিআর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রধান ফটক হলো নির্বাচন: ফখরুল সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শুরু সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হতে হবে, কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবা ঠিক নয় জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল হবে না: সারজিস আলম খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নির্বাচনে অংশ নিতে আইনি বাধা নেই ঢাকামাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫ নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তদন্ত চলছে: ফায়ারের ডিজি

সরকারের ভুল পরিকল্পনায় বিদ্যুতের গ্রাহকরা ভুগছেন

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেই ভর্তুকি কমাতে গিয়ে চাপ পড়ছে গ্রাহকদের ওপর৷ তাই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা৷

পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতর দাম শতকরা ৫৮ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ বলা হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব নেই৷ কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়বে৷ কারণ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবে তা হয় না৷ 

গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৬ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে৷

বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা৷ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও ৩ টাকা ৩৯ পয়সা৷ এই বছর বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা৷

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সংকটে পড়েছে৷ এর জন্য প্রধানত সঠিক পরিকল্পনা না নেয়াকে দায়ী করা হচ্ছে৷

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. এজাজ হোসেন বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ খাতে কিছু ভুল পরিকল্পনার কারণে এখন আমরা খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছি৷ করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী একটা প্রভাব আছে৷ কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে আমাদের এখানে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভুল পরিকল্পনা এবং দুর্নীতির কারণে৷ আমরা ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ পাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে, যাতে অনেক বেশি খরচ পড়ে৷” 

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি৷ কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা আছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি৷ ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি৷ বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ২৭ লাখ৷ সেচ সংযোগ চার লাখ ৪৬ হাজার৷

অলস পড়ে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রভাড়া গুনতে হয় সরকারকে৷ এসব অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বিদ্যুতের দাম বাড়ার আরো একটি বড় কারণ৷

অধ্যাপক এজাজ বলেন, ‘‘সরকারের একটা ভিশন ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোবে তাতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বাড়বে৷ কিন্তু সেভাবে বিদ্যুৎভিত্তিক উৎপাদন বা শিল্প কারখানা হয়নি৷ ফলে পরিকল্পনা সঠিক হয়নি৷ সরকারও সেটা বুঝতে পারছে৷ এখন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন৷”

দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ১৫২টি৷ সাধারণভাবে অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস’ (আইইইএফএ) ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দেয়া হয়৷

তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷

সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যেটুকু বিদ্যুৎ কেনা হয় তার দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পড়ে যাচ্ছে, যা একটি বিস্ময়কর ঘটনা৷”

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, ‘‘ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এমন যে সেখানে উৎপাদন করলে বেশি ভর্তুকি দিতে হয়৷ বসিয়ে রাখলে বরং কম ভর্তুকি৷ এগুলো হলো জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য৷ এখন গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোতে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি৷ কিন্তু শীতকালের চাহিদা হিসাব করে তো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট করা যাবে না৷ সর্বোচ্চ চাহিদার হিসাব করতে হবে৷ যখন শীতকালে বিদ্যুৎ কম লাগবে তখন তো কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখতে হবে৷”

তার কথা, তেলের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে, কিন্তু এলএনজির দাম আরো বেড়েছে৷ তাই এখন গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, কম খরচে হতে পারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ৷

বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা প্রকৌশলী শামসুল আলম দাবি করেন, ‘‘এইসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আসলে সৎ উদ্দেশ্যে করা হয়নি৷ এর উদ্দেশ্যই ছিল একটি গোষ্ঠীকে লাভবান করা৷ সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তারা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ভাড়া পাচ্ছে৷ এখন তার চাপ আসছে সাধারণ মানুষের উপরে৷”

তিনি বলেন, ‘‘ভারত থেকে আমরা বিদ্যুৎ আমদানি করি বাণিজ্যিক রেটে৷ তাও প্রতি কিলোওয়াট ৬ টাকা ২৫ পয়সা দামে, যা বাংলাদেশের তুলনায় কম৷ এখন সারাদেশে বিদ্যুৎ দেয়া হলো৷ কিন্তু মানুষ যদি উচ্চমূল্যের কারণে বিদ্যুৎ না কেনে তাহলে কী হবে? আসলে পরিকল্পনাটা গণমুখী ছিল না৷ যারা পরিকল্পনা করেছেন তাদের মাথায় ছিল লুটপাট৷”

চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়৷ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াচ্ছে ৪.২৪ টাকায়৷ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে পিডিবির৷

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ‘‘সরকার যদি এখন ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় তার প্রভাব বিদ্যুতের সঙ্গে যুক্ত সব খাতে পড়বে৷ শিল্প উৎপাদনের খরচ বাড়বে৷ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে৷ কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়বে৷”

তাই তিনি মনে করেন, ‘‘এখনই ভর্তুকি না কমিয়ে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বের করতে হবে৷ অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে৷ সরকারকে নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট পলিসিতে যেতে হবে৷”

আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম মনে করেন, ‘‘ভর্তুকির পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে হবে৷ সবাইকে সাধারণ ভর্তুকি না দিয়ে হাউজহোল্ড ভিত্তিক ভর্তুকি দিতে হবে আয়-ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে৷ তাহলে যার ভর্তুকি প্রাপ্য, তিনি পাবেন৷ ভর্তুকিও কমে আসবে৷”

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com