বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: সরকারের নির্বিকার আচরণের কারণেই বিদেশী হত্যা থেকে শুরু করে শিয়া সম্প্রদায়, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মগুরুদের ওপর নৃশংস আক্রমণ ও সিরিজ হত্যা ক্রমাগতভাবে চলমান থাকছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বান্দরবানের একটি বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা জানিয়ে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, “ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মনে হয় অশুভ পশুশক্তির কাছে নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদন করেছে। বিদেশী হত্যা থেকে শুরু করে শিয়া সম্প্রদায়, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মগুরুদের ওপর নৃশংস আক্রমণ ও সিরিজ হত্যা সরকারের ভ্রুক্ষেপহীনতার কারনেই ক্রমাগতভাবে চলমান থাকছে। আমাদের ভূখন্ডের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতির পরম্পরায় সম্প্রীতি ও পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছাবোধ এক অনবদ্য জ্বাজল্যমান উপাদান, সেখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও সংঘাতের কোন অধ্যায় নেই। এটি একটি অতি সাম্প্রতিক প্রপঞ্চ।
ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই বন্য প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই সমস্ত পৈশাচিক ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। এটি বিরোধী দলের প্রতি তাদের স্বভাবসূলভ অন্ধ হিংসার বহি:প্রকাশ। তাদের বক্তব্যের ধরণ দেখে মনে হয়-তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে উল্লিখিত হত্যাকান্ডগুলোয় প্রকৃত দুস্কৃতিকারিদের আস্তানা ধ্বংস করে তাদের পাকড়াও করা নয়, বরং এই সমস্ত বর্বর হত্যাকান্ডগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, আর সেজন্যই চটজলদি বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানো হয়। এই কারনেই কান্ডজ্ঞানহীন জঙ্গীগোষ্ঠী উৎসাহিত হয়ে প্রাণবিনাশী কর্মকান্ড পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, যে সরকার ভিন্নমতকে দমন করতে, সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্দয়ভাবে ব্যবহার করে চলেছে, সে সরকার নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে লাশ আর রক্তপাতকে চিরস্থায়ী সঙ্গী করে নিতে যে দ্বিধা করবে না, তা বলাই বাহুল্য। জনমতকে তাচ্ছিল্য করে প্রধানমন্ত্রীর জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা, দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি ও একগুঁয়েমি ও নিজ দলের লোকদের অনাচারকে প্রশ্রয় দেয়ার কারনেই দেশে অপরাধকর্ম ও দুস্কৃতিকারিদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের নির্বিকার আচরণের কারনেই একের পর এক হত্যাকান্ডগুলোতে দেশের রাজনৈতিক কুজ্ঝটিকা ঘন ও রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
দেশে জঙ্গীদের অস্তিত্ত্ব নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও জনমনে এক বড় ধরণের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলে সরকার কোন নীল নকশা ধরে এগুচ্ছে ? ভোটারবিহীন সরকার দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। আর সেজন্যই তারা দানবীয় চক্রান্ত এঁটে চলেছে। কারন আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় উৎসাহী একটি দল। মানব সভ্যতা বিনাশী মতাদর্শে বিশ্বাসী জঙ্গীদের উৎপাত শুরু হয় আওয়ামী আমল থেকেই। আমরাই ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করি।
এদেশ কেন জঙ্গীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হলো ? আওয়ামী শাসনামলেই কিভাবে বেআইনী, সভ্যতা, প্রগতি বিরোধী অশুভ জঙ্গীগোষ্ঠীর বিচরণ এতো তীব্র হলো ? কেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ও ধর্মগুরুদের জীবন যাচ্ছে, আর কতদিন সাধারণ জনগণকে ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষমতা সরকার হারিয়ে ফেলেছে। কারন গণবিরোধী, ভোটারবিহীন সরকার আসল কাজের পরিবর্তে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই বেশী ব্যস্ত।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ধাম্মা ওয়ামা মং শৈডি চাক এর আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বেগম জিয়া নিহতের পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম