বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল আগামী জাতীয় নির্বাচনে ডেলিগেট পাঠানোর বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছে। আমরা উত্তরে বলেছি, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হলে পর্যবেক্ষকদের স্বাগতম, আর এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের আসা সমীচীন হবে না।
শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে গুলশান ২-এর ৮৪ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলকে এ কথা জানানো হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।
বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ. রব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জামায়াত আমির বলেন, নির্বাচন কীভাবে স্বচ্ছ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সফররত প্রতিনিধিদল আগামী জাতীয় নির্বাচনে ডেলিগেট পাঠানোর বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছে। আমরা এর উত্তরে বলেছি, নিরপক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে স্বাগতম, আর সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে ডেলিগেট আসা সমীচীন হবে না। এর আগে একতরফা নির্বাচনেও বিদেশি ডেলিগেট এসেছিল, কোনো রেজাল্ট হয়নি।
আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ২০১৪ এবং ১৮ সালের নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছিল তা বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার। ১৪ সালে নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জন নির্বাচিত হয়ে গেছেন, সে সরকারকে নির্বাচিত সরকার বলা যায় না। ১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা যে কথা বলি, সে কাজ করি। বললেন, ১৮ সালের নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ। অথচ আগের রাতেই ভোট সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে প্রতিয়মান হয় আওয়ামী লীগের মুখের কথা এক, বাস্তব ভিন্ন। এদের অধীনে কখনো সুস্থ নির্বাচন হতে পারে না। এ দেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবে না।
১০ জুনের রাজধানীতে জামায়াতের সমাবেশ প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বিগত ১০ বছর আমাদের কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তখন কেউ প্রশ্ন করেনি কেন আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে একসঙ্গে রাজপথে ছিলাম, সরকারের সঙ্গেও ছিলাম। দশ দফা দাবিতে আমরা মিছিল করলাম। আমাদের মিছিলে হামলা হলো, আমাদের আমিরকে গ্রেফতার করা হলো। বিএনপি প্রতিবাদও জানালো না। চলমান আন্দোলন নিয়ে অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করলেও আমাদের সঙ্গে করলো না!
সংলাপের প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরপক্ষ নির্দলীয় সরকার গঠিত হবে এবং সেখানে নির্বাচন নিয়ে যদি সংলাপ হয়, শুধু সে সংলাপই গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সবকিছু প্রস্তুতি নেওয়ার পর সিলেটে আমাদের সমাবেশ করতে দেয়নি। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলে এখানেও সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হয়নি। আমরা আগামী শুক্রবার একই স্থানে সমাবেশ করতে চাই। আমরা আশা করি, সরকার সমাবেশের অনুমতি দেবে।
১০ জুন আমাদের একটি সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় মনে হয়েছিল আওয়ামী লীগ কিছুটা গণতান্ত্রিক হয়েছে। কিন্তু তাদের সেই পুরানো চেহারা আবারও ফুটে উঠেছে। সবকিছুতেই প্রমাণ হয় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আজকের এ বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলও একমত পোষণ করেছেন।
জামায়াতের রাজনৈতিক নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিবন্ধিত দল। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এক লাখ ১০ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে নেওয়া হয়েছে। একতরফাভাবে আদালতকে ব্যবহার করে আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। যদি সুষ্ঠু বিচার পাই তাহলে নিবন্ধন ফিরে পাবো।
বড় কথা হচ্ছে দলের সঙ্গে সভা-সমাবেশে কোন শর্ত নেই। জামায়াত কখনো সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। জামায়াত গণতান্ত্রিক ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল। আমাদের এ কথায় একমত পোষণ করেছেন বিধায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের দাওয়াত করেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি