শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার! হাইকোর্টের নতুন রেজিস্ট্রার হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী লামায় অগ্নিসংযোগ: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে উপদেষ্টা-প্রশাসন নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি তিন উপদেষ্টাকে বিপ্লবী হতে বললেন সারজিস আলম জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা কোরিয়া থেকে ৬৯৩ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার সাভারে বন্ধ টিএমআর কারখানা চালুর নির্দেশনা উপদেষ্টার দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ায় কোহলিকে আইসিসির শাস্তি শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি ফখরুলের ১১ বছর পর দেশে ফিরছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক যারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত প্রাণ এএমসিএলের ৩২ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বাদ যাচ্ছে ১১১৮৬ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বিমানের সিটের নিচে মিলল ২০ সোনার বার, যাত্রী আটক ‘পিলখানা হত্যায় নিরপেক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করা হবে’ চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস

সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক ফসল তিলের ভবিষ্যত

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ১২৮৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,রিপোর্ট: দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর প্রায় ১.০৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়। আর উৎপাদনে প্রায় ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশে তিলের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ০.৯৬ টন। খরা সহিষ্ণু হওয়ার কারণে সেচ বিহীন এলাকায় সহজে তিলের আবাদ করা যায়। বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন তিল বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। রপ্তানী যোগ্যতার কারনে বর্তমান বাজারে কৃষকরা তিলের মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশী পাচ্ছেন। সম্ভাবনাময় তেল ফসল তিলকে একটি বানিজ্যক ফসল এবং রপ্তানী সফল পণ্যে পরিনত করা সম্ভব অতিসহজেই।

এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন উৎপাদন বিপনন ও রপ্তানী পর্যায়ে।তিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় তেল ফসল। তাছাড়া তিল খরিপ মৌসুমের প্রধান তেল ফসল। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই তিলের চাষ হয়ে থাকে, তবে প্রধান অঞ্চলগুলি হচ্ছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, রাঙ্গামাটি, দিনাজপুর, পাবনা, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও মাগুড়া। বাংলাদেশে উৎপাদিত তিল পুষ্টি ও খাদ্যগুণে অনন্য হওয়ায় বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তিলের উপকারীতা: তিলের তেল একটি উৎকৃষ্টমানের ভোজ্যতেল। তিলের তেলে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিডের পরিমান সুষম বিধায় এটা অত্যন্ত উন্নতমানের ভোজ্যতেল। তিলের বীজে তেমন ক্ষতিকারক কোন পদার্থ না থাকায় আস্ত বা খোসা ছাড়ানো বীজ দিয়ে নানা রকম খাদ্য সামগ্রী প্র¯ু‘ত করা যায়। অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড অলেয়িক এবং লিনোলিক এসিডের পরিমান একত্রে প্রায় ৮০% সিসামোল নামক প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকায় এ তেল দীর্ঘদিন ভাল থাকে। তিল তেল ঔষধ ও কসমেটিক শিল্পেও ব্যবহার হয়। সিসামিন ও সিসামোলিন নামক দুটি রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতির জন্য তিলের বীজ সহজে পোকায় আক্রমন করে না। তিলের বীজের শতকরা ৪২-৪৫ ভাগ তেল ও ২৫ ভাগ আমিশ থাকে, ঘানির সাহায্যে শতকরা ৩৫-৩৬ ভাগ এবং এক্সপেলারের মাধ্যমে শতকরা ৩৮-৪০ ভাগ তেল নিস্কাশন করা যায়।

তিলের ব্যবহার বাংলাদেশ ও উন্নত দেশ: তিল ফসল আমাদের দেশে মুলত তেলের জন্যই চাষ করা হয়। রান্না ও মাথায় দেয়া এ দু’ভাবেই তিলের তেল ব্যবহার করা হয়। সুগন্ধিযুক্ত ফুলের পাপড়ি তিলের তেলে ডুবিয়ে সুগন্ধি তেল তৈরি করা যায়। সাবান প্রস্তুতেও এ তেল ব্যবহার হয়ে থাকে। পিঠা, বিস্কুট, মোয়া এবং খাজা তৈরীতে এদেশে তিলের ব্যবহার খুবই প্রচলিত। দুধাল গাভীর জন্য তিলের খৈল পুষ্টিকর খাদ্য বলে তা গাভীকে খাওয়ানো হয়। এতে গাভী দুধ বেশী দেয়। উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের উৎপাদিত সাদা, কাল, লাল ও হলুদ এ চার ধরনের তিলই বিদেশের বাজার গুলোতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে তিল থেকে যে ভোজ্যতেল তৈরী হয় তা সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিকর কোলস্টেরল মুক্ত। এ ছাড়া সাদা তিল বিদেশে উন্নতমানের ফাস্টফুডে একটি প্রয়োজনীয় উপকরন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। অপর দিকে তিলের বর্জ্য দিয়ে তারা তৈরী করছে পোল্ট্রি খাদ্য।

তিলের উৎপাদন বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপঃ বাংলাদেশ তিলের ব্যবহার ও বিদেশে তিলের চাহিদার কথা চিন্তাকরে বাংলাদেশ সরকার একটি প্রকল্প চালু করেছে। আই.এ.পি.পি. = ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট নামে কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলা- রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের প্রায় ২৮টি উপজেলা এবং দক্ষিনাঞ্চলের চারটি জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনার মোট ২৬টি উপজেলায় এর কার্যক্রম শুরু করেছে । মোট ৮টি জেলার ৫৪টি উপজেলায় এই কার্যক্রম চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় উক্ত উপজেলা সমূহে কৃষকদেরকে তিল চাষের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের প্রশিক্ষণ দেয়া ও বিনামূল্যে তিল বীজ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে তিল চাষ আগের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং উৎপাদন ও বাড়ছে। কিন্তু সঠিক সরকারী পৃষ্ট পোষকতার অভাবে উৎপাদিত তিলের সঠিক কবাজারজাত করতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। তাই আশার আলোর মাঝেও কৃষকরা হতাশ হয়েপড়ছে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিৎ সঠিক পদক্ষেপ নেয়া।

তিলের উৎপাদন ও রপ্তানীঃ বেসরকারী প্রতিষ্টানের পদক্ষেপ: বর্তমানে অনেক ছোট বড় বেসরকারী প্রতিষ্টান তিলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যেমন- গ্লোবাল এগ্রো মেগা গ্রুপ, আরওয়া এগ্রো, নাজ কর্পোরেশন, এন.আর মেরিন, হারবিঙ্গার ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। তিল ছাড়া তিলের খৈলও বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে প্রতি মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় শত টাকার তিল রপ্তানী করছে- চীন, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ফলে অর্থকরী ফসল হিসেবে তিল চাষ এখন কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর তিলের রপ্তানী বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ কারনে রপ্তানীকারকরাও চাষিদের উদ্ভুদ্ধ করছেন তিলচাষের জন্য।

এ প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কাছ থেকে তিল সংগ্রহ করে মাগুরা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পঞ্চগর, পাবনা, নাটোর, কুমিল্লা ও বরিশালে প্রতিষ্ঠিত তিল শোধন কারখানার মাধ্যমে শোধন করে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন তিল বিদেশে রপ্তানী করছে। রপ্তানী যোগ্যতার কারনে বর্তমান বাজারে কৃষকরা তিলের মূল্য আগের চেয়ে বেশী পাচ্ছেন। অতীতে প্রতিমন তিল যেখানে বিক্রি হতো ১ হাজার ১০০ টাকায় বর্তমান তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। এমনকি কখনও এ তিলের দাম ২ হাজার টাকা মন দরেও বিক্রি হয়।

তিলের বাজারঃ বর্তমান অবস্থাঃ বিগত কয়েক বছরে তিলের স্থানীয় ও রপ্তানী বাজার ভাল গেলেও ২০১৫ সালটি ছিল অপেক্ষাকৃত বেশ খারাপ। তিলের গুনগত মান হ্রাস পাওয়া, অসাধু ব্যবসায়ীদের অব্যবসায়ীসুলভ আচরণ, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য পতন ইত্যাদি কারনে এ বছরটি তিলের উৎপাদককারী, ব্যবসায়ী গুদামজাত ও প্রক্রিয়াজাত করনকারী সকলের জন্য ছিল অপেক্ষাকৃত ব্যবসা নিষ্ফল বছর। বিভিন্ন মহল থেকে এ অভিযোগ এসেছে যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কালো রং ব্যবহার করে তিল রপ্তানী করছেন এবং আমদানী কারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিষয়টি ধরাপড়ার পর কয়েকটি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানকে তারা কালো তালিকাভুক্ত করে এতে একদিকে বিদেশে আমাদের বাজার নষ্ট হয়েছে অন্যদিকে দেশের সুনাম কালিমা লিপ্ত হয়েছে।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ (জুলাই- নভেম্বর) সময়ের তুলনামূলক চিত্র দেখলেই বিষয়টির সত্যতা সুস্পষ্ট হবে।আগাম বর্ষা জনিত কারনে এবছর তিলের উৎপাদন ব্যহত হয় ব্যপকভাবে, এছাড়া উৎপাদিত তিলের মানও বৃষ্টির জন্য কাঙ্খিত পর্যায়ে হয়নি। ফলে প্রথম দিকে বাজার চড়া থাকলে ও উপযুক্ত ক্রেতা যথোপযুক্ত মান রক্ষা করতে না পারা ইত্যাদি কারনে তিলের বাজারে দর পতন ঘটতে থাকে। এতে করে ব্যবসায়ীদের গুদামে রক্ষিত প্রচুর পরিমান তিল অবিক্রিত থেকে যায়। মূল্য হ্রাস করেও পরবর্তিতে তারা অনেকে এ তিল বিক্রয় করতে ব্যর্থ হন। পঞ্চগড়, নাটোর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী প্রভৃত্তি এলাকা ঘুরে দেখা যায় মৌসুমের শেষ দিকেও গুদামে রয়ে গেছে অনেক অবিক্রিত তিল।

করণীয় পদক্ষেপ: সম্ভাবনাময় তেল ফসল তিলকে একটি বানিজ্যক ফসল এবং রপ্তানী সফল পণ্যে পরিনত করা সম্ভব অতিসহজেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন উৎপাদন বিপনন ও রপ্তানী পর্যায়ে।

উৎপাদন পর্যায়ে: আই, এ পিপির অধীনস্থ জেলাগুলোতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষক পর্যায়ে বীজ সরবরাহ এবং প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্যান্য জেলা বিশেষ করে চরাঞ্চলে যেখানে কৃষকরা অযতেœ বপন করে তিল, একটি ফেলনা ফসল হিসাবে যারা আবাদ করে তিল, সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজন ভাল মানের বীজ এবং যথাযথ উৎপাদন ও ফসল সংগ্রহের উন্নত কলা কৌশল, এতে করে একদিকে যেমন বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন অন্যদিকে বাড়বে ফসলের মান। তাই উৎপাদন পর্যায়ে সরকারী, বেসরকারী এবং এনজিও গুলোর উদ্যোগে তিল উৎপাদনকারী কৃষকদের মানসম্মত তিল উৎপাদনের কলা কৌশল এবং উৎপাদন পরবর্তী ফসল সংগ্রহের নিয়মাচার শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বিপণন পর্যায়: তেল ফসল হিসাবে তিলের একটি অবস্থান থাকলেও সয়াবিন ও সরিষার তুলনায় তা নগন্য পর্যায়ে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি বিষয় হল সম্পূর্ণ আমদানী নির্ভর একটি তেল “সয়াবিন” আজ বিগত দুই দশকের বেশী সময় ধরে আমাদের দেশীয় তিল ও সরিষার তেলের উপর আধিপত্য করে যাচ্ছে। বিদেশী অর্থ ও সহায়তা পুষ্ঠ সয়বিন আজ আমাদের নিজস্ব তেল ফসল তিল ও সরিষার স্থান দখল করে নিয়েছে। অন্যদিকে ব্ংলাদেশে উৎপাদিত হাজার হাজার টন তিল আমরা কাঁচামাল হিসাবে বিদেশে রপ্তানী করে দিচ্ছি।

তিলের খাদ্যমান অনেক বেশী হওয়ায় অনেক দেশেই বিভিন্ন রকম উপাদেয় খাবার হিসাবে তিলের ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি। যথাযথ ব্র্যান্ডিং এর অভাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ ফসলটিকেও আমরা আমাদের নিত্যদিনের অসংখ্য খাবারের নিত্যান্ত প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করতে পারছি না। যদিও ইতোমধ্যে কিছু কিছু বেকারী ও বিস্কুট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তিলের ব্যবহার আরম্ভ করেছে কিন্তুু এর ব্যপক ব্যবহার সম্ভব হবে সফল বিপণন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। বিক্রয় ও বিপণনের মাধ্যমে যত বেশী তিলের তেল ও তিলের বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবারের প্রচলন হবে তত বেশী তিলের উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এবং তখনই তারা এর উৎপাদন ও উৎপাদন পরবতী ব্যবস্থাপনায় গুনগত মান রক্ষায় সচেষ্ট হবেন। এক্ষেত্রেও সরকারী, বেসরকারী ও এনজিও গুলোর সমন্বিত প্রচেষ্ঠার ফলে বিপণন কার্যক্রম জোরদার করা সম্ভব।

রপ্তানী পর্যায়ে: বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপদিত তিল ফসলের একটি বড় অংশই রপ্তানী হচ্ছে। চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, মালয়শিয়া সহ ইউরোপের কয়েকটি দেশেও রপ্তানী হচ্ছে। কিন্তু বিগত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে রপ্তানী বাজারে বিভিন্ন কারণে একটি ধ্বস নেমে এসেছে। এর মূল কারণ হল নি¤œমানের তিল উৎপাদন এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর অসাধুতা যা বক্ষমান প্রবন্ধে ইতোপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।

যেহেতু তিল একটি রপ্তানী পণ্য হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নিতে পেরেছে, তাই এখন গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমান দূরবস্থা দূরিকরণ ও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা একান্ত ভাবেই কাম্য। রপ্তানীকারক প্রতিষ্টানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সমঝোতা, সহযোগিতা সৃষ্টি করা অবশ্য করনীয়। এজন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন, সরকার বর্তমানে বেশ কিছু পণ্যের রপ্তানীর উপর নগদ সহায়তা দিয়ে আসছে, এতে করে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে রপ্তানী বৃদ্ধি পেয়েছে তবে এর ব্যতিক্রম ও রয়েছে।

যে কারণে সরকার রপ্তানীজাত পণ্যের উপর নগদ সহায়তার বিষয়টি নতুন ভাবে ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম হাতে নিতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক তিলের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমরা দেশে তিলের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করতে পারি। কিন্তু বাজার মূল্য কম হওয়ায় এবং তিলের গুনগত মান আন্তর্জাতিক বাজরের সমকক্ষ না হওয়ায় আমাদের চাষীরা যথোপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে সরকার যদি তিল রপ্তানীকে নগদ সহায়তা কর্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসে, তাহলে:

১। সাধারন তিল উৎপাদনকারী চাষীরা সরাসরি উপকৃত হবে তাদের নিশ্চিত মূল্য পাওয়ার মধ্য দিয়ে।
২। কৃষকরা যথাযথ মূল্য পেলে গুনগত মান বৃদ্ধিতে সচেষ্ঠ হবে।
৩। দেশের চরাঞ্চলের বিপুল অনাবাদী অথচ উর্বর জমি চাষের আওতায় আসবে।
৪। কৃষক ও অন্যান্য কর্মজীবি মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
৫। কৃষিখাতে দেশের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
৬। সর্বোপরি দেশের বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা অর্জিত হবে।

অপার, সম্ভাবনাময় ফসল তিলকে একটি বানিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফসলে রূপান্তর করা এখন কেবল সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট সকল মহলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও পারম্পারিক সহযোগিতাই পারে এ দাবিকে বাস্তবে রূপ দিতে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com